শহরের এক তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করল বর্ধমান থানার পুলিশ। শুক্রবার সকালে ম্যান্ডেলা পার্কে বসে থাকার সময়ে শিবশঙ্কর ঘোষ নামে ওই নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, অন্তত তিনটি মামলায় জড়িত ওই নেতাকে বেশ কিছু দিন ধরে খোঁজা হচ্ছিল। গ্রেফতারের পরে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ সেলে ভর্তি করা হয়।
শিবশঙ্করবাবুর দাদা পার্থসারথী ঘোষের দাবি, বর্ধমান থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ভাইকে এ দিন প্রকাশ্যে কলার ধরে মারতে মারতে জিপে তোলেন। থানায় নিয়ে গিয়েও দফায় দফায় মারধর করায় শিবশঙ্করবাবু অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। তবে আইসি দিলীপাবাবু এবং জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ দিন শিবশঙ্করবাবুকে গ্রেফতার করার সময়ে ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরেই টাউন হলে একটি সভা শেষ করে বেরোচ্ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। মন্ত্রী এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দাবি করেন, “আপাতত শহর শান্ত রয়েছে। সেটা বোধহয় পুলিশের একাংশের সহ্য হচ্ছে না। শিবশঙ্করকে গ্রেফতার তারই প্রমাণ।” |
পুলিশ সুপার অবশ্য জানান, ধৃতের বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় ২০১১-এর ৫ মে, ২০১২-এর ৪ এপ্রিল ও ২০১২-এর ৯ জুন তিনটি মামলা দায়ের হয়েছিল। আইসি জানান, এই তিনটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ, অনুপ্রবেশ, তফসিলি উপজাতির মানুষদের উপরে হামলার অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বছর বর্ধমান শহরে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে প্রকাশ্যে সংঘর্ষ বাধে। তাতে এক পক্ষের নেতা উত্তম সেনগুপ্তের অনুগামীদের সঙ্গে শিবশঙ্করবাবুর অনুগামীদের মারপিট বাধে। বর্ধমান শহর যুব তৃণমূল সভাপতি খোকন দাসের ঘনিষ্ঠ শিবশংকরবাবুকে পুলিশ গ্রেফতারও করে। তিনি সেই মামলায় জামিনে ছাড়া পান।
তবে শিবশঙ্করবাবুর বিরুদ্ধে গত ৯ জুন শেষ মামলাটি দায়ের হলেও এত দিন তাঁকে কেন ধরা হয়নি, বা শহরের অন্য বেশ কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে এর আগে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হলেও পুলিশ তাঁদের কেন গ্রেফতার করেনি, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ দিনের ঘটনার পরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতার দাবি, দলের একাংশকে মদত দিতেই শিবশঙ্করবাবুকে গ্রেফাতার করেছে পুলিশ। পুলিশ অবশ্য এ সব মানতে নারাজ। আইসি দিলীপবাবু বলেন, “ধৃতের খোঁজ চলছিল। আগে তাঁকে পাওয়া যায়নি।”
তৃণমূলের অন্যতম জেলা পর্যবেক্ষক অলোক দাস এ দিন শিবশঙ্করবাবুকে দেখতে হাসপাতালে যান। তিনি বলেন, “আমিও শুনেছি, ওঁকে পুলিশ প্রকাশ্যে মারতে মারতে জিপে তুলেছে। এই অভিযোগ সত্য হলে তা নিন্দনীয়।” হাসপাতাল সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, চিকিৎসকের কাছে দেওয়া বয়ানে শিবশঙ্করবাবু তাঁকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যাওয়া বা সেখানে মারধরের কোনও কথা জানাননি। অলোকবাবু বলেন, “জেলায় আমাদের দুই নেতা তথা মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় ও মলয় ঘটককে ঘটনার কথা জানিয়েছি। আশা করি, তাঁরাই পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।” |