|
|
|
|
দ্রুত ব্যবস্থা চান উদ্বিগ্ন সনিয়া |
পাক মন্ত্রীকে ফোন, কড়া বার্তা শিন্দের |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ভারতে আতঙ্ক ছড়ানো বন্ধ করতে পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করে কড়া বার্তা দিলেন সুশীলকুমার শিন্দে। সেই সঙ্গে কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে পাক সাইটগুলির মিথ্যা প্রচার বন্ধে ইসলামাবাদের সহযোগিতাও চেয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিন্দে। কেন্দ্রের এই তৎপরতার পাশাপাশি কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বও আজ অসমে হিংসা ও উত্তর-পূর্বের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর বিরুদ্ধে সরব হন।
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর মতে, হিংসার আতঙ্ক ও জনগোষ্ঠীগুলির মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর এই ঘটনা স্বাধীনতা-উত্তর কালের সব চেয়ে বড় বিপদ। তাঁর কথায়, “উত্তর-পূর্বের মানুষদের সঙ্গে যা ঘটছে, তা দুঃখজনক ও উদ্বেগের। সম্প্রীতি ও ঐক্য নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে যারা, দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।” কার্যত সনিয়ার এই বক্তব্যেরই প্রতিফলন স্পষ্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চটজলদি পদক্ষেপে।
গত কালই রাতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহ ঘোষণা করেছিলেন, উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর পিছনে পাক ওয়েবসাইটগুলির ভূমিকা নিয়ে সে দেশের সঙ্গে কথা বলা হবে। |
 |
অসমে ফেরার হিড়িক কমলেও বেঙ্গালুরু থেকে আসা গুয়াহাটিগামী ট্রেন ভিড়ে ঠাসা।
তাই ওঠানামায় ভরসা জানলাও। রবিবার হাওড়ায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী। |
বিষয়টি নিয়ে কালক্ষেপ না করে শিন্দে আজই ফোন করেন পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিককে। পাকিস্তানের মাটিতে বসে যে ফের ভারত-বিরোধী দুষ্কর্ম ঘটানো হয়েছে, সে কথা উল্লেখ করেন তিনি। ছবিতে কারচুপি করে যারা বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে ভারতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার অনুরোধ জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
রেহমান পরে ইসলামাবাদে শিন্দের ফোনের কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি তাঁকে বলেছি, প্রমাণ দিন। আমরা ব্যবস্থা নেব।” এই রকম প্রতিক্রিয়াই পাওয়া যাবে বলে ধরে নিয়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব কাল রাতে জোরের সঙ্গে বলেছিলেন, “আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আছে।” আগেও সন্ত্রাসে মদতের অভিযোগের মুখে বারবার এই কথাই বলে এসেছে পাকিস্তান। ভারতের দেওয়া তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে জঙ্গি-নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি পাকিস্তান। তবু এ বারের সাইবার-ছায়াযুদ্ধ নিয়ে ৪৩ পাতার একটি রিপোর্ট পাকিস্তানকে দেওয়া হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর। তৈরি করা হচ্ছে আরও একটি রিপোর্ট। তাতে বিশ্বের কাছে পাক সাইটগুলির ভূমিকা তুলে ধরতে সাইটগুলির নামধাম-পরিচয় তথা ‘আইপি অ্যাড্রেস’-এরও উল্লেখ থাকবে।
পাক সাইটগুলি সম্পর্কে ভারতের অভিযোগের কী প্রতিক্রিয়া আসবে সেটা মোটামুটি জানাই ছিল দিল্লির। শিন্দে আজ ফোন করার আগেই পাক কর্তারা কড়া ভাষায় ভারতের সমালোচনা করে বলেন, ও দেশে খারাপ কিছু ঘটলেই পাকিস্তানকে দায়ী করাটা মোটেই কাজের কথা নয়। দিল্লি কোনও তথ্য পেয়ে থাকলে, কূটনৈতিক স্তরে তা ইসলামাবাদকে জানাতে পারত। এমন ক্ষেত্রে পাকিস্তান অবশ্যই তাদের সাহায্য করবে। কিন্তু মধ্যরাতে এমন একটা ঘোষণা করা চরম দায়িত্বহীনতার কাজ। এর পরে অবশ্য শিন্দের ফোন পরিস্থিতিতে বদল আনে, আপাত ভাবে হলেও কিছুটা সহযোগিতার বাতাবরণ তৈরি করে। দিল্লি বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন হলেও দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা হয় কূটনৈতিক সৌজন্যের গণ্ডিতে থেকেই। শিন্দে যেমন ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তেমনই রেহমানও তাঁকে পাকিস্তানে গিয়ে সংশোধিত ভিসা চুক্তিতে সই করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। অতীতে এ নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও চুক্তিটির ব্যাপারে দু’দেশ এখন সহমত হয়েছে।
আতঙ্ক মেটানোর এই কূটনৈতিক চেষ্টার পাশাপাশি, কড়া প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি। আপত্তিকর এসএমএস পাঠানোর দায়ে বেঙ্গালুরুতে ১৬ জন গ্রেফতার হয়েছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার বিদেশি হাতের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবে। তাঁর কথায়, “গোড়া থেকেই বলে আসছি, এটা নিছক বড়ো ও সংখ্যালঘুদের সংঘাত নয়।” তবে বড়ো জঙ্গি সংগঠন এনডিএফবি আজই হুমকি দিয়েছে, ১৯৫১ সালের পরে বড়ো ভূমিতে আসা কাউকে জমির অধিকার নিতে দেওয়া হবে না। ১৯৭১-কে ভিত্তিবর্ষ হিসেবে মানতে রাজি নয় তারা। অসমে সংখ্যালঘুদের সংগঠনগুলির তরফেও পাল্টা হুমকির খবর পাওয়া গিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি এখনও থমথমে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া নমনি অসমে বড় কোনও সংঘর্ষ হয়নি। পুলিশ জানায়, ধুবুরি ও চিরাং-এ দুটি সংঘর্ষের ঘটনায় এক ব্যক্তি জখম হয়েছেন। বিলাসিপাড়ায় তিরের আঘাতে জখম হন এক ব্যক্তি। গত রাতে, চিরাং-এর বিজনিতে ৩টি বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। সেখানে সেনাবাহিনীর টহল চলছে। রঙিয়ায় আজ ১২ ঘণ্টার জন্য কার্ফু শিথিল করা হয়।
গত ক’দিনে দক্ষিণ ভারত থেকে রওনা দিয়েছেন, এমন প্রায় ৩ হাজার অসমিয়া আজ গুয়াহাটি পৌঁছান। তাঁদের মধ্যে সন্ত্রস্ত অসমিয়াদের পাশাপাশি ঈদের জন্য ঘরমুখী মানুষের সংখ্যাও কম নয়। আতঙ্কে ফিরে আসা মানুষদের বোঝাতে মুখ্যমন্ত্রী গগৈ, জেলা ও ব্লক স্তরে বিধায়ক, জেলা কংগ্রেস সভাপতি, জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। রেল সূত্রের খবর, অসমে ফেরার হিড়িক কিছুটা কমে এসেছে। উত্তর-পূর্বমুখী ভিড় সামলাতে কিছু ট্রেনে বাড়তি কামরা জুড়তে হলেও মুম্বই, পুণে, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই কোনও শহর থেকেই আজ নতুন কোনও স্পেশ্যাল ট্রেন দিতে হয়নি। কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্রে বড় কোনও অশান্তির ঘটনাও ঘটেনি। |
|
|
 |
|
|