সিরিজ জয়ের সঙ্গে কাঁটাও থাকছে ধোনির জন্য
টেস্ট জয়ের নিস্তরঙ্গ উপকুলে যে শেষ বেলায় এমন ছোটখাটো সুনামি আছড়ে পড়বে, অতি বড় ক্রিকেটবোদ্ধাও বোধহয় ভাবতে পারেননি। কে-ই বা বুঝেছিল, একপেশে সিরিজে শিরশিরে উত্তেজনা ফিরিয়ে আনবে ভারতীয় ব্যাটিং?
দুপুর তিনটে নাগাদ চিন্নাস্বামী প্রেসবক্সের লাগোয়া সিঁড়ি দিয়ে চিন্তিত মুখে নামছিলেন রবি শাস্ত্রী। ধারাভাষ্য থেকে ছোট্ট ব্রেক। চিন্তিত কেন? না, স্কোরবোর্ডে ততক্ষণে ধোনিদের জন্য অশনিসঙ্কেত। চারটে গিয়েছে, হাতে আর ছ’টা, চাই আরও একশোর কাছাকাছি রান। টার্গেট ২৬১। শাস্ত্রী চায়ের কাপে চিনি মেশানোর সময় পেলেন না, টিভিতে কিউয়িদের চিলচিৎকারে ঘুরে তাকাতে হল! কী ব্যাপার? না, রায়না আউট! বাঁ-হাতির স্টাম্প মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, ভারত ১৬৬-৫! যা দেখে প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের চোখ রীতিমত বিস্ফারিত। মুখ থেকে শুধু অস্ফুটে বেরোল, “সর্বনাশ। এ বার কে বাঁচাবে?” তার পর নিজেকে একটু সামলে সংযোজন, “তবু বিরাট, ধোনি আছে। এখনও জেতা উচিত।”
২-০ জিতে উঠে। ছবি :পিটিআই
ওই বিরাট (৫১ ন:আ:) আর ধোনিই শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়ে দিলেন। বেঙ্গালুরু টেস্টও চার দিনে শেষ। ২-০ সিরিজ জিতে আজহারউদ্দিনকে টপকে দেশের মাঠে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি টেস্ট জিতে ফেললেন ধোনি (১৪)। ক্যাপ্টেন কুলের স্টাম্প তুলে ঝাঁকানো, মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশে ছুড়ে বিরাটের গর্জন, ভারতের পাঁচ উইকেটে জয় সব দেখে ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’ মনে হতেই পারে। কিন্তু সেটা কাঠামো মাত্র।
স্কোরবোর্ড যা-ই বলুক, অন্তর্নিহিত সত্য হচ্ছে, সোমবার ম্যাচটা কিন্তু ভারত হেরে যেতেও পারত! কোহলি বা ধোনির মধ্যে যে কোনও একজন ফিরে গেলে, ভারতের হয়ে বুক ঠুকে বাজি ধরতেন ক’জন? একশোর কাছে রান তখনও বাকি। অখ্যাত জিতেন পটেলকে (৩-৬৮) মনে হচ্ছে মুরলীধরন। টিম সাউদি চতুর্থ দিনেও বল ইচ্ছেমতো সুইং করাচ্ছেন। কোহলিদের উৎসব স্রেফ শ্বাসরুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উল্লাস। নইলে ভারত অধিনায়ক আর বলবেন কেন, “একটা সময় মনে হচ্ছিল বেঙ্গালুরু নয়, নেপিয়ারে খেলছি।”
ঠিক। নাগপুর বাদে দেশের আর পাঁচটা উইকেটের সঙ্গে মিল নেই চিন্নাস্বামীর। চতুর্থ দিনেও পিচে ধুলো ওড়ে না। উল্টে পেসাররা সাহায্য পায়। কী ভাবে? পিচ কিউরেটর নারায়ণ রাজু বলছিলেন, “দেখুন, ধোনি আমাকে পিচ নিয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি। পিচ তৈরি অনেকটা রান্না করার মতো। সে দিক থেকে আমি ভাল রাধুঁনি বলতে পারেন।” কিন্তু তাঁর ‘রান্না’র চোটে এ দিন তো প্রায় ‘ফুড পয়জনিং’ হয়ে যাচ্ছিল ভারতীয় ব্যাটিংয়ের!
বীরেন্দ্র সহবাগ (৩৮) যতক্ষণ ছিলেন, ততক্ষণ কিছু টের পাওয়া যায়নি। রান রেট ছয়ের উপর, বীরুকে তখন দেখে মনে হচ্ছে সেই পরিচিত ধ্বংসের দেবতা। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, তিনি আবার নিজেকে ধ্বংস করতেও জানেন! করলেনও। গৌতম গম্ভীর (৩৪) বোধহয় দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি, চতুর্থ দিনে বোল্টের বল এতটা সুইং করবে। নইলে স্লিপের দিকে মুখ করে সম্মোহিতের মতো ব্যাট বাড়ানোর যুক্তি নেই। বরং ‘লিটল মাস্টার’ ভালই এগোচ্ছিলেন। পটেলকে প্যাডল সুইপ, সাউদিকে স্ট্রেট ড্রাইভে বিলবোর্ডে ফেলে অনেকটাই যখন তিনি ‘পুরনো’ সচিন, সাউদি ফের তাঁকে আছড়ে ফেললেন বাস্তবের রুক্ষ জমিতে।
দেশের মাঠে সফল রান তাড়া
৩৮৭-৪ বনাম ইংল্যান্ড (চেন্নাই ’০৮)
২৭৬-৫ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ (দিল্লি ’৮৭)
২৭৬-৫ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ (দিল্লি ’১১)
২৬২-৫ বনাম নিউজিল্যান্ড (বেঙ্গালুরু ’১২)
সেই একই ভঙ্গিতে ভিতরে ঢুকে আসা বল। একই ভাবে ‘অ্যাক্রস দ্য লাইন’ খেলতে গিয়ে ক্রিকেট-ঈশ্বরের মিডল স্টাম্প আক্রান্ত। চলতি সিরিজে এ নিয়ে তিন বার! আর তিনি আউট হওয়া মাত্র অদ্ভুত সব দৃশ্য। সঞ্জয় মঞ্জরেকর পড়ি কি মরি করে ছুটছেন কমেন্ট্রি বক্সে। সৌরভ মাথা নাড়তে নাড়তে আনন্দবাজারকে বলছেন, “অ্যাক্রস দ্য লাইন খেলছে বলে গণ্ডগোলটা হচ্ছে। সোজা খেললে অসুবিধা হয় না।” আর সচিন? স্টাম্পের উপর ব্যাটটা আছড়ে ফেলতে গিয়েও কোনও রকমে সামলালেন নিজেকে। ব্যাটিং লাইন আপে ‘বনস্পতি’-র ছায়া সরতেই পরের ১৪ রানে তিন উইকেট। পূজারা (৪৮) স্নায়ুযুদ্ধে হারলেন। রায়নার (০) অহেতুক স্টেপ আউট বুঝিয়ে দিল তিনি আজও টেস্ট ক্রিকেটের যোগ্য নন। ১৫৩-২ থেকে মুহূর্তে দাঁড়াল ১৬৬-৫! ভারত বিপন্ন।
ইংল্যান্ড সিরিজের আগে ফ্লেচার ব্যালান্স শিট তৈরি করতে বসলে ‘লায়াবিলিটি’-র চার্টে এই কাঁটাগুলো নিশ্চয়ই থাকবে। আর ‘অ্যাসেট-এর খাতায়? দু’টো তো নাম। একজন সিরিজ সেরা। রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অন্য জন ম্যাচের সেরা। বিরাট কোহলি কিন্তু বুঝিয়ে চলেছেন, ‘গুড’ থেকে ‘গ্রেট’ হতে যা যা মশলা লাগে, সব তাঁর আছে। শুধু তাই নয়, এ বার থেকে ভারতীয় ক্রিকেটে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’-এর মুকুটটা তাঁরই প্রাপ্য!

বেঙ্গালুরু টেস্টের স্কোর

নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস (৩৬৫)
ভারত প্রথম ইনিংস (৩৫৩)

নিউজিল্যান্ড
দ্বিতীয় ইনিংস (আগের দিন ২৩২-৯)
পটেল ক ধোনি বো জাহির ২২,
বোল্ট নঃআঃ ৪,
অতিরিক্ত ১৭,
মোট ২৪৮।
পতন: ৩০, ৩১, ৬৯, ১১১, ১৪০, ১৯৫, ২১৬, ২২২, ২২২।
বোলিং: জাহির ১৪.২-২-৪৬-১, উমেশ ১৫-০-৬৮-২, ওঝা ২১-৬-৪৯-২,
অশ্বিন ২২-১-৬৯-৫, রায়না ১-১-০-০।

ভারত
দ্বিতীয় ইনিংস
গম্ভীর ক টেলর বো বোল্ট ৩৪,
সহবাগ বো পটেল ৩৮,
পূজারা ক ফ্লিন বো পটেল ৪৮,
সচিন বো সাউদি ২৭,
কোহলি নঃআঃ ৫১,
রায়না বো পটেল ০,
ধোনি নঃআঃ ৪৮,
অতিরিক্ত ১৬,
মোট ২৬২-৫।
পতন: ৭৭, ৮৩, ১৫২, ১৫৮, ১৬৬।
বোলিং: বোল্ট ১৬-৪-৬৪-১, সাউদি ১৮-৩-৬৮-১,
ব্রেসওয়েল ১৪-৩-৫২-০, পটেল ১৫.২-৩-৬৮-৩।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.