বিদেশে ০-৮ বিপর্যয়ের পর নিউজিল্যান্ডের মতো দুধভাত দলের বিরুদ্ধেও টেস্ট সিরিজ জয় ভারতকে মানসিক ভাবে চাঙ্গা করবে। আমার কাছে অবশ্য বেশি গুরুত্বের, ঘরের মাঠেও আমরা নিজেদের পছন্দের উইকেট বানিয়ে কিন্তু সিরিজটা জিতিনি। ঘূর্ণি উইকেট নয়। বরং টেস্টের মোটামুটি আদর্শ উইকেট ছিল উপ্পল আর চিন্নাস্বামী, দুই জায়গাতেই। পেসার সাহায্য পেয়েছে। ব্যাটসম্যান স্ট্রোক খেলতে পেরেছে। তৃতীয় দিন থেকে স্পিনার টার্ন পেয়েছে। সে দিক দিয়ে ধোনির টিমের ঘরের পিচেও পরপর দুটো জয় কৃতিত্বের।
এটাও তাৎপর্যের যে, জয়টার আসল কারিগর নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটাররা। পূজারা সেঞ্চুরি করেছে। কোহলি করেছে। কোহলির সোমবারের ইনিংসটা আমার কাছে প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরির থেকেও দামি। নতুন স্পিন-জুটি অনবদ্য। অশ্বিন-ওঝা জুটি ৫ টেস্টে ৭৩টা উইকেট পেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৩ টেস্টে অশ্বিন ২২টা, ওঝা ২০টা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ২ টেস্টে অশ্বিন ১৮, ওঝা ১৩ উইকেট। এটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে, এই টিমে হরভজনের ফেরার আর জায়গা নেই। যারা ওকে ফেরানোর কথা বলছে, তারা ইতিহাসে রয়েছে। বর্তমানে নয়। বিদেশে আমাদের স্পিনারদের সাফল্যের কথা বলবেন? আমাদের চার গ্রেট স্পিনারেরই বা বিদেশের মাঠে দু’-একটার বেশি ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স কোথায়? |
পারফরম্যান্সের প্রশ্নে অধিনায়ক ধোনির এই সিরিজে রেকর্ডের কথা এসে পড়ছে। দেশের মাঠে আজহারের ১৩ টেস্ট জেতার নজির টপকে ধোনি চিন্নাস্বামীতে ১৪টা টেস্ট জিতল। নিঃসন্দেহে ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক ও-ই। তা ছাড়া ওর নেতৃত্বে ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে, ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। টেস্টে একটা সময় বিশ্বের এক নম্বর ছিল। বিদেশের মাঠে ০-৮ হারার কথা তুলবেন? নিশ্চয়ই একটা কালো দাগ। কিন্তু আমাদের কোন অধিনায়কের বিদেশের মাঠে দারুণ রেকর্ড আছে?
সবশেষে সচিন তেন্ডুলকর প্রসঙ্গ। পরপর তিন বার বোল্ড একটাই টেস্ট সিরিজে! সোমবার তো মনে হল, হতাশায় সচিন উইকেটটাই ওর ব্যাট দিয়ে মেরে উড়িয়ে দেবে। মাঠে ওকে এই ভঙ্গিতে কখনও দেখিনি। মনে হচ্ছে সমালোচনা করে সানি ভাই ওকে আরও চাপে ফেলে দিয়েছে। তবে এখনও সচিনের বিকল্প নেই। ও হচ্ছে ব্যাটিংয়ের রোলস রয়েস। ওর জায়গায় যে আসবে, সে হয়তো নতুন গাড়ি হবে, কিন্তু রোলস রয়েস হবে না। ৩৯ বছরের সচিনকে মনে হয় একটু সময় দেওয়া দরকার ওর নিজের ফর্মে ফেরার জন্য। আসলে এই বয়সে একজন ব্যাটসম্যান যত বেশি ম্যাচ খেলবে, তত ছন্দে থাকবে। আমার মতে, সচিনের এই বেছে বেছে আম্তর্জাতিক সিরিজ খেলাটা ঠিক সিদ্ধান্ত নয়। টানা খেলতে হবে। বিশেষ করে ও যেহেতু এখনও তিন ধরনের ক্রিকেটেই দলের কাছে বোঝা নয়। রানিং বিটুইন দ্য উইকেটস এখনও দারুণ। ফিল্ডিংয়ে যথেষ্ট নিরাপদ। লক্ষ্মণ বা দ্রাবিড়ের যেটা সমস্যা ছিল। সচিন একটা বড় ইনিংস খেললেই আবার স্বমূর্তি ধরবে।
|