বাড়ির তেতলায় ছাদের ঘরে দাউদাউ আগুন জ্বলছে দেখে তখন চিৎকার করছে গোটা পাড়া। শুধু এক মহিলার তাপ-উত্তাপ নেই। ওই বাড়িরই একতলার ঘরে দরজা ভেজিয়ে তিনি চুপচাপ শুয়ে ছিলেন বলে পুলিশ জেনেছে।
শুক্রবার গভীর রাতে দমদম এলাকায় মাঠকলের সূর্যপল্লিতে আগুনে পুড়ে ওই মহিলার ভাসুর ও জা মারা যান। তাঁদের পুড়িয়ে মারার অভিযোগে ঝর্না শিকদার নামে ওই মহিলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মৃত দম্পতি গণেশ শিকদার (৬০) ও পুষ্প শিকদারের (৫৪) মেয়ে রিঙ্কির অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে ঝর্নাকে। তিনিই কেরোসিন ঢেলে ছাদের ঘরে আগুন লাগান বলে পুলিশের সন্দেহ। সেই ঘরের দরজায় বাইরে থেকে শিকল তোলা ছিল বলেও পুলিশের দাবি। ঘরের বাইরে মিলেছে কেরোসিনের কয়েকটি জ্যারিকেন। শনিবার আদালতে তোলা হলে ঝর্নাকে সাত দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক। |
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় সিংহ বলেন, “পারিবারিক অশান্তির জেরেই এই ঘটনা বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে।” কেন ‘অশান্তি’? এর জবাব খুঁজতে গিয়ে তদন্তকারীরা বাড়িটা প্রোমোটার-চক্রের হাতে তুলে দেওয়ার ‘অপচেষ্টা’র আভাস পেয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি বিক্রির জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিলেন ঝর্না। কিন্তু গণেশবাবু বেঁকে বসেছিলেন। ছ’কাঠা জমিতে ওই বাড়ির বাজারমূল্য এখন ৭০ লক্ষ টাকা। মালিকানা গণেশবাবু ও আরও চার ভাইয়ের নামে। তবে এই বাড়িটিতে সস্ত্রীক ও সকন্যা গণেশবাবু ছাড়া আর শুধু থাকতেন ঝর্নাদেবী ও তাঁর ১২ বছরের ছেলে। ঝর্নার স্বামী প্রদ্যোৎ শিকদার বিদেশে কর্মরত। পুলিশের সন্দেহ, বাড়ি বিক্রির ‘পথের কাঁটা’ ভাসুর-জা’কে সরিয়ে দিতেই ঝর্না তাঁদের পুড়িয়ে মারার ছক কষেন।
কী ভাবে? ওই রাতে সস্ত্রীক গণেশবাবু ছাদের ঘরে শুয়েছিলেন। দোতলার ঘরগুলো ছিল তালাবন্ধ। এমএ-র ছাত্রী রিঙ্কি একতলায় পড়ছিলেন। পুলিশের সন্দেহ, বাড়িতে আগুন লাগানোর মতলবেই ঝর্না তাঁর ছেলে প্রসেনজিৎকে ওই রাতে এক পরিচিতের বাড়িতে রেখে এসেছিলেন। রিঙ্কি জানান, আগুন লেগেছে টের পেয়ে প্রথমে কাকিমার কাছেই গিয়েছিলেন তিনি। রিঙ্কির অভিযোগ, “গিয়ে দেখি, কাকিমা বাইরে বেরোনোর শাড়ি পরেই ঘরে শুয়ে। কেঁদেকেটে কাকিমাকে ধরে ঝাঁকাতেও তিনি কিছু শুনলেন না।” ধোঁয়ায়-ঢাকা সিঁড়ি দিয়ে ঘণ্টা দেড়েক বাদে রিঙ্কি যখন প্রতিবেশীদের সাহায্যে ছাদের ঘরে পৌঁছন, তত ক্ষণে সব শেষ। মেঝেয় পড়ে মা-বাবার দগ্ধ দেহ। পোড়া বালিশ-বিছানা, জানলার শিক। শুধুমাত্র বাড়ির ওই ঘরটায় আগুনের তীব্রতা দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়।
একটু বাদে পিছনের দরজা দিয়ে ঝর্না বেরোনোর চেষ্টা করলে তাঁকে বাধা দেন প্রতিবেশীরাই। ঝর্না ব্লেড দিয়ে নিজের হাতের শিরা কাটার চেষ্টা করেছিলেন বলে পুলিশ জানায়। রাতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
রিঙ্কির অভিযোগ, “কাকিমা আমাকেও পুড়িয়ে মারার তালে ছিলেন। কেরোসিনের স্রোত আমার ঘরের দরজা পর্যন্ত গড়িয়ে এসেছিল।” বাড়ির সিঁড়ি, ছাদ সর্বত্র কেরোসিন ছড়ানো হয়েছিল বলে পুলিশ জেনেছে। আগুন দেখে পড়শিদের চিৎকারের সময়ে তিনি কাকিমার ঘরে দ্রুত দরজা ভেজানোর শব্দ পান বলেও রিঙ্কি পুলিশকে জানিয়েছেন। দমকল সূত্রের খবর, সিঁড়িতে দু’টি সিলিন্ডার রাখা ছিল। কোনও ভাবে তাতে আগুন ধরলে বিপদ আরও বাড়তে পারত। |