|
|
|
|
জমি অমিল, হাওড়ায় সমস্যা ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’ প্রকল্পে |
নুরুল আবসার • উলুবেড়িয়া |
খাস জমির অভাব। দাম বেশি হওয়ায় বেসরকারি মালিকদের কাছ থেকে জমি কিনতেও হিমশিম খাচ্ছে জেলা প্রশাসন। ফলে, হাওড়া জেলায় হোঁচট খাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা করা ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’ প্রকল্প। গত বছর প্রকল্পটি চালু করার সময়ে জেলায় প্রায় ২৪০০ ভূমিহীন পরিবারকে চিহ্নিত করা হলেও এ পর্যন্ত জমি দেওয়া গিয়েছে মাত্র ৭৩টি পরিবারকে।
রাজ্য সরকারের ওই প্রকল্পের আওতায় আসবেন সম্পূর্ণ ভূমিহীন ও বাস্তু জমিহীন খেতমজুর, গ্রামীণ কারিগর এবং মৎসজীবী পরিবার। যাঁদের নামে অথবা উত্তরাধিকার সূত্রে কোনও জমি নেই। সাধারণ ভাবে তাঁদের পরিবারপ্রতি ৫ শতক বা ৩ কাঠা করে জমির পাট্টা দেওয়ার কথা। পরিবারটি বসবাসের জন্য বাড়ি তৈরি-সহ অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য সেই জমির যথাযথ ব্যবহার করতে পারবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পটি রূপায়ণের জন্য ঠিক হয় খাস জমির ব্যবস্থা করা হবে। যদি তা না মেলে, তা হলে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি কিনে তা বিতরণ করা হবে। জমি কেনা এবং ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণের কাজটি তত্ত্বাবধান করবে ব্লক পর্যায়ে গঠিত ‘ল্যান্ড পারচেজ অ্যান্ড ল্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন’ (এলপিএলডি) কমিটি। এই কমিটির মাথায় থাকবেন সংশ্লিষ্ট মহকুমাশাসক। কমিটির আহ্বায়ক ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক। হাওড়ার ১৪টি ব্লকেই ‘এলপিএলডি’ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির বৈঠকও নিয়মিত হচ্ছে। কিন্তু আসল কাজ অর্থাৎ জমি সংগ্রহ এবং বিতরণের ক্ষেত্রেই অগ্রগতি আশানুরূপ হয়নি।
এখনও পর্যন্ত ৭৩টি পরিবারের মধ্যে শ্যামপুর-১ ব্লকে জমি পেয়েছে ৩৮টি পরিবার। উদয়নারায়ণপুর, পাঁচলা এবং ডোমজুড় এই তিনটি ব্লকে জমি পেয়েছে যথাক্রমে ১৪, ১১ এবং ১০টি পরিবার। সব মিলিয়ে বিতরণ করা হয়েছে ২.৯৮ একর জমি। এর মধ্যে উদয়নারায়ণপুর এবং শ্যামপুর-১ ব্লকে বিতরণ করা হয়েছে খাস জমি। পাঁচলা ও ডোমজুড়ে জমি কেনা হয়েছে। বাকি ১০টি ব্লকে এখনও পর্যন্ত ভূমিহীন পরিবারগুলির হাতে জমি তুলে দেওয়া যায়নি।
জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়?
জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রের খবর, জেলায় খাস জমির পরিমাণ খুব কম। কোনও কোনও ব্লকে তা নেই বললেই চলে। যেমন, আমতা ১ ব্লকে বসবাসযোগ্য কোনও খাস জমিই নেই। শ্মশান ও ভাগাড় হিসাবে চিহ্নিত কিছু খাস জমি থাকলেও তা ভূমিহীনদের বিতরণ করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া, জমি কেনার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। জেলায় দ্রুত শিল্পায়নের ফলে বাগনান, আমতা, পাঁচলা, ডোমজুড়, সাঁকরাইল, উলুবেড়িয়া প্রভৃতি শহর ঘেঁষা এলাকাগুলিতে কারখানা গড়ার জন্য মালিকেরা জমি কিনছেন তাঁরা শরণাপন্ন হচ্ছেন দালালদের। অভিযোগ, দালালরা জমির আকাশছোঁয়া দর তুলে দিচ্ছেন। সরকার সেই দামের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না।
জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, তাঁরা জমির দাম দেবেন সাব-রেজিস্ট্রারের মূল্যায়নের ভিত্তিতে। মূল্যায়নে শালি জমির দাম কম হয়। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত জমির দাম অনেক বেশি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আধিকারিক বলেন, “দালালেরা শালি জমির জন্যও জমির মালিকদের বাণিজ্যিক জমির দাম দিচ্ছেন। আমাদের পক্ষে তো আর আইন ভেঙে এটা করা সম্ভব নয়। ফলে আমরা পিছিয়ে পড়ছি।”
আমতা ১ ব্লকে দু’টি পৃথক মৌজায় ১ একর ৪০ শতক জমি নির্বাচন করে তার দাম কত হবে তা সাব রেজিস্ট্রারের কাছে জানতে চেয়েছে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। এই দফতরের এক আধিকারিকের আশঙ্কা, সাব-রেজিস্ট্রার যে দাম নির্ধারণ করবেন, তার চেয়ে অন্য ক্রেতার কাছ থেকে বেশি দাম পাওয়ার আশায় জমির মালিক শেষ পর্যন্ত বেঁকে বসবেন। এই অভিজ্ঞতা তাঁর আগেও হয়েছে বলে তিনি জানান। অন্যদিকে জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা এই ব্লকের ‘এলপিএলডি’ কমিটির সদস্য নাদুচরণ বাগ বলেন, “জমি পাওয়া যাচ্ছে না। তা ছাড়া জমি কেনার ক্ষেত্রেও সাবধানে এগোতে হচ্ছে। কারণ একবার সরকারের পক্ষ থেকে জমি কিনে মামলার ফাঁদে পড়েছি। সেই মামলা এখনও চলছে।”
তবে হাল ছাড়তে রাজি নয় জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক শান্তনু বসু বলেন, “শত অসুবিধা সত্ত্বেও অল্প অল্প করে জমি সংগ্রহ করে আমরা তা ভূমিহীনদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি।” |
|
|
|
|
|