মানুষের ঢল উপচে পড়ছে। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা হাতের ব্যারিকেড করে দাঁড়িয়ে তাঁবুর বাইরে। অবশ্যই লাল কার্পেট বিছানো ছিল না। কিন্তু ক্লাবের দু’পাশে যে ভাবে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সমর্থকরা, দেখে মনে হচ্ছিল শেষ বারের মতো টোলগে ওজবেকে অভিবাদন জানাতে চায় ইস্টবেঙ্গল জনতা।
ময়দানের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যই দেখল ফুটবলপ্রেমীরা। মোহনবাগান তাঁবু থেকে টোলগে আসলেন ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে। ঘণ্টাখানেক পর হাসি মুখে বেরিয়ে এলেন টোকেন পকেটে নিয়ে। মহাবিতর্কিত টোলগে-নাটক এ বার সত্যিই শেষ!
তার আগে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে লাল-হলুদ কর্তাদের পাশে বসে টোলগের মন্তব্য, “তিন-চার মাস ধরে টানাপোড়েন চলার পর সবাই নিশ্চয়ই জানতে চাইছেন, কী মীমাংসা হল। শুধু এটুকুই বলব, ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলে খুব অল্প সময়েই ব্যাপারটা মিটে গেল। আমার যা বলার ছিল বলেছি। টোকেনও ফেরত পেয়েছি। ভাল লাগছে, ব্যাপারটা শেষ হল হাত মেলানোর মধ্য দিয়ে।” |
ছেড়ে আসা ক্লাব থেকে টোকেন আদায় করতে অবশ্য প্রচুর কাঠ-খড় পোড়াতে হল টোলগেকে। ইস্টবেঙ্গলকে আক্রমণ করে যে সব মন্তব্য প্রকাশ্যে করেছিলেন তিনি, তার জন্য লিখিত ভাবে ক্ষমা চাইলেন লাল-হলুদ কর্তাদের কাছে। এমনকী মুচলেকা দিয়েছেন, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে আর কোনও কটুক্তি করবেন না। ক্লাব সচিব কল্যাণ মজুমদার বললেন, “টোলগের সঙ্গে কথা বলে আমরা সন্তুষ্ট। তাই টোকেন ফেরত দেওয়া হল।” ইস্টবেঙ্গল কর্তারা এ দিন মূলত দুটো প্রশ্নের উত্তর টোলগের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। এক, গত দু’বছরে তাঁর সঙ্গে ক্লাবের কোনও মতবিরোধ হয়েছে কি না। যদি না হয়ে থাকে, তা হলে কেন তিনি প্রকাশ্যে ক্লাবের নামে কুৎসা ছড়ালেন? দুই, যে কোনও ফুটবলারের তার পছন্দের ক্লাবে খেলার অধিকার আছে। কিন্তু টোলগে কেন মরসুম শেষ হওয়ার আগেই দলবদল করলেন? জবাবে ‘পরিস্থিতির দোহাই’ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেননি তিনি। সঙ্গে ক্ষমাপ্রার্থনার চিঠি এবং জরিমানার ১০ লাখ ২৮ হাজার ৯৮২ টাকা, ৭০ পয়সার ডিমান্ড ড্রাফ্ট। যা পুরোটাই ইস্টবেঙ্গল কর্তারা দান করে দিলেন নার্সারি ফুটবলের উন্নয়নের জন্য আইএফএ-র তহবিলে।
টোলগের মুক্তির পিছনে বড় ভূমিকা নেন ইস্টবেঙ্গল কোচ মর্গ্যান। শনিবার ক্লাবকে মেল করে মর্গ্যান জানান, কোনও বিশৃঙ্খল ফুটবলারকে’ তিনি দলে রাখতে চান না। সোমবারও কোচকে নিজের অবস্থানে অনড় দেখে টোলগেকে ছাড়ার ব্যাপারে নরম মনোভাব নেন কর্তারা। মর্গ্যান অনড় না হলে টোলগের মুক্তির রাস্তা আরও জটিল হতেই পারত। তার বদলে ইলিশের ছবি দেওয়া একটি স্মারক টোলগের হাতে তুলে দিলেন ইস্টবেঙ্গল সচিব। অন্যতম কর্তা দেবব্রত সরকারের হাত ধরে ঘুরে দেখলেন লাল-হলুদ ড্রেসিংরুম। যে লকারে তাঁর জার্সি-বুট রাখা থাকত, সেই লকার ছুঁয়ে দেখলেন। দেবব্রতবাবুই টোলগেকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। টোলগেকে সরকারি ভাবে পাওয়ার পরেও কিন্তু মোহনবাগান কর্তারা নিশ্চুপ। তবে মঙ্গলবারই টোলগেকে আইএফএ-তে নিয়ে গিয়ে সই করানো হচ্ছে। সঙ্গে নবি, নির্মল ছেত্রী, জুয়েল রাজাকেও।
ব্যারেটোর দশ নম্বর জার্সি পরে সবুজ-মেরুনে খেলবেন যিনি, সেই টোলগে শৃঙ্খলমুক্ত হলেন ব্যারেটোর জন্মদিনেই!
|