প্রবেশ-কর সংক্রান্ত আইনি বিবাদের নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের উপরে ওই কর আদায় স্থগিত করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। সোমবার তারা এ-ও জানিয়ে দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার যদি এর মধ্যে অন্য রাজ্য থেকে আনা পণ্যে প্রবেশ-কর নেয়, মামলার রায় বিরুদ্ধে গেলে সেই টাকা ফেরত দিতে হবে।
রাজ্যে আনা বিভিন্ন পণ্যের উপরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আরোপিত প্রবেশ-করের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে টাটা, ভারতী এয়ারটেল-সহ ডজনখানেক বড় শিল্পসংস্থা হাইকোর্টে মামলা করেছিল। বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে মামলা চলাকালীনই আবেদনকারীরা প্রবেশ-কর আদায়ের উপরে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ চেয়ে বসে বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে। তারই প্রেক্ষিতে আমদানিকৃত পণ্যে প্রবেশ-কর আদায়ে ডিভিশন বেঞ্চের এই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে অবশ্য এ দিন মূল মামলাটিরও শুনানি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার এক সময়ে প্রবেশ-কর বসিয়েছিল। পরে তারাই তা তুলে নেয়। আবার নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ছবিটা উল্টে গিয়েছে, কোষাগারে ‘সঙ্কটের’ পরিপ্রেক্ষিতে প্রবেশ-কর ফেরানোর নিদান দিয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। আর তা ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। কেন?
শিল্পসংস্থাগুলোর বক্তব্য: এক রাজ্যে উৎপাদিত পণ্য নানা রাজ্য পেরিয়ে অন্য রাজ্যে যায়। বিক্রয়-কর, উৎপাদন-কর দেওয়ার পরেও রাজ্যগুলোর প্রবেশ-কর মেটাতে হলে পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাবে। তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে, মার খাবে ব্যবসা। আবেদনকারীদের অভিযোগ, সংবিধান তাদের সারা দেশে অবাধ বাণিজ্যের যে অধিকার দিয়েছে, পণ্যে প্রবেশ-কর বসিয়ে তাতে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। শিল্পমহলের একাংশের মতে, প্রবেশ-করের সুবাদে রুগ্ণ হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস চাঙ্গা করার উদ্যোগেও বিঘ্ন ঘটছে। কারণ সংস্থাটি বাইরে থেকে যে ন্যাপথা নিয়ে আসে, তা প্রবেশ-করের আওতায়।
উল্লেখ্য, প্রবেশ-কর বিতর্কের অবসানে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ইতিমধ্যে ৯ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। এ নিয়ে আগেও বিভিন্ন সময়ে সুপ্রিম কোর্টে সাংবিধানিক স্পেশ্যাল বেঞ্চ বসেছে প্রথম বার তিন বিচারপতির বেঞ্চ, পরে পাঁচ বিচারপতি, শেষে সাত বিচারপতির বেঞ্চ। এবং সবগুলির রায়ই প্রবেশ-করের বিপক্ষে গিয়েছে। সাত বিচারপতির স্পেশ্যাল বেঞ্চের রায়ে বলা হয়েছিল, রাজ্য সরকার পণ্য থেকে পথ-কর জাতীয় কিছু আদায় করতে পারে বটে, তবে সে টাকা রাস্তা-সেতু ইত্যাদি পরিকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নের পিছনেই খরচ করতে হবে। অন্য কোনও খাতে নয়। |