তিন-তিন দফার কাউন্সেলিংয়ের পরেও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ১০ হাজার আসন ফাঁকা থেকে গিয়েছিল। সেই সব খালি আসনের অধিকাংশেই উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বরের ভিত্তিতে পড়ুয়া ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি বা বেসু-তে ফাঁকা আসনগুলি এ বছর ফাঁকাই থাকবে। আগামী বছর সেগুলিতে বরাবরের মতোই ‘ল্যাটারাল এন্ট্রি’ পদ্ধতিতে ছাত্র ভর্তি করা যাবে। সোমবার ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বছর তিন বারের কাউন্সেলিং সত্ত্বেও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে খালি থেকে যাওয়া ১০ হাজারেরও বেশি আসন কী ভাবে পূরণ হবে, তা নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল। অগ্রণী দুই বিশ্ববিদ্যালয় যাদবপুর ও বেসু-তেও বহু আসন ফাঁকা। রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, জয়েন্ট এবং এআইইইই-র মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মেধা-তালিকার ভিত্তিতে আসন না-ভরলে উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বরের বিচারে ছাত্র ভর্তি করতে হবে। কিন্তু এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে যাদবপুর ও বেসু। ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয় চেয়েছিল, ফের এক দফা কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করে শূন্য আসন পূরণ করা হোক। কিন্তু এই দাবি মানা সম্ভব নয় বলে জানায় সরকার।
এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে বৈঠকের পরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বরের ভিত্তিতে ছাত্র ভর্তির পরে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলিতে এখন ফাঁকা আসনের সংখ্যা মাত্র দুই। তিনি বলেন, “গোটা বিষয়টা পর্যালোচনা করে দেখা গেল যে, প্রতি বছরই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আসন ফাঁকা থাকে। আমরা শিক্ষার সর্বজনীনতা চাই ঠিকই। কিন্তু তার জন্য মানের সঙ্গে আপস করা ঠিক নয়।”
মন্ত্রী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ‘স্ট্যাটিউট’ বা বিধি পরিবর্তন করে ‘জেলেট’ (পলিটেকনিক অথবা বিএসসি পাশ করে যে-পরীক্ষা দিয়ে সরাসরি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হওয়া যায়)-এর মাধ্যমে প্রথম বর্ষেই ভর্তির ব্যাপারে এ দিন আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এই পদ্ধতিতে ছাত্র ভর্তি করতে সম্মত হয়েছে। তবে বিধি পরিবর্তনের আগে ফাঁকা আসনগুলিতে বরাবরের মতো জেলেটের মাধ্যমে দ্বিতীয় বর্ষে সরাসরি ছাত্র ভর্তি হবে।”
যাদবপুর ও বেসু-র উপাচার্যেরা পরে জানান, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন খালি হয়েছিল ভর্তি হওয়া কিছু পড়ুয়া অন্যত্র চলে যাওয়ায়। উচ্চ মাধ্যমিকের ফলের ভিত্তিতে ছাত্র নেওয়া হয়নি ঠিকই। তবে বিভিন্ন ‘কোটা’র পড়ুয়াদের ঠাঁই দেওয়ায় অনেক ফাঁকা আসনই ইতিমধ্যে ভর্তি হয়ে গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭০টি আসন ফাঁকা থাকলেও এখন খালি আসনের সংখ্যা বড়জোর ৭০ বলে তাঁদের দাবি। বেসু-র উপাচার্য অজয় রায় বলেন, “কেন্দ্রের নিয়মে কিছু আসন বিদেশি নাগরিক, সামরিক কর্মী, কাশ্মীরি নাগরিক এবং অন্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। সেই সব আসনে অনেক ছাত্রছাত্রীই ভর্তি হয়ে গিয়েছেন। তাই এখন শূন্য আসনের সংখ্যা অনেকটা কমে গিয়েছে।”
আগামী বছর থেকে শূন্য আসনের সংখ্যা যাতে গোড়া থেকেই কমানো যায়, সে-দিকে নজর দিতে চায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সেই জন্য পরীক্ষা পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শৌভিক ভট্টাচার্য। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, “গোটা দেশে, এমনকী বিভিন্ন আইআইটি-তেও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রচুর আসন ফাঁকা থাকে। এটা শুধু এ রাজ্যের সমস্যা নয়।” |