পূর্বসিদ্ধান্ত মতোই ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক ও সভাপতি পদে ‘নতুন মুখ’ এলেন। সম্পাদক হলেন দিলীপ সাউ। সভাপতি হলেন চিন্ময় পাল। সর্বসম্মতিক্রমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে যুব নেতৃত্ব দাবি করলেও একাংশ প্রতিনিধির মধ্যে ‘ক্ষোভ’ রয়েছে। এই কমিটিতে জঙ্গলমহল এলাকাকে সে ভাবে ‘গুরুত্ব’ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এ দিকে, নতুন সম্পাদক শিক্ষকতা করেন। এ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। সর্বক্ষণের কর্মীকে সম্পাদক করা হলে ভাল হত বলে মত অনেকেরই।
শনিবার থেকে মেদিনীপুরে শুরু হয়েছিল ডিওয়াইএফের ১৭তম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন। সোমবার নতুন জেলা কমিটি গঠিত হয়। এ বার জেলা কমিটির সদস্য সংখ্যা ৯১ হবে। আগে ছিল ৯৩। এ দিন অবশ্য জেলা কমিটির সদস্য হিসেবে ৮৯ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কাজের নিরিখে পরে দু’জনকে সদস্য করা হবে। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা আগের মতোই ১৮ থাকছে। নতুন সম্পাদক দিলীপ বলেন, “প্রতিকূলতা থাকবে। তবে আন্দোলন কখনও থেমে থাকবে না। যুবসমাজের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করব।” |
আগে ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক ছিলেন কমল পলমল। সভাপতি ছিলেন জয়ন্ত কয়োড়ী। কমল সিপিএমের খড়্গপুর গ্রামীণ-১ নম্বর জোনাল কমিটির সম্পাদক পদে রয়েছেন। অন্য দিকে, জয়ন্ত রাজনৈতিক ‘অস্থিরতার’ জেরে ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে পড়েছেন। প্রায় এক বছর ধরে তিনি সংগঠনের কাজকর্ম করতে পারছেন না। কে ওই দুই পদে বসবেন, তা নিয়ে গত ক’দিন ধরেই সংগঠনের অন্দরে নানা জল্পনা চলতে থাকে। গত শুক্রবার সিপিএমের যুব-ছাত্র সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির এক বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সভাপতি-সম্পাদক পদে ‘নতুন মুখ’ তুলে আনা হবে। সেখানে চিন্ময় পাল, মহসিস মাহাতো, প্রশান্ত ঘোষ, কুন্দন গোপ, দিলীপ সাউদের নাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। শনিবার সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকেও বিষয়টি ওঠে। শেষমেশ সোমবার সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে যথাক্রমে দিলীপ সাউ ও চিন্ময় পালের নাম ঘোষণা করা হয়। ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ এলাকার মহসিসকে এ বার সম্পাদক বা সভাপতির পদে বসানোর দাবি উঠেছিল। প্রাক্তন এক যুব নেতার আপত্তিতে তা না হওয়ায় জঙ্গলমহল এলাকার প্রতিনিধিদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তবে মহসিসকে এ বার রাজ্য কমিটির সদস্য করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। আপাতত মহসিস, প্রশান্ত, কুন্দনকে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে।
নতুন কমিটিতে এক ঝাঁক ‘নতুন মুখ’ আনা হয়েছে। এঁদের অনেকেই এক সময় ‘সক্রিয়’ ভাবে এসএফআই করতেন। এসএফআইয়ের জেলা কমিটির বিভিন্ন পদেও ছিলেন। এ বার জেলা কমিটির সদস্য হিসেবে যে ৮৯ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে ৫৭ জনই নতুন। বাকি ৩২ জন পুরনো। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে যে ১৮ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে ১৪ জনই নতুন। ৪ জন পুরনো। কেন আগের কমিটির অধিকাংশ সদস্য নতুন কমিটিতে নেই? দীপক-পুত্র সুদীপ্ত বলেন, “বয়সের কারণেই অধিকাংশ সদস্যকে নতুন কমিটিতে রাখা হয়নি।” প্রসঙ্গত, ৪০ বছরের উধ্বের্র্ কেউ সিপিএমের যুব সংগঠনে থাকতে পারেন না।
যুবতী, সংখ্যালঘু যুবদের সংগঠিত করার প্রশ্নে জেলা নেতৃত্বের ‘ত্রুটি’ থেকে গিয়েছে বলে সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন একাংশ প্রতিনিধি। সমলোচনার মুখে পড়ে নেতৃত্বও মানেন, যুবতীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বোঝাপড়াকে বাস্তবায়িত করার জন্য আরও উদ্যোগী হতে হবে। সংখ্যালঘুদের সংগঠিত করার জন্য বাড়তি পরিকল্পনা নিতে হবে। বিদায়ী জেলা সম্পাদক কমল বলেন, “কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল। সম্মেলনে সবই আলোচনা হয়েছে। নতুন করে অনেকেই সংগঠনে আসছেন। কঠিন পরিস্থিতিতেও আন্দোলন কখনও থেমে থাকবে না। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।” |