ঠিকাদারের গড়িমসিতে থমকে চৈতন্যপুর-কুকড়াহাটি রাজ্য সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ। রাস্তার দু’পাশে যথেচ্ছ খোঁড়াখুঁড়ি করার পরে বর্ষা আসতেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন ঠিকাদার। ফলে দুর্ভোগের অন্ত নেই এলাকাবাসীর। খানাখন্দে পড়ে দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রায়শ।
সামনে জমজমাট উৎসবের মরসুম। তারপরেই আসছে পঞ্চায়েত ভোট। তাই ২০০৮ সাল থেকে দখলে থাকা পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পরিষদে এ বারও ক্ষমতা ধরে রাখতে নানা প্রকল্প নিয়েছে তৃণমূল। হলদিয়া মহকুমার সুতাহাটা ব্লকের কুকড়াহাটিকে ঢেলে সাজতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। হলদিয়া থেকে কলকাতা যাতায়াতের সুবিধার্থে কুকড়াহাটি থেকে রায়চক সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন রাজ্যের পর্যটন ও পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার। এ ছাড়াও নদী ঘিরে পার্ক ও অন্যান্য পরিকল্পনা রয়েছে। কুকড়াহাটিতে সিইএসসি-র তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য পাম্পিং স্টেশন তৈরির কাজও চলছে। কিন্তু চৈতন্যপুর থেকে কুকড়াহাটি যাওয়ার একমাত্র রাজ্য সড়কটি দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল। দিনে প্রায় ৫০টি বাস চলে এই রাস্তা দিয়ে। অথচ সাড়ে ছ’কিমির এই রাস্তা পুরোটাই খানাখন্দে ভরা। এমনকী গত পাঁচ বছরে একবারও সংস্কার হয়েছে কি না বলতে পারছেন না স্থানীয়রা। |
এই পরিস্থিতিতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে জেলা পূর্ত ও পরিবহন স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই রাস্তা সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মার্চে রাজ্য পূর্ত দফতর ৪ কোটি টাকা ব্যায় করে এই রাস্তা প্রশস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি রামপুরে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গার পরিকল্পনাও করা হয়। কাজের বরাত পান স্থানীয় ঠিকাদার নির্মল দাস। মাস চারেক আগে কাজ শুরু হতেই ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা রাস্তার দু’পাশ খুঁড়তে শুরু করেন। আর তাতেই সমস্যা বাড়তে থাকে। বিপাকে পড়েন রামপুর কলেজ, বিবেকানন্দ মিশন, চক্ষু হাসপাতাল, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক, স্কুল, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কলকাতায় নিত্য যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যথাযথ গতিতে কাজ হচ্ছে না। কাজে গড়িমসি করছেন ঠিকাকর্মীরা। তাঁরা জানান, রাস্তার দু’পাশে গর্ত থাকায় বাসগুলি একদিকে হেলে বিপজ্জনকভাবে যাতায়াত করছে। আবার রাস্তায় পাশাপাশি দুটো বাস এসে গেলেই যানজট তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া রাস্তার খানাখন্দে সাইকেল, মোটর সাইকেল পড়ে প্রায়শই দুর্ঘটনা হচ্ছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। কুকড়াহাটির বাসিন্দা সঞ্জয় জানা বলেন, “আগে রাস্তার সংস্কার না হওয়ায় যাতায়াত মুশকিল ছিল আর এখন সংস্কার শুরু হওয়াতেও প্রাণ হাতে করে যাতায়াত করতে হচ্ছে।”
সমস্যার কথা স্বীকার করছে স্থানীয় পঞ্চায়েতও। কিন্তু কিছুই করার নেই বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য আনন্দময় অধিকারীর দাবি, তিনিই উদ্যোগী হয়ে পূর্ত দফতরে দরবার করে এই রাস্তা সংস্কারের বিল পাশ করিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পূর্ত দফতরের গড়িমসিতে সমস্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, “এলাকাবাসীর দাবি মেনে রাস্তা সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছিলাম। কিন্তু পূর্ত দফতর ও ঠিকাদারের গাফিলতিতে পুরো কাজটাই পিছিয়ে যাচ্ছে।” পূর্ত দফতর অবশ্য পুরো দায়ভারই চাপিয়ে দিচ্ছে ঠিকাদারের উপর। পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শশাঙ্ক দাস বলেন, “কাজ করব বলেই তো ঠিকাদারকে বরাত দিয়েছি। কিন্তু ওই ঠিকাদার কাজ না করে বর্ষা আসতেই পালিয়েছে। আমরা ওঁকে বাদ দিয়ে অন্য ঠিকাদার নিয়োগ করব। তবে একটু সময় লাগবে।” |