|
|
|
|
আঙুল শাসক দলের দিকে |
‘জুলুমের’ মুখে পাট গোটাচ্ছে প্রস্তাবিত ইউনিট |
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • ধনেখালি |
‘বিরোধী’ তৃণমূলের আন্দোলনের জেরে সিঙ্গুর থেকে ন্যানো কারখানা চলে গিয়েছে গুজরাতে।
এ বার ‘শাসক’ তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘জুলুম’-এর অভিযোগ তুলে সেই হুগলিরই ধনেখালিকে ব্রাত্য করে ডেনমার্কের বিয়ার প্রস্তুতকারী সংস্থা তাদের প্রস্তাবিত একটি ইউনিট বিহারে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিল। এ ব্যাপারে কারখানা-কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারকেও অবহিত করেছেন।
কারখানার ইউনিট গুটিয়ে নেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে সরাসরি মন্তব্য করেননি সংস্থার প্লান্ট ম্যানেজার সঞ্জীব তিওয়ারি। তবে সমস্যার কথা অস্বীকারও করেননি। বলেছেন, “কারখানা সম্পর্কে রাজ্য সরকারকে আমরা যা জানিয়েছি, তা গোপনীয়। সংস্থার অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ব্যাপারে বাইরে মন্তব্য করব না।” সরকার কী বলছে?
রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আশ্বাস, “শিল্পের দরজা যাতে বন্ধ না হয়, সে জন্য পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আমাদের দলের কেউ যেন ওই কারখানার কাজে বিঘ্ন না ঘটায়, দলের হুগলি জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তকে তা দেখতে বলেছি।” কারখানার কর্মী-অফিসারদের নিরাপত্তা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়ে সোমবার সংস্থার ‘গ্লোবাল সিকিউরিটি হেড’ ক্লাউজ হোজ হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন। এসপি বলেন, “ওই কারখানার নিরাপত্তা যাঁরা বিঘ্নিত করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”
২০০৯-এ ধনেখালির বেলমুড়িতে ১১ একর জমির উপরে ডেনমার্কের ওই বহুজাতিক সংস্থার কারখানায় বিয়ার উৎপাদন শুরু হয়। প্রাথমিক ভাবে প্রথম ইউনিট থেকে মাসিক সওয়া লক্ষ ক্রেট বিয়ার উৎপাদন হতো। কিছু দিন আগে সমক্ষমতা সম্পন্ন আরও একটা ইউনিট চালু হয়। এখন আড়াই লক্ষ ক্রেট বিয়ার তৈরি হয় ওই কারখানায়। স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে শ’চারেক শ্রমিক কাজ করেন। পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, ওই বিয়ার ভুটান, মণিপুর, ইম্ফল, মেঘালয়-সহ নানা রাজ্যে সরবরাহ করা হয়। কারখানা-কর্তৃপক্ষের দাবি, রাজ্য সরকারকে বাৎসরিক ২২ কোটি টাকা রাজস্ব দেন তাঁরা।
কারখানা-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, দ্বিতীয় ইউনিট তৈরি হওয়ার পর থেকেই গোলমাল শুরু করে তৃণমূলের একাংশ। ‘সিন্ডিকেট’ খাড়া করে তারা কারখানার নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের বরাত দাবি করে, পছন্দসই লোক নিয়োগের জন্য চাপ দেয়, এমনকী মালপত্র আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদেরই গাড়ি নেওয়ার জন্য জোর-জবরদস্তি চালায় বলে সংস্থার অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, রাজি না-হওয়ায় গত মে মাসে কারখানার গাড়ি আটকে দেয় সিন্ডিকেটের লোকজন। দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ তুলে কারখানার গেটে বিক্ষোভও হয়। পরিস্থিতি এমনই যে, বার বার গণ্ডগোলে জেরবার কারখানা-কর্তৃপক্ষকে চালু দু’টি ইউনিটে উৎপাদন বজায় রাখতে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। গত ৩ মাস ধরে ১৪৪ ধারা জারি করে কাজকর্ম চলছে। সংস্থার দাবি, সুরাহা চেয়ে তারা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সমস্ত স্তরে আবেদন করলেও পরিস্থিতি বদলায়নি। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য মূলত স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন কারখানা-কর্তৃপক্ষ।
এবং তাঁরা এই অবস্থায় প্রস্তাবিত তৃতীয় ইউনিট তৈরির ঝুঁকিও নিতে চাননি। সংস্থার এক পদস্থ কর্তার কথায়, “দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পরেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আরও একটা ইউনিট তৈরির তোড়জোড় চলছিল। কিন্তু সিন্ডিকেট আর রাজনৈতিক নেতাদের নানা দাবিতে সেটি চালু করার চিন্তাভাবনা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলতে হল।” সংস্থা-সূত্রের খবর, প্রস্তাবিত ইউনিটটি বিহারের বিহিটায় তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কারখানায় গোলমালে জড়িত অভিযোগে ইতিমধ্যে দলের তরফে সুব্রতবাবুকে ‘শো-কজ’ করা হয়েছে।
যদিও সুব্রতবাবুর দাবি, “ওই কারখানার জল থেকে এলাকায় নানা ভাবে দূষণ ছড়াচ্ছে। গ্রামবাসীদের চর্মরোগ হচ্ছে। এ জন্য গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে আমি একটি জনস্বার্থ-মামলা করি। ইট-বালির কোনও ব্যবসা আমার নেই। সিন্ডিকেটের সঙ্গেও যোগ নেই। যা বলা হচ্ছে, তা একেবারেই মিথ্যে।” তবে শুধু তৃণমূল নয়, ‘সিন্ডিকেট’ কারবারে বামেদের একাংশও জড়িত বলে কারখানা-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। সিপিএম পরিচালিত স্থানীয় বেলমুড়ি পঞ্চায়েতের তরফে কারখানা কর্তৃপক্ষকে দূষণ নিয়ে ‘সতর্ক’ করা হলেও সংস্থার দাবি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র তাঁদের আছে। পুরো ঘটনায় ফরওয়ার্ড ব্লকের এক সাংসদের নিকটাত্মীয়ের নামও জড়িয়েছে। |
|
|
|
|
|