দিন দিন গাড়ির চাপ বাড়ছে। তা সামাল দিতে এ বার বেসরকারি বিনিয়োগে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ পর্ব শুরু হল পশ্চিমবঙ্গে। ছ’নম্বর জাতীয় সড়কে ইতিমধ্যে ওই কাজ শুরু হয়েছে। দু’নম্বরের জন্য ডাকা হয়েছে দরপত্র। সম্প্রসারণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটিকে টোল আদায়ের অধিকারও দেওয়া হচ্ছে, যার বিনিময়ে দীর্ঘ মেয়াদে বার্ষিক উপার্জন হবে কেন্দ্রীয় কোষাগারের। প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে জমি কোনও সমস্যা হবে না বলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া, সংক্ষেপে এনএইচএআই)-এর দাবি।
এনএইচএআই-সূত্রের খবর: ২০০১-এ সোনালি চতুর্ভুজ প্রকল্পের ‘ন্যাশনাল হাইওয়ে ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ (এনএইচডিপি) কর্মসূচির প্রথম দফায় এই দু’টি জাতীয় সড়ককে দু’থেকে চার লেনে পরিণত করা হয়েছিল। ইদানীং যানবাহন চলাচল যথেষ্ট বেড়ে যাওয়ায় দু’টোকেই বাড়িয়ে ছ’লেন করার পরিকল্পনা হয়। এনএইচএআইয়ের এক কর্তা জানান, আইআরসি (ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেস)-র নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনও জাতীয় সড়কে গাড়ি চলাচলের হার (প্যাসেঞ্জার কার ইউনিট, সংক্ষেপে পিসিইউ) দৈনিক চল্লিশ হাজার ছুঁলেই তা ছ’লেনের করতে হবে। (উল্লেখ্য, এই হিসেব কষার সময়ে একটি ট্রাককে দেড় পিসিইউ ধরা হয়।)
এনএইচডিপি-র পঞ্চম দফায় ওই পরিকল্পনারই রূপায়ণ হচ্ছে। ডানকুনি থেকে খড়্গপুর পর্যন্ত ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের (মুম্বই রোড) প্রায় ১১১ কিলোমিটার চওড়া করা শুরু হয়েছে গত পয়লা এপ্রিল। আনুমানিক খরচ ১৪০০ কোটি টাকা। বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থাটিকে কাজ শেষ করতে আড়াই বছর সময় দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে ঝাড়খণ্ডের বারোয়া আড্ডা থেকে অন্ডাল পর্যন্ত দু’নম্বর জাতীয় সড়কের প্রায় ১২২ কিলোমিটার অংশ চওড়া করতে ঠিকাদার বাছাইয়ের জন্য দরপত্র ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্গাপুর ডিভিশনের প্রজেক্ট ডিরেক্টর কৃষ্ণ মুরারি। এতে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১৬০০ কোটি। এনএইচএআইয়ের খবর: দু’টো কাজই হবে ডিবিএফওটি (ডিজাইন-বিল্ড-ফিনান্স-অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার) পদ্ধতিতে। সেটা কী? |
অর্থাৎ, টেন্ডার ডেকে সম্প্রসারণের ভার দেওয়া হবে বাছাই বেসরকারি সংস্থাকে। যারা আধুনিক প্রযুক্তিতে প্রকল্পের নক্শা বানাবে, মূলধন খাতে টাকা ঢালবে, সম্প্রসারিত সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও সামলাবে। এবং এই সব খাতে লগ্নি করা টাকা ‘ওঠানোর’ পাশাপাশি যাতে তারা মুনাফাও করতে পারে, সে জন্য সংস্থাটিকে টোল আদায়ের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। বিনিময়ে তারা ফি বছর নির্দিষ্ট হারে ‘প্রিমিয়াম’ দেবে এনএইচএআই-কে। কত দিন ধরে?
এনএইচআইয়ের কলকাতা ডিভিশনের এক কর্তা জানান, মুম্বই রোড সম্প্রসারণের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থাটি যে দিন কাজ শুরু করেছে, সেই দিন থেকে শুরু করে আগামী ২৫ বছর ধরে তাঁরা ওই অর্থ জুগিয়ে যাবে। যেমন, এ বছর তাদের ১২৬ কোটি টাকা দেওয়ার কথা। ‘প্রিমিয়ামের’ অঙ্ক প্রতি বছর ৫% হারে বাড়বে। চুক্তি মোতাবেক, প্রথম দিন থেকেই তারা টোল আদায় করতে পারবে। হাওড়ার ধূলাগড় ও পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় মুম্বই রোডের উপরে যে দু’টো টোলওয়ে রয়েছে, তার ভার ইতিমধ্যে বেসরকারি সংস্থাটির হাতে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এ রাজ্যে তো জমির জটে সড়ক-প্রকল্প ধাক্কা খাওয়ার নজির রয়েছে! এ ক্ষেত্রে তেমন সম্ভাবনা কতটা?
এনএইচএআইয়ের তরফে অবশ্য সে আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: ছ’নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণে হাওড়া ও দুই মেদিনীপুর মিলিয়ে মোট যে ৯০০ হেক্টর জমি দরকার, তার প্রায় ৯৮% পাওয়া গিয়েছে। বাকিটুকুর জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। শিগগিরই তা হাতে আসবে বলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ আশাবাদী। অন্য দিকে কৃষ্ণ মুরারির দাবি: দু’নম্বর জাতীয় সড়কের কাজে প্রয়োজনীয় জমিও হাতে পেতে তাঁদের কোনও সমস্যা হবে না। জাতীয় সড়কের গতি বজায় রাখতে কী কী পরিকল্পনা রয়েছে?
এনএইচএআইয়ের কলকাতা ডিভিশনের ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) রাজা চট্টোপাধ্যায় জানান, মুম্বই রোডে প্রকল্পের আওতাভুক্ত ডানকুনি-খড়্গপুর ১১১ কিলোমিটার পথের ২১টি মোড়ে উড়ালপুল তৈরি হবে। দ্রুত বেগে ছুটে চলা গাড়ি-লরি মোড়ের কিছু আগে উড়ালপুলে উঠে যাবে, ফের রাস্তায় নামবে মোড় পেরিয়ে কিছুটা দূরে। এতে গাড়ির গতি কমাতে হবে না, ফলে যানজটের অনেকটা সুরাহা হবে। উপরন্তু ছ’নম্বর জাতীয় সড়কে নিত্যদিনের সমস্যা যে কোলাঘাট সেতুর যানজট, তা মোকাবিলার লক্ষ্যেও বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে।
কী রকম?
এনএইচএআইয়ের খবর: রূপনারায়ণের উপরে কোলাঘাট সেতুটি আদতে দু’লেনের। ২০০১-এ পুরো জাতীয় সড়ক চার লেন করার সময়েই ঠিক হয়েছিল, আরও একটা তিন লেনের সেতু তৈরি হবে। সেই মতো খড়্গপুরমুখী দিকে বর্তমান সেতুর ডান পাশে কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু তা বেশ কিছুটা এগিয়ে থমকে যায়। এ বার সেটিকেও সম্প্রসারণ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজাবাবু। তিনি বলেন, “দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থা এক বছরের মধ্যে অসম্পূর্ণ সেতুটি শেষ করবে।” পাশাপাশি ওখানে বেসরকারি উদ্যোগে আরও একটা নতুন তিন লেনের সেতু গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছে এনএইচএআই।
অর্থাৎ নতুন প্রকল্পে রূপনারায়ণের উপরে মোট আট লেনের তিনটি সেতু পেতে চলেছে কোলাঘাট। |