রূপনারায়ণপুর ও বরাকরে পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানায় সড়কপথে কড়া নজরদারি ও নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি তুলেছেন শিল্পাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। বণিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, নজরদারির অভাব থাকায় এই দুই প্রবেশপথের মাধ্যমে প্রতি দিন কয়েকশো পণ্যবাহী লরি বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই দু’রাজ্যের মধ্যে অবাধে যাতায়াত করছে। এর ফলে প্রতি বছর রাজ্য সরকারের কয়েকশো কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি যাচ্ছে।
বণিক সংগঠনগুলির আরও দাবি, বরাকরের ডুবুরডিহি চেকপোস্টেও আরও কড়া নজরদারি বাড়াক বিক্রয়কর দফতর। সংশ্লিষ্ট বিক্রয়কর দফতরের আসানসোল শাখার আধিকারিকেরা জানান, বরাকর ও রূপনারায়ণপুরের প্রবেশপথ দু’টিতে নিয়মিত নজরদারি শুরু হয়েছে। তাতে চলতি আর্থিক বছরে বেশ কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় ও কাগজপত্র বিহীন বহু পণ্যবাহী লরি আটকও হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।
আসানসোল বণিকসভা এবং ‘ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স’-এর কর্তারা জানান, দু’রাজ্যের মধ্যে দৈনিক কয়েকশো পণ্যবাহী লরি যাতায়াত করে। বৈধ কাগজ থাকা লরিগুলির বরাকরে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের বিক্রয়কর দফতরের অধীনস্থ ডুবুরডিহি চেকপোস্ট পেরিয়ে যাতায়াত করার কথা। কিন্তু বণিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, প্রতি দিন কয়েকশো পণ্যবাহী লরি ঘুরপথে বৈধ কোনও কাগজপত্র ছাড়ায় বরাকরের জি টি রোড ও রূপনারায়ণপুরের জামতাড়া রোড দিয়ে দু’রাজ্য যাতায়াত করছে। ফলে ভিন্ রাজ্যে পণ্য আমদানি ও রফতানি বাবদ যে রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা পড়া উচিত, তা পড়ছে না। |
বৈধ কাগজ ছাড়া কী ভাবে এই দুই প্রবেশপথ দিয়ে পণ্যবাহী লরি যাতায়াত করে, সে প্রসঙ্গে বিক্রয়কর দফতরের আসানসোল শাখার এক অফিসার জানান, বেশ কয়েক বছর আগে বিপজ্জনক বরাকর সেতু দিয়ে ভারী পণ্যবাহী লরি যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে ঝাড়খণ্ড সরকার। এর পরেই বরাকরের চেকপোস্টটি তুলে দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। একই ভাবে রুপনারায়ণপুরের জামতাড়া রোড দিয়েও ভারী লরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রূপনারায়ণপুর সীমান্তের চেকপোস্টটিও উঠে গিয়েছে। পরিবর্তে বর্তমানে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ডুবুরডিহি চেকপোস্ট পেরিয়ে ভারী পণ্যবাহী লরি দু’রাজ্যে যাতায়াত করছে। কিন্তু বিক্রয়কর দফতর সূত্রে জানা যায়, ঝাড়খণ্ডের চিরকুণ্ডা ও জামতাড়ায় লরি থেকে পণ্য নামিয়ে ছোট ছোট গাড়িতে চাপিয়ে এক দিকে বরাকর সেতু ও অন্য দিকে রূপনারায়ণপুর সীমান্ত পেরিয়ে এ রাজ্যে ঢুকছে। ঠিক একই পদ্ধতিতে এ রাজ্য থেকেও পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে চিরকুণ্ডা ও জামতাড়ায়। সেখান থেকে বড় লরিতে চাপিয়ে চলে যাচ্ছে গন্তব্যে।
আসানসোল বণিকসভার সভাপতি সুব্রত দত্তের দাবি, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি আটকাতে এই দুই প্রবেশপথে স্থায়ী নজরদারির ব্যবস্থা করা হোক। সৎ ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ও সরকারের রাজস্ব ক্ষতি বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার দাবি তুলেছেন সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতানও।
বিক্রয়কর দফতরের ওই অফিসার জানান, এর ফলে পাহারাহীন এই দুই প্রবেশপথে পণ্য আমদানি ও রফতানির ‘ওয়ে বিল’ ছাড়াই পণ্য যাতায়াত করছে। ফলে সরকারের ঘরে রাজস্বও জমা পড়ছে না। তাঁরা হিসেব করে দেখেছেন, এর জন্য প্রতি বছর প্রায় ১২০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি পড়ছে। বিভিন্ন বণিক সংগঠনগুলির কাছে অভিযোগ পাওয়ার পরে এই দুই প্রবেশপথে বিশেষ নজরদারি চালিয়ে জরিমানা বাবদ প্রায় ২৬ কোটি টাকা আয় হয়েছে বলেও ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি, বাজেয়াপ্ত হয়েছে ২৬ লরি কয়লা, ১৫ লরি ইস্পাত ও ৬ লরি বস্ত্র। ওই দফতরের তরফে জানানো হয়, দুই প্রবেশপথে কড়া নজরদারির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলার আবেদন করা হয়েছে। |