হাইকোর্টে নববধূ
‘বৈধ’ পাত্রকে ধরে এনে জেলে পুরল পুলিশ
দুই প্রাপ্তবয়স্কের বিয়েতে ফের ‘নাক গলানো’-র অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে।
পাঁচ বছর আগে কলকাতার শিল্পপতি অশোক তোদির মেয়ে প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে রিজওয়ানুর রহমানের বিয়ে ভাঙাতে ‘অতিসক্রিয়’ হয়েছিলেন লালবাজারের কিছু পুলিশকর্তা। রিজওয়ানুরের অপমৃত্যুর পরে ওই অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। এ বার একই শহরে আর এক ব্যবসায়ীর মেয়ের বিয়ে নিয়েও কার্যত একই ধরনের হস্তক্ষেপের অভিযোগ বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে ভালবেসে বিয়ে করার ‘অপরাধে’ বরকে শ্রীঘরে পাঠিয়েছে পুলিশ। অভিযোগ, গ্রেফতারের সময়ে দুই প্রাপ্তবয়স্কের বিয়ের আইনি কাগজপত্রকে আমলই দেননি তদন্তকারী অফিসার।
আদালতে কোমল। —নিজস্ব চিত্র
এবং গ্রেফতারের পরে প্রায় এক মাস কেটে গেলেও জামিন পাননি সাগর শ্রীবাস নামে ওই যুবক। স্বামীর জামিন চেয়ে সোমবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সাগরের স্ত্রী কোমল। পুলিশের বিরুদ্ধে ‘বৈধ বিয়েতে হস্তক্ষেপের’ নালিশের পাশাপাশি নিজের বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে যিনি হুমকি ও ভীতিপ্রদর্শনের অভিযোগ তুলেছেন।
আইনজীবী-সূত্রের খবর: বছর ছয়েক আগে ছত্তীসগঢ়ের রায়গড়ে কাকার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে সেখানকার সিকিম মণিপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিসিএ-র ছাত্র সাগরের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল লেকটাউন বি ব্লকের বাসিন্দা কোমলের। হিরে-কারবারি কমল কাড়েলের মেয়ে কোমল জানিয়েছেন, সম্প্রতি শেঠ সুরজমল জালান কলেজ থেকে তিনি বি কম পাস করেন। এর পরেই তাঁরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কোমলের পরিবারের মত ছিল না। গত ২১ জুন তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ২২ জুন ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে আর্য সমাজে আইন মোতাবেক তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের শংসাপত্র অনুযায়ী, সাগর ও কোমলের বয়স যথাক্রমে ২৩ ও ২১। নববধূ সে দিনই ফোন করে লেকটাউনের বাড়িতে বিয়ের খবর দেন।
এর পরেই গণ্ডগোল বাঁধে। ২৭ জুন কোমলের কাকা অনিল লেকটাউন থানায় এই মর্মে অভিযোগ করেন যে, সাগর তাঁদের মেয়েকে অপহরণ করেছেন। কোমলকে ছাড়ার জন্য সাগর পাঁচ লক্ষ টাকা ‘মুক্তিপণ’ও চেয়েছেন বলে অভিযোগে লেখেন অনিল। তার ভিত্তিতে ২ অগস্ট লেকটাউন থানার তদন্তকারী দল রায়গড়ে গিয়ে সাগরকে গ্রেফতার করে। কোমল তখন শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, দুই প্রাপ্তবয়স্কের বিয়ের আইনি বৈধতা পুলিশ মানতে চায়নি। এমনকী, বাধা আসতে পারে আঁচ করে তাঁরা মধ্যপ্রদেশের বালাঘাট কোর্টে যে হলফনামা দাখিল করেছিলেন, লেকটাউন থানার পুলিশ তারও তোয়াক্কা করেনি। তরুণীটির কথায়, “আমি কিছু বলতে গেলেই তদন্তকারী অফিসার চোখ রাঙিয়ে আমাকে চুপ করিয়ে দিচ্ছিলেন।”
৩ অগস্ট পুলিশ বালাঘাট আদালতেই সাগর-কোমলকে হাজির করায়। ট্রানজিট রিমান্ডে সাগরকে কলকাতার আনা হয়। বিচারকের অনুমতি নিয়ে কোমল কলকাতায় স্বামীর এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান। ৪ অগস্ট সল্টলেকের এসিজেএম আদালত সাগরকে জেল হেফাজতে পাঠায়। সেই থেকে দমদম সেন্ট্রাল জেলই তাঁর ঠিকানা।
কোমল জানিয়েছেন, বাপের বাড়ির ভয়ে তিনি লুকিয়ে রয়েছেন। এ দিন হাইকোর্টে তাঁর দাবি, পুলিশের সঙ্গে তাঁর বাপের বাড়ির কয়েক জন রায়গড়ে গিয়ে সাগরের পরিবারকে হুমকি দিয়ে এসেছেন। তাঁর বক্তব্য শুনে বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেল ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ কোমল ও তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে কলকাতা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে। চলতি সপ্তাহেই মামলাটির শুনানি হবে।
সাগরের পরিজনদের অভিযোগ, আর্থিক এবং জাতপাতের কারণেই কোমলের পরিবার সাগরকে হেনস্থা করতে চাইছে। অনিলের পাল্টা দাবি, “সাগরের বাড়ির চাপেই কোমল আমাদের নামে মিথ্যে অভিযোগ তুলেছে। ছেলেটা নানা সময়ে নানা নম্বরের মোবাইল থেকে ফোন করে মুক্তিপণ চেয়েছে।” প্রাপ্তবয়স্ক ভাইঝির বিয়েতে বাধা দিচ্ছেন কেন?
এর কোনও উত্তর অনিল দেননি। কিন্তু আইনরক্ষকেরাই বা কেন এই বিয়েতে নাক গলাচ্ছেন? বিশেষত, ‘অপহৃত’-ই যখন অপহরণের অভিযোগকে ভুয়ো বলছেন? বিধাননগর কমিশনারেটের কোনও কর্তা সরাসরি জবাব দিতে চাননি। তদন্তকারীদের বক্তব্য: অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ আনা হয়েছিল, প্রাথমিক তদন্তে যা কিছুটা প্রমাণিত হয়েছে। উপরন্তু কোমলের দেখানো ‘ম্যারেজ সার্টিফিকেট’কে জাল বলে সন্দেহ করেছিলেন তাঁরা। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা-প্রধান নিলু শেরপা চক্রবর্তী এ দিন বলেন,“আমরা নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও মেয়েটি সল্টলেকের কোর্টে কেন এল না, বুঝতে পারছি না। ও তখনই আদালতের সামনে নিজের বয়ান দিতে পারত!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.