প্লাস্টিক নিয়ে পুরসভার ফরমানে বিপাকে খাদ্য দফতর। গত সপ্তাহেই জলপাইগুড়ি পুরসভার কাছে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে মিড ডে মিল রান্নার চালের নমুনা এসে পৌঁছেছে। খাদ্য দফতরের নিয়ম অনুযায়ী চালের নমুনা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগেই জেলাশাসকের দফতর বা পুর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। তেমন নিয়মেই নমুনা এসে পৌঁছয় পুর কর্তৃপক্ষের কাছে। এদিকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যাবহার রুখতে শহর জুড়ে অভিযান শুরু করেছে জলপাইগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষ। হাতে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দেখলেই ৫০ টাকা করে জরিমানা করছেন পুর কর্মীরা। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ আরও বেশি, ৫০০ টাকা। শহর জুড়ে প্লাস্টিক বিরোধী অভিযান চালানো পুরসভার ঘরেই যখন প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্দি হয়ে সরকারি চাল এসে পৌঁছনোর ঘটনায় বেজায় ক্ষুদ্ধ পুর কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য দফতরকে কড়া চিঠি পাঠিয়েছে পুরসভা। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এরপর থেকে প্লাস্টিকে নমুনা পাঠানো যাবে না। সেই সঙ্গে চিঠি পাঠানো হয়েছে জেলাশাসকের দফতরেও। আর্জি জানানো হয়েছে, সরকারি কাজে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে। এতেই বিপাকে পড়েছে খাদ্য দফতর। দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী স্বচ্ছ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে চালের নমুনা ভরে সিল করতে হয়। যে ব্যাগে নমুনা চাল ভরা হবে সেটি স্বচ্ছ না হলে বাইরে থেকে চাল দেখা যাবে না। স্বচ্ছ ব্যাগ না হলে বারবার নমুনা দেখানোর জন্য ব্যাগের সিল খুলতে হবে। আইনত যা করার উপায় নেই। একবার সিল খুললে অন্য গুণমানের চাল মিশে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রতি মাসে গুদাম, সরবারহকারী, জেলাশাসকের দফতর, পুরসভা সহ বিভিন্ন দফতরের প্রকল্পে অন্তত হাজার খানেক চালের নমুনা পাঠাতে হয়। তার জন্য প্রয়োজন হয় হাজার খানেক ব্যাগ। একটি প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের তুলনায় কাপড়ের ব্যাগের খরচ কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত খরচ বহন করবে কে তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দফতরের কর্তাদের মধ্যে। পুরসভা এত বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নয়। জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “নিয়ম কারও ক্ষেত্রে বদলাতে পারে না। সকলকেই এক নিয়ম মানতে হবে। গত সপ্তাহেই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে খাদ্য দফতরের চালের নমুনা পেয়েছি। নিয়ম মেনেই সেই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগগুলি আমরা বাজেয়াপ্ত করেছি। খাদ্য দফতরকে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের পরিবর্তে অন্য কোনও ব্যাগে চালের নমুনা পাঠাতে চিঠি লেখা হয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারি কাজে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধ করতে জেলাশাসককেও চিঠি পাঠানো হবে। পুরসভার আর্জি রাখতে গেলে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের পরিবর্তে কাগজ বা কাপড়ের ব্যাগে চালের নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। এই মুহূর্তে তেমন কোনও নির্দেশ দফতরের হাতে নেই। চালের নমুনা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে পাঠানো যাবে না, এমন আর্জির কথা শুনে রীতিমতো বিষম খেয়েছেন জেলা খাদ্য ও সরবরাহ আধিকারিক। বৃহস্পতিবার জেলা খাদ্য নিয়ামক বিশ্বজিত বিশ্বাস বলেন, “পুরসভা বলছে। আমরা কী করব। সরকারি নির্দেশে বলা আছে, স্বচ্ছ প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে সিল করে চালের নমুনা পাঠাতে হবে। এই নিয়ম না মানলে উপায় নেই। পুরসভাও তাদের আপত্তি জানাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেব।” |