কলকাতায় ত্রিফলা আলোর বরাতে ‘অনিয়ম’ আছে বলে জানিয়ে দিল পুরসভার অর্থ দফতর। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ ওঠার পরে পুর কমিশনারের নির্দেশে অডিট করেছিল অর্থ দফতর। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, পুরসভার পদ্ধতি মেনেই কাজ হয়েছে।
পুরসভার জয়েন্ট মিউনিসিপ্যাল কমিশনার (উন্নয়ন)-এর দফতর সূত্রের খবর, অডিটের পরে অর্থ দফতরের নোট সম্বলিত ওই ফাইল তাদের দফতরে এসেছে। সেখানে স্পষ্টই বলা হয়েছে, দরপত্র না ডেকে শুধু ‘জরুরি’ কারণ দেখিয়ে যে ভাবে ত্রিফলা আলো লাগানোর ক্ষেত্রে কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে, তা নিয়মবিরুদ্ধ। বিষয়টি মেয়র পারিষদের আগামী বৈঠকে তোলার জন্য জয়েন্ট মিউনিসিপ্যাল কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ।
সম্প্রতি কলকাতা পুর এলাকায় ত্রিফলা আলো লাগানোর বিল বাবদ দাবি করা ২৭ কোটি টাকার ফাইল আটকে দেন খলিল আহমেদ। পুর সচিবালয়ের এক আধিকারিক জানান, পুরসভায় ৫ লক্ষ টাকার উপরে যে কোনও কাজের বরাত দেওয়ার আগে কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে টেন্ডার ডাকতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা এড়াতে ২৭ কোটি টাকার কাজকে পাঁচ লক্ষ টাকার নীচে ৫৪০টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কোনও টেন্ডার ডাকা হয়নি। অর্থ দফতর ওই কাজের বিল অনুমোদন না করে পুর কমিশনারের কাছে পাঠিয়ে দেয়। তখনই পুরো বিষয়টি নজরে পড়ে পুর কমিশনারের। তিনি প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। |
জয়েন্ট মিউনিসিপ্যাল কমিশনারের দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে পালাবদলের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, কোনও ক্ষেত্রেই কাগজে বিজ্ঞাপন না দিয়ে এবং টেন্ডার না ডেকে সরকারি কাজ করা যাবে না। সরকারের সেই নিয়ম মানেনি কলকাতা পুরসভার আলো দফতর। জনগণের টাকায় এ ভাবে ‘অনিয়ম’ করাটা ঠিক হয়নি বলে তাদের রিপোর্টে মন্তব্য করেছে অর্থ দফতর।
এই পরিস্থিতিতে ত্রিফলা আলোর বরাতে নিয়ম মানা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বিভাগীয় তদন্তের দাবি তুলেছেন মেয়র পারিষদদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, আলো লাগানোর কাজটা হয়েছিল পূর্বতন পুর কমিশনার অর্ণব রায়ের আমলে। তিনি কেন বিলে সই করে যাননি, তা জানাটা জরুরি। পুরসভার অর্থ দফতরই বা কেন আপত্তি তুলেছে, তা জানতে বিভাগীয় তদন্তের দাবিও তুলেছেন ওই মেয়র পারিষদেরা।
পুরসভা সূত্রের খবর, প্রথম দিকে ওই কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল রাস্তা ধরে ধরে। কোনও রাস্তায় ৮৫ লক্ষ, কোনও রাস্তায় ৬৫ লক্ষ, আবার কোনওটাতে ৪৫ লক্ষ টাকার বরাত। মেয়রের অনুমোদনও মিলেছিল তাতে। পরে সেই কাজ আবার ৫ লক্ষে ভেঙে দেওয়া হল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুরসভার অন্দরমহলেই। একই সঙ্গে ত্রিফলা আলোর দাম নিয়েও বিভ্রান্তি বাড়ছে। গত ২২ মে পুরসভার অধিবেশনে মেয়র পারিষদ (আলো) মনজার ইকবাল বলেছিলেন, বসানোর খরচ সমেত ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ পিছু পুরসভার খরচ হচ্ছে ১৭,৬৯০ টাকা। যদিও মেয়র পারিষদ (এন্টালি ওয়ার্কশপ) তারক সিংহ বলেন, “ওই তথ্য ঠিক নয়। বাস্তবে রাস্তায় বসাতে সেট প্রতি খরচ হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি। কখনও ২১ হাজার, কখনও ২৩-২৪ হাজার।” এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, পুরসভার অধিবেশনে ‘ভুল’ তথ্য দেওয়া নিয়েও।
মেয়র অবশ্য এ সব অভিযোগে আমল দিতে নারাজ। তিনি রবিবার বলেন, “ত্রিফলা আলো লাগানোর ক্ষেত্রে কোনও নিয়মই ভাঙা হয়নি।” পুরসভার অর্থ দফতর তা হলে এমন রিপোর্ট দিল কেন? মেয়রের জবাব, “এমন রিপোর্টের কথা আমার জানা নেই। সব কাজ নিয়ম মেনেই হয়েছে।” |