গৃহকর্তা যে অসুস্থ, সে খবর ছিল ডাকাতদলের কাছে। বাড়িতে ঢুকেই তারা বলেছিল, “আমরা জানি, উনি অসুস্থ। চুপচাপ বসুন, যা নেওয়ার আমরাই খুঁজে নিচ্ছি।” কিন্তু চিৎকার করায় ডাকাতের মারে জখম হন গৃহকর্ত্রী ও ছেলে। রবিবার রাতে বিরাটির ওই ঘটনায় গৃহকর্ত্রীকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য দিকে, কয়েক কিলোমিটার দূরেই বারাসতে সোমবার সকালে এক মহিলার কানের দুল ছিনিয়ে নেয় এক দুষ্কৃতী। সেই ঘটনায় কান কেটে যায় ওই মহিলার। এ দিনই বিধাননগরের একটি গেস্ট হাউসে চুরির ঘটনাও ঘটেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার রাত আড়াইটে নাগাদ বিরাটির দক্ষিণ নীলাচলের কেটারিং ব্যবসায়ী রবি রায়ের বাড়ির ছাদের দরজা ভেঙে একতলার ঘরে ঢুকে পড়ে তিন সশস্ত্র ডাকাত। শব্দ পেয়ে বেরিয়ে আসেন রবিবাবু। কিছু দিন আগেই অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হয়েছে তাঁর। |
সোমবার রবিবাবু বলেন, “ডাকাতদের হাতে রড, শাবল, ছুরি ছিল। ভয়ে চিৎকার করছিলেন আমার স্ত্রী। তা শুনে ডাকাতেরা ‘চুপ কর’ বলে রড দিয়ে ওকে মাথায়, পিঠে মারতে থাকে। ওর মাথা ফেটে যায়।” মাকে বাঁচাতে ছুটে যায় রবিবাবুর ছেলে, নবম শ্রেণির রোহিত। ডাকাতদের রডের আঘাতে কপাল ফেটে যায় তারও। আলমারি থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা, ১৩ ভরির মতো সোনার গয়না, ৪টি মোবাইল, ডিভিডি প্লেয়ার নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা।
ডাকাতেরা পালিয়ে যেতেই রবিবাবুর চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। হাসপাতালে নিয়ে গেলে রোহিতের মাথায় পাঁচটি সেলাই পড়ে। গৃহকর্ত্রী বিদ্যাদেবীর মাথায় ২১টি সেলাই পড়েছে। তিনি হাসপাতালে ভর্তি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। ডাকাতেরা রবিবাবুর পরিচিত বলে অনুমান পুলিশের। তবে এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।
সোমবার সকালে বারাসতের চাঁপাডালি মোড়ের কাছে ছিনতাইয়ের ঘটনাতেও এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ জানায়, ৬টা নাগাদ প্রাতঃর্ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন বিধানপল্লির বাসিন্দা জ্যোৎস্না রায় নামে এক মহিলা। তখন কিছুটা ফাঁকা ছিল চারপাশ। যশোহর রোড থেকে বিধানপল্লিতে ঢোকার সময়ে এক দুষ্কৃতী তাঁর একটি কানের দুল ছিনিয়ে নেয়। হ্যাঁচকা টানে কান ছিঁড়ে যায় জ্যোৎস্নাদেবীর। তিনি রাস্তায় পড়ে গেলে অন্য কানের দুলটিও ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয় ওই দুষ্কৃতী। এক পথচারী ওই মহিলাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাঁর দু’টি কানেও সেলাই পড়েছে।
বারাসত ও সংলগ্ন কিছু এলাকায় পরপর এমন ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি ঘটেই চলেছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় পুলিশ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করলেও অপরাধ বন্ধ হয়নি। এই নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন বাসিন্দারা। তবে এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্যের দাবি, “সম্প্রতি যে ক’টি অপরাধ হয়েছে, তাতে দুষ্কৃতীরা ধরা পড়েছে। এই ঘটনারও তদন্ত শুরু হয়েছে।”
গত ১৬ দিনে পরপর দশটি ছিনতাইয়ের পরে বিধাননগরের এ ই ব্লকে একটি গেস্ট হাউসে এ বার চুরির ঘটনা ঘটল। রবিবার রাতে বিষয়টি নজরে আসে। সোমবার বিধাননগর উত্তর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। গেস্ট হাউসের কেয়ারটেকার দীপক অ্যান্টনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, বিএল ব্লকের বাসিন্দা জি পি সৎসঙ্গী তাঁর ছেলের বিয়ে উপলক্ষে ওই গেস্ট হাউসের পনেরোটি ঘর ভাড়া করেন। গত ৩১ অগস্ট থেকে তাঁর গাজিয়াবাদের আত্মীয় চেতন সৎসঙ্গী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্য সেখানে ছিলেন। রবিবার দুপুর তিনটে নাগাদ সকলে বেরিয়ে যান। রাতে ফিরে দেখেন, পনেরোটি ঘরের মধ্যে দু’টি ঘর খোলা। সেখান থেকে নগদ টাকা ও গয়না মিলিয়ে প্রায় দশ লক্ষ টাকার জিনিস চুরি গিয়েছে বলে অভিযোগ। সৎসঙ্গী পরিবারের তরফে জানানো হয়, বেরোনোর সময়ে দীপকের কাছে চাবি দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। |