মহাকরণের সামনের রাস্তায় উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাফেরা করছেন এক মহিলা। পরনে সালোয়ার-কামিজ। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ। পুলিশকে সামনে দেখে কেঁদে ফেললেন তিনি। বললেন, “যৌন পল্লি থেকে কোনও গতিকে পালিয়ে এসেছি। আমাকে বাঁচান!”
ঘটনাটি সোমবার দুপুরের। পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে লালদিঘির পাশে বছর পঁয়ত্রিশের ওই মহিলাকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে মহাকরণের আমলা-অফিসারের গাড়িচালকদের সন্দেহ হয়। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে ওই মহিলা জানান, তাঁর বাড়ি গল্ফ গ্রিনে। মাস তিনেক আগে যাদবপুরের এক দল যুবক তাঁকে ‘অপহরণ’ করে বিডন স্ট্রিটের যৌন পল্লিতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে রবিবার রাতে কোনও মতে পালিয়ে আসেন তিনি।
পুলিশি সূত্রের খবর, ফুটপাথের ধারে প্লাস্টিক বিছিয়ে মহিলার বিশ্রাম ও খাবারের ব্যবস্থা করেন ওই গাড়িচালকেরা। খেয়েদেয়ে ফুটপাথে অঘোরে ঘুমোচ্ছিলেন তিনি। গাড়িচালকেরা পুলিশ অফিসারদের ডেকে ওই মহিলার কথা জানান। পুলিশের দাবি, ঘুম থেকে ডেকে তোলার পরে মহিলা জানান, যৌন পল্লিতে তাঁর উপরে অত্যাচার চালানো হচ্ছিল। তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়, সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করলে তাঁর কিডনি কেটে বিক্রি করে দেওয়া হবে।
কে ওই মহিলা?
পুলিশের দাবি, মহিলা তাঁর এবং বাবার নাম জানিয়েছেন। বলেছেন, তাঁর বাবা সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন জিনিস সরবরাহের ব্যবসা করেন। তিনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। কিন্তু নিজের বাড়ির ঠিকানা অথবা বাড়ির টেলিফোন নম্বর জানাতে পারেননি।
কী ভাবে অপহরণ করা হয়েছিল ওই মহিলাকে?
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মহিলাটি পুলিশকে জানান, যাদবপুর সেন্ট্রাল রোডের একটি দোকানে গিয়েছিলেন তিনি। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ একটি মিষ্টির দোকানের সামনে এক দল যুবক আচমকাই তাঁর নাকে রুমাল চেপে ধরে। তিনি জ্ঞান হারান। বিশ্বনাথ ঘোষ নামে এক যুবকের কথাও পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি। মহিলার অভিযোগ, ওই যুবক যৌন পল্লির দালাল। গাড়িচালকেরা ওই মহিলাকে হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশের হাতে তুলে দেন। থানার ওসি প্রদীপ দাম বলেন, “মহিলা অসংলগ্ন কথা বলছেন। ওঁর কাছে চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি কাগজ পাওয়া গিয়েছে। তাতে বড়তলা এলাকার এক চিকিৎসকের নাম লেখা আছে। ওই চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, মহিলা মানসিক ভাবে অসুস্থ।” পুলিশ জানায়, মহিলাটি নিজের যে-নাম বলেছেন, যাদবপুর থানা সূত্রে সোমবার রাত পর্যন্ত ওই নামের কোনও মহিলাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ আসেনি। |