বছর গড়ায়, মেলে না ‘বার্ড-ফ্লু’র ক্ষতিপূরণ |
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় • রামপুরহাট |
কথায় আছে ‘১৮ মাসে বছর’।
বার্ড-ফ্লু’তে ক্ষতিগ্রস্ত বীরভূমের বাসিন্দাদের কাছে ক্ষতিপূরণ পৌঁছতে এখন ওই কথাটাই যেন সত্যি হয়ে উঠেছে। বার্ড-ফ্লু হওয়ার পর চার বছর কেটে গেলেও এখনও এখানকার বাসিন্দারা সরকারি সাহায্য পাননি। আর এ কারণেই রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ ও উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রীর জেলার বাসিন্দারা প্রশাসনের উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। তবে প্রশাসনের দাবি, কিছু জটিলতায় ওই কাজ এত দিন আটকে ছিল। এ বার দ্রুত সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে রামপুরহাট ২ ব্লকের মাড়গ্রামে প্রথম বার্ড-ফ্লু’র জীবাণু ধরা পড়ে। তারপর মুরারই ১ ও মুরারই ২ ব্লক ছাড়াও জেলার ১৭টি ব্লকে ছড়িয়ে পড়েছিল বার্ড-ফ্লু। এলাকা পরিদর্শনে এসে রাজ্যের তৎকালীন প্রাণিসম্পদ বিকাশ ও উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী আনিসুর রহমান ক্ষতিগ্রস্ত প্রাণীপালকদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বিকল্প প্রাণিসম্পদ তৈরি করার উৎসাহ দিয়ে যান। তারপর এই খাতে বীরভূম জেলার জন্য বরাদ্দ হয় ৮ কোটি ২ লক্ষ সাড়ে ৪৫ হাজার টাকা। ওই টাকা ২০১০ সালের মার্চ ও এপ্রিল মাসে দু’টি ধাপে ক্ষতিগ্রস্ত ব্লক এবং রামপুরহাট, সিউড়ি ও নলহাটি পুরসভার জন্য বরাদ্দ করে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার-পিছু ১৫০০ টাকা করে দিয়ে বিকল্প প্রাণিসম্পদ চাষে উৎসাহিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নির্দেশেই সমস্যার সূত্রপাত বলে প্রশাসনের আধিকারিকদের দাবি।
কী সমস্যা? ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের কাজল সাহা বলেন, “তালিকা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার-পিছু ১৫০০ টাকা বিলি করা হলেও অনেক পরিবারই বাদ চলে যাচ্ছিল। এর ফলে রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি হচ্ছিল। আবার প্রশাসনের নির্দেশ মেনে ১৫০০ টাকার মধ্যে একটি ছাগল বা শুয়োরও কেনা যাচ্ছিল না। ফলে ওই টাকা বিলি আটকে যায়।” চলতি বছরের মার্চ মাসে রামপুরহাট ১ ব্লকের তৎকালীন বিডিও শান্তিরাম গড়াই ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পিছু ছাগল কেনার জন্য ১৫০০ টাকা করে বরাদ্দ করেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে পছন্দমত ঠিকাদারকে বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় তা আটকে যায়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে বীরভূমের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা ও জেলাপরিষদের সভাধিপতি অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায় ২৩ মে আধিকারিদের নিয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেন, ছাগল বা শুয়োরের বদলে বার্ড-ফ্লু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার-পিছু ১০টি করে উন্নত প্রজাতির মুরগি দেওয়া হবে। কিন্তু তারপরেও সমস্যা পিছু ছাড়ছে না।
ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের বিডিও বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, “প্রাণিসম্পদ দফতর স্বীকৃত সংস্থাই মুরগি জোগান দেওয়ার টেন্ডারে অংশ গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু জেলায় তেমন সংস্থা খুবই কম। স্থানীয় ভাবে মুরগি কেনার জন্য আমরা দু’বার দরপত্র আহ্বান করেও তিনজনের বেশি আবেদনকারী পাইনি। তাঁদের মধ্যে আবার দু’জনের কাগজপত্রে গণ্ডগোল রয়েছে। বেজায় ফ্যাঁসাদে পড়েছি।” এই সমস্যা আঁচ করে আবার রামপুরহাট ১ ব্লক তিনটি ধাপে ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৬৪০টি মুরগি ছানা কিনতে ‘ই-টেন্ডার’ করেছে। এতে জেলার বাইরের সংস্থাও অংশ নিতে পারবে। রামপুরহাট ২ ব্লক প্রশাসনও দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি শুরু করেছে বলে জানিয়েছে। জেলাশাসক বলেন, “দরপত্র আহ্বান করে ৬ মাসের মধ্যে আদিবাসী, তপশিলি, সংখ্যালঘুদের অগ্রাধিকার দিয়ে সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের মুরগি বিলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ ও উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী তথা এক সময় বার্ড-ফ্লু আক্রান্ত মাড়গ্রামের ভূমিপুত্র নূরে আলম চৌধুরি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য প্রশাসন তৎপর রয়েছে। আমরা নজর রেখেছি।” জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ ও উন্নয়ন দফতরের উপ-অধিকর্তা বাসুদেব মালাকার বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতিগুলি আমাদের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করছে। আশাকরি দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।” |