গভীর রাতে মহিলা ওয়ার্ডে ঢুকে স্যালাইন-অক্সিজেন খুলে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগ উঠল স্বামীর বিরুদ্ধে।
শুক্রবার সকালে বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে এই অভিযোগ ওঠে। বধূর শ্বশুরবাড়িতে চড়াও হয় ক্ষিপ্ত জনতা। কিন্তু কী ভাবে এমন কাণ্ড ঘটল রাত পর্যন্ত স্বাস্থ্য-কর্তাদের কাছে কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি।
কাটোয়া থানার ওসি সনৎ দাস বলেন, “ওই বধূর নাম রাখি বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন বিকেলে তাঁর বাবা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জামাই তুহিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত শুরু হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।” তুহিন ছাড়াও খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে তাঁর দাদা তরুণ, বৌদি মৌসুমি ও তাঁর বাবা লালমোহন ঘোষ, হাসপাতালের চিকিৎসক জটাইকৃষ্ণ মণ্ডলের বিরুদ্ধে। তরুণ কাটোয়া আদালতের আইনজীবী, তাঁর স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা। তবে রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পূর্বস্থলীর ভাতুড়িয়া গ্রামের রাখির বিয়ে হয়েছিল কাটোয়া শহরের সাহেববাগান এলাকার তুহিনের সঙ্গে। তাঁদের বছর দেড়েকের একটি ছেলেও আছে। রাখির বাবার অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই পণের দাবিতে তাঁর মেয়ের উপরে অত্যাচার চালানো হত। সে কারণে প্রায়ই রাখি বাপের বাড়িতে চলে যেতেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ শ্বশুরবাড়ি থেকেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বুকে ব্যথা হচ্ছিল তাঁর। কিন্তু বাপের বাড়িতে খবর দেওয়া হয়নি।
যাদববাবুরা যখন খবর পান, তখন ‘দেরি’ হয়ে গিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, “আত্মীয়স্বজনের মুখে খবর পেয়ে সকালে হাসপাতালে যাই। গিয়ে শুনি, রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ তুহিন মহিলা ওয়ার্ডে ঢুকে মেয়ের স্যালাইন-অক্সিজেনের নল খুলে দেয়। তার পরে উপুড় করে হাত-পা বেঁধে রেখে দেয়। রাখির মৃত্যু নিশ্চিত করতেই সে এই কাণ্ড করেছে!” মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি, কাটোয়া শহরের হরগৌরীপাড়ার বাসিন্দা রেবা চন্দ্র এবং মঙ্গলকোটের বেলগ্রামের সরিফা বিবির কাছে এই ‘ঘটনা’ শুনেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি।
রাখির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সাহেববাগানে তুহিনদের বাড়িতে ইট-পাটকেল ছোড়েন এলাকার কিছু লোকজন। তাঁদের ক্ষোভ, তথাকথিত ‘শিক্ষিত’ পরিবার হওয়া সত্ত্বেও বাড়ির বৌয়ের উপরে অত্যাচার চালানো হত। কয়েকবার তাঁরা মীমাংসাও করে দিয়েছেন। বাড়িতে অবশ্য কেউ ছিল না। রাতে মহিলা ওয়ার্ডে বহিরাগত পুরুষ কী ভাবে ঢুকতে পারে, সেই প্রশ্নও উঠেছে। কেননা, হাসপাতালের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে প্রতিটি ওয়ার্ডের দরজায় প্রাক্তন সেনা জওয়ানদের পাহারা দেওয়ার কথা। ভিতরে একটি পুলিশ ক্যাম্পও রয়েছে।
কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “রাতে মহিলা ওয়ার্ডে এক জন পুরুষ ঢুকে পড়ল, এটাই তো ভয়ঙ্কর!” হাসপাতাল সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বর্তমানে ছুটিতে। তাঁর জায়গায় দায়িত্বে থাকা সন্দীপ পাড়ি বলেন, “আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। তবু আমরা তদন্ত করছি।” জটাইকৃষ্ণবাবুর অধীনে ভর্তি ছিলেন রাখি। মৃত্যুর পরে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ও তিনিই দেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে বা রাতে ওই ওয়ার্ডে থাকা অন্য কোনও ডাক্তার-নার্স-কর্মীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ মণ্ডলের কথায়, “খুবই আশ্চর্য লাগছে। তদন্ত করব।” |