সম্পাদকীয় ২...
নয় এ কেবল খেলা
শৈশব এবং বাল্যকালে খেলাধুলাই দিনের একটি বড় সময় অধিকার করিয়া থাকিবে, এই কথাটি এক-দেড় প্রজন্ম পূর্বেও প্রায় প্রাকৃতিক নিয়মের ন্যায় সত্য ছিল। হায়, স্কুলের ব্যাগের ভারে সেই সত্য চাপা পড়িয়াছে। শহরে ধুলার পরিমাণ বিলক্ষণ বাড়িয়াছে। শিশুদের বিপর্যস্ত ফুসফুস তাহার সাক্ষ্য দিতেছে। কিন্তু খেলা? তাহার অবসর কোথায়? কোনও জিনগত বিবর্তনের ফলে শিশুদের খেলিবার ইচ্ছা লোপ পাইয়াছে বলিয়া বোধ হয় না। পরিস্থিতি তাহাদের খেলার সুযোগ দেয় নাই। আজ যাঁহারা অভিভাবক, তাঁহারা ভারতের কেরিয়ার-দৌড়ের প্রথম প্রজন্ম। পেশাগত ভাবে ‘সফল’ হওয়ার জন্য যাহা প্রয়োজন, যতটুকু প্রয়োজন, সন্তানকে সেই লক্ষ্মণরেখার বাহিরে একটি পা-ও ফেলিতে দিতে তাঁহারা নারাজ। ফলে, যে বালকের মধ্যে তাহার মাতা-পিতা ভবিষ্যতের সচিন তেন্ডুলকরের ছায়া দেখিয়াছেন, তাহার কথা ভিন্ন বাকিদের ক্ষেত্রে খেলা নিছকই সময় নষ্ট। বিনোদনের প্রয়োজন হইলে ঘরের কোণে টেলিভিশন আছে। মা-বাবারা বোধ হয় ভাবিয়া আশ্বস্ত হন যে টেলিভিশন দেখিয়া ছেলে ক্লান্ত হইয়া পড়িবে না, অঙ্ক খাতায় মাথা রাখিয়া ঘুমাইয়া পড়িবে না।
প্রকৃতির বিরুদ্ধে হাঁটিবার ফল মিলিয়াছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুরা এখন এমন সব রোগের শিকার, যাহা পূর্বে অকল্পনীয় ছিল। যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম না করিবার ফলেই এই বিপদ। অর্থাৎ, খেলা শুধু শিশুর মনের আনন্দের বিষয় নহে, শিশুর সুস্বাস্থ্যের পক্ষে তাহা অপরিহার্য। কথাটি অশ্রুতপূর্ব নহে। মা-বাবারা এই কথাটির মর্ম বুঝিবেন এবং সন্তানকে খেলিতে উৎসাহ দিবেন, প্রত্যাশাটিও অযৌক্তিক নহে। কিন্তু তাহা হয় নাই। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার একটি চমকপ্রদ উপায় ভাবিয়া পাইল। খেলাধুলায় পারদর্শী হইলে পরীক্ষার নম্বর বাড়াইয়া দেওয়া হইবে। অর্থাৎ, যে নম্বরের মায়াঞ্জন অভিভাবকদের কাণ্ডজ্ঞানরহিত করিয়াছে, সেই নম্বরের টোপ ফেলিয়াই ছেলেমেয়েদের মাঠে টানিয়া আনিবার উদ্যোগ। সরকারি চিন্তায় অভিনবত্ব আছে, আরও আছে দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবটির স্বীকৃতি।
কিন্তু আইন বাঁধিয়া ছেলেমেয়েদের খেলার মাঠে টানিয়া আনিবার চেষ্টাটি গ্রহণযোগ্য নহে। কোনও বিদ্যালয় যদি ছাত্রছাত্রীদের খেলিতে উৎসাহ দিতে চাহে, তাহা অতি স্বাগত। তাহার জন্য বিদ্যালয় যদি অভিভাবকদের কোনও ব্যবস্থায় প্রলুব্ধ করিতে চাহে, তাহাও বিদ্যালয়ের অধিকারের সীমার মধ্যেই পড়ে। কিন্তু, সরকারের কর্তব্যতালিকায় এই ব্যবস্থার স্থান নাই। সরকার কোনও সর্বজনীন নীতি স্থির করিয়া দিতে পারে না। ভারতে রাজনৈতিক নেতারা সচরাচর একটি বিভ্রমের শিকার তাঁহারা সমগ্র দেশকেই অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং নিজেদের জাতির অভিভাবক ভাবিতে ভালবাসেন। কেন্দ্রীয় সরকারে ঠাঁই হইলে এই বিভ্রমের তীব্রতা বাড়ে। ফলে, অপ্রাপ্তবয়স্ক দেশ কী করিবে, কোন পথে হাঁটিবে, অভিভাবকরা তাহা আইন বাঁধিয়া, নীতি তৈরি করিয়া স্থির করিয়া দিতে চাহেন। প্রবণতাটি মারাত্মক। এই অপচেষ্টায় কী ভাবে একটি জরুরি প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ হারাইয়া যায়, বর্তমান ঘটনাটি তাহার দৃষ্টান্ত। শিশুদের জন্য খেলাধুলা অতি প্রয়োজনীয়, সরকার যদি এই কথাটিই গণপরিসরে বিতর্কের জন্য পেশ করিত, বিদ্যালয়গুলিকে ভাবিতে বলিত, তবে তাহা অনেক বেশি কার্যকর হইত। আইন চাপাইবার চেষ্টাতেই সম্ভাবনাটি বিনষ্ট হইতেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.