নারী নিগ্রহ-সহ একের পর এক ঘটনা যখন সংবাদ শিরোনামে, সেই সময়েই পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্য রাজ্যের তুলনায় ‘উন্নত’ বলে দাবি করলেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, “রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে পচা প্রচার হচ্ছে!”
কলকাতার ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডে একটি অনুষ্ঠানে রাজ্যের রবিবার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রতবাবু সংবাদমাধ্যমের দিকেই পাল্টা আঙুল তুলেছেন। মন্ত্রীর দাবি, “অন্য রাজ্যের তুলনায় আমাদের রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা কয়েক গুণ ভাল। আগের সরকারের আমলে এখনকার চেয়ে অনেক বেশি আইনশৃঙ্খলার অবনতির ঘটনা ঘটত। কিন্তু সেগুলি ঠিকমতো নথিভুক্ত হত না। এখন ঘটনার অভিযোগ নথিভুক্ত হচ্ছে।” একই সঙ্গে সুব্রতবাবুর ব্যাখ্যা, “আমি এই হওয়াটাকে অবশ্য সমর্থন করছি না। এখন কেউ হস্তক্ষেপ (তদন্তে) করে না। মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে অনেক বেশি কঠোর।”
মন্ত্রীর এমন মন্তব্যের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এসেছে প্রত্যাশিত ভাবেই। সুব্রতবাবুর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রশ্নের জবাবে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেছেন, “বাবু যা বলেন, পারিষদকে তার শত গুণ বলতে হয়! নইলে মন্ত্রীদের চাকরি থাকবে না!” বিরোধী দলনেতার প্রশ্ন, “মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য মন্ত্রীরা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলার কোনও সমস্যা হয়নি। তা হলে কলকাতা পুলিশ প্রচারপত্র ছড়াচ্ছে কেন যে, মহিলাদের আত্মরক্ষায় লঙ্কাগুঁড়ো রাখতে হবে! এই সরকারের মাথা কী করে, হাত-পা কী করে, কেউ জানে না!”
এই চাপানউতোরের মধ্যেই গল্ফ গার্ডেনে গণধর্ষণের ঘটনায় পুলিশি তদন্তে নতুন করে বিশেষ অগ্রগতি হয়নি। অন্যতম মূল অভিযুক্ত ছাড়া অন্যদের খোঁজ এখনও মেলেনি। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ঘটনায় পরোক্ষ ভাবে অন্য যারা যুক্ত ছিল, তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। শরিফুল আলি মোল্লা নামে মূল অভিযুক্তকে ২৭ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
গল্ফ গার্ডেনে শুক্রবার সন্ধ্যায় ওষুধ কিনতে গিয়ে এক মহিলা ধর্ষিতা হন বলে অভিযোগ। যে ঘরে ওই মহিলা ধর্ষিতা হন বলে অভিযোগ, সেখানে শরিফুল ছাড়া আর কেউ ছিল না বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
মহিলার স্বামী এবং কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা ঘরটির তালা ভেঙে যখন মহিলাকে উদ্ধার করেন, তখন শরিফুলই ঘরের ভিতর ছিল। তবে ঘরের বাইরে যারা ছিল, তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলেই তাদের খোঁজ করছে পুলিশ। সে কারণেই এফআইআর-এ তাদের ‘অপরিচিত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই ‘অপরিচিত’দের খোঁজ অবশ্য এ দিন রাত পর্যন্ত মেলেনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই অভিযুক্তদের সকলেই মাদারতলা বস্তির বাসিন্দা। তবে আদতে তাদের প্রত্যেকেরই বাড়ি অন্য জায়গায়। অভিযুক্তদের মোবাইলের ‘টাওয়ার লোকেশন’ দেখে তাদের অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ। তবে কেউ কেউ সিম কার্ড বদলে নেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে তদন্তাকারীদের। সমস্যা হচ্ছে অভিযুক্তদের কেউ কেউ ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পর থেকে মোবাইল বন্ধ করে দেওয়ার ফলেও। |