অসমে অশান্তি
বিদ্যালয়ের ছুটি বাড়ল মাসখানেক
রমের ছুটি ৩১ জুলাই শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে গোষ্ঠী সংঘর্ষে নামনি অসম উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় দলে দলে শরণার্থীরা জেলার স্কুলগুলিতে আশ্রয় নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ছুটির মেয়াদ আরও ১৫ দিন বাড়িয়ে দেওয়া হয়। স্বাধীনতা দিবসের দিন সেই ছুটির মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও আতঙ্কের জেরে শরণার্থীরা গ্রামে ফিরতে পরেননি। ফলে এখনও অসমের ধুবুরি জেলায় বেশির ভাগ স্কুলই খোলেনি। অথচ সেপ্টেম্বরেই জেলার অধিকাংশ স্কুলেই তৃতীয় ইউনিট টেস্ট রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্কুলগুলিতে চাঁদোয়া খাটিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস শুরু করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ধুবুরি জেলা শিক্ষা দফতর। রাজ্য শিক্ষা দফতরের কাছে ইতিমধ্যেই এই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ধুবুরির জেলা প্রাথমিক শিক্ষা আধিকারিক মৃদুল নিয়োগ বলেছেন, “পরিস্থিতি যতদিন স্বাভাবিক না-হচ্ছে ততদিন স্কুল কাম্পাসের ভিতরে অস্থায়ী তাঁবু টাঙিয়ে ক্লাস শুরু করার কথা ভাবা হয়েছে। এই ব্যাপারে একটি প্রস্তাব তৈরি করে, কত টাকা ব্যয় হতে পারে তার হিসাব ঊর্ধ্বতন কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই ক্লাস শুরু করা হবে।” অসমের কোকরাঝাড় ও চিরাংয়ে গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে কয়েক লক্ষ মানুষ বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে রয়েছেন। কোকরাঝাড়, পশ্চিমবঙ্গের শামুকতলা ছাড়াও ধুবুরি জেলাতেও লক্ষাধিক শরণার্থী রয়েছেন। এলাকার বিভিন্ন স্কুলেই তাঁদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। রাজ্য সরকার ছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকেও শরণার্থীদের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর এসব কর্মকাণ্ডের জেরে স্কুলগুলিতে ব্যাহত হয়ে পড়েছে পঠনপাঠন। জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ধুবুরিতে নিম্ন বুনিয়াদি, উচ্চ বুনিয়াদি এবং হাই স্কুল মিলিয়ে ১৭৪টি স্কুল রয়েছে। তার বাইরে কলেজ রয়েছে ৪টি। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই শরণার্থীদের ভিড়ে গিজগিজ করছে। ওই সমস্ত স্কুল ও কলেজে জেলার প্রায় ৪০ হাজার ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে। শরণার্থীদের ভিড়ে স্কুল না-খোলায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকেরা। উদ্বিগ্ন শিক্ষকেরাও। নির্দিষ্ট সময়ে কোর্স শেষ করতে না-পারলে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। আবার আতঙ্কের পরিবেশ না-কাটলে শরণার্থীদের বাড়িতে ফিরে যেতে বলাটা অমানবিক ব্যাপার হবে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা। এই পরিস্থিতিতে স্কুলের মাঠে চাঁদোয়া খাটিয়ে ক্লাস চালু করার কথা ভাবা হয়েছে। জেলা শিক্ষা দফতরের ওই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং অভিভাবকেরাও। তাঁদের বক্তব্য, এখন যা পরিস্থিতি তাতে দ্রুত পঠনপাঠন শুরু করানো দরকার। গৌরীপুর মাটিয়াবাগ স্কুলের প্রধান শিক্ষক আতোয়ার রহমান বলেন, “সেপ্টেম্বরেই ত্রৈমাসিক ইউনিট টেস্ট হবে। তার আগে কোর্স শেষ করা দরকার। অথচ ক্লাস হচ্ছে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পঠনপাঠন শুরু করানো দরকার।” বিলাসীপাড়া রোকাখাতা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিরণ্যকুমার নাথ জানান, পুজোর পরেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীদের টেস্ট পরীক্ষা শুরু করে দিতে হবে। তিনি বলেন, “কোর্স শেষ করতে না-পারলে ছেলেমেয়েরা লিখবে কী? রাজ্যের অন্যত্র স্কুল খুলেছে। এমন চলতে থাকলে আমাদের জেলার ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পিছিয়ে পড়বে।” বিলাসীপাড়া পাবলিক স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়া কলিতা। তার বাবা জয়ন্তবাবু বলেন, “শরণার্থীদের সমস্যার জন্য আমরা সমব্যাথী। কিন্তু ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই প্রশাসনকে পঠনপাঠন চালু করার ব্যাপারে বিকল্প রাস্তা খুঁজে বার করতে হবে।” স্কুলে চাঁদোয়া খাঁটিয়ে ক্লাস চালু করার পরিকল্পনায় আপত্তি নেই গৌরীপুরের মনোজ রায়ের। তাঁর মেয়ে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। মনোজবাবুর উদ্বেগ, “স্কুলগুলোর তা অবস্থা তাতে শিশুদের পানীয় জল ও শৌচাগারের ব্যবস্থার দিকেও প্রশাসনের নজর রাখা দরকার। এমন যেন না-হয় যে স্কুলে গিয়ে বাচ্চারা অসুস্থ হল।” ধুবুরির জেলাশাসক কুমুদ কলিতা বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, “ক্লাস চালু করা হলে সমস্ত ধরনের সমস্যার কথা মাথায় রেখেই যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.