টিউশন নিতে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি বছর পনেরোর সগুফতা ইয়াসমিন। খোঁজ নিতে গিয়ে তার পরিবারের লোকেরা জানতে পারেন, আচমকা মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, এই খবর দিয়ে সগুফতাকে নিয়ে গিয়েছে তাঁদেরই কারখানার এক কর্মী। মেয়েটির বাবা কলিমুদ্দিনের অভিযোগ, প্রায় এক মাস আগে এই ঘটনা নিয়ে অভিযোগ জানালেও পুলিশি তদন্তে কোনও অগ্রগতি হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার, সিআইডি এবং রাজ্য মহিলা কমিশনকে চিঠিও দিয়েছেন সগুফতার অভিভাবকেরা।
কী হয়েছিল সে দিন?
কামারহাটির বালুতলাও এলাকার বাসিন্দা কলিমুদ্দিন জানান, সগুফতা ইয়াসমিন কামারহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। গত ১৬ জুলাই সন্ধে ৬টার সময় সে স্থানীয় একটি কোচিং সেন্টারে পড়তে গিয়েছিল।
|
সগুফতা ইয়াসমিন |
কিন্তু রাত ৯টার পরেও সে না ফেরায় কোচিং সেন্টারে খুঁজতে যান তাঁর অভিভাবকেরা। সেখানে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, একটি ছেলে এসে সগুফতাকে তাঁর মায়ের শরীর খারাপের খবর দেয়। তখনই ওই কিশোরী ছেলেটির সঙ্গে বেরিয়ে যায়। মেয়ের এক বান্ধবীর থেকে বর্ণনা শুনে কলিমুদ্দিন বুঝতে পারেন, ছেলেটি আর কেউ নয়, তাঁর পোশাক কারখানার কর্মী মহম্মদ শামসের।
সগুফতার বাবা জানান, শামসেরের বাড়ি বিহারের সমস্তিপুরে। অন্য দুই ভাইয়ের সঙ্গে তিনিও কারখানায় কাজ করতেন। ঘটনার দিন সন্ধে সাতটা নাগাদ সামশের কারখানা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। তার পর থেকে তাঁর কোনও খোঁজ মেলেনি। সগুফতার পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে, ওই রাতেই তাঁরা সামশেরের ভাইদের সঙ্গে নিয়ে সমস্তিপুরে যান। কিন্তু সেখানেও খোঁজ মেলেনি। সে দিনের পর থেকে সামশেরের পরিবারের লোকেরাও কলিমুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন।
সগুফতার পরিবার জানায়, নিজেরা খোঁজাখুঁজি করে না-পাওয়ার পর ২৮ জুলাই কামারহাটি ফাঁড়িতে এ বিষয়ে জেনারেল ডায়েরি করা হয়। ৪ অগস্ট তাঁরা কামারহাটি ফাঁড়িতে গিয়ে শামসেরের বিরুদ্ধে একটি অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন।
এর পর হঠাৎই ১১ অগস্ট সগুফতা বাড়িতে ফোন করে। কলিমুদ্দিন বলেন, “ফোনে সে কান্নাকাটি করছিল। কোথায় রয়েছে, জিজ্ঞাসা করতেই পাশ থেকে কেউ ফোন কেড়ে নিল। তার পরেই ফোনের লাইন কেটে দেওয়া হল।” এই বিষয়টিও পুলিশকে জানিয়েছেন তাঁরা। তার পরেও তদন্তের কাজ এগোয়নি বলে কলিমুদ্দিনের অভিযোগ।
কামারহাটি ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার অনুপম মণ্ডল অবশ্য বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরেই নাবালিকাকে অপহরণের মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্তও চালানো হচ্ছে।”
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার (বেলঘরিয়া) বিশ্বজিৎ ঘোষের বক্তব্য, “বিষয়টি সম্পর্কে জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” |