ভারতের অলিম্পিক ইতিহাসে লন্ডন ২০১২ সফলতম। ৬টি পদক।
কিন্তু তার মধ্যেই তাড়া করছে হাফডজন বিতর্কও!
বিদায় লন্ডন। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভারতের পতাকাবাহক মেরি কম।
তিরন্দাজিতে ‘লর্ডসগেট’
ধরা হচ্ছিল, গোটা দু’য়েক পদক অন্তত আসবে। লন্ডন থেকে শূন্য হাতে তিরন্দাজরা ফেরার পরই শুরু হয়ে গিয়েছে গণ্ডগোল। এক দিকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে কোচ লিম্বা রামকে, অন্য দিকে বেরিয়ে আসছে টিমের মধ্যে গণ্ডগোলের ছবি। সহারা কর্ণধার সুব্রত রায় এ দিন দীপিকা কুমারির ব্যর্থতার জন্য সরাসরি দায়ী করেছেন তিরন্দাজ কোচ এবং ফেডারেশন কর্তাদের। সুব্রত রায় বলেছেন, “লর্ডসের মাঠে হাওয়া খুব বাঁক খায়। এই ব্যাপারটা কোচেরা দীপিকাকে জানায়নি।” কোচ লিম্বার সঙ্গে দলের সদস্যদের সম্পর্কও খুব খারাপ হয়ে পড়েছিল বলে জানা গেছে। লিম্বার সঙ্গে অবশ্য তিরন্দাজি ফেডারেশন আর চুক্তি বাড়ায়নি।
জলসার রোশনাই অলিম্পিক স্টেডিয়ামে।
মার্চপাস্টে বিপত্তি
কী করে একজন অপরিচিত মহিলা ভারতীয় টিমের মার্চপাস্টে ঢুকে পড়লেন, তা নিয়ে তীব্র চাপান-উতোর বেঁধে গিয়েছিল ভারতীয় টিম আর অলিম্পিক সংগঠকদের মধ্যে। ভারতীয় টিমের শেফ দ্য মিশন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষেই অভিযোগ করেছিলেন, নিরাপত্তা ভঙ্গ হয়েছে। পরে সংগঠকদের তরফেও ভারতের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া হয়। তাতে অবশ্য ভারতের ক্ষোভ কমেনি। শেষ পর্যন্ত ওই মহিলা, মধুরা নগেন্দ্র বেঙ্গালুরুতে ফিরে ক্ষমা চেয়ে নেন। বলেন, “আমি দেশবাসী এবং ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি তাঁদের আবেগে আঘাত দেওয়ার জন্য।” আপাতত যা পরিস্থিতি, মধুরা ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার পর ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থা এই নিয়ে আর জলঘোলা করতে চায় না।
পোডিয়ামে নয় আদালতে
পদক তো হলই না, ভারতীয় বক্সারকে নিয়ে বিতর্ক গড়াল খেলাধুলার সর্বোচ্চ আদালতে। বক্সার বিকাশ কৃষ্ণকে রেফারি জিতিয়ে দেওয়ার পরেও জুরি হারিয়ে দিয়েছিল। ভারতীয় টিম এই নিয়ে ছুটেছিল লুসানের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত। সেখানে ভারতের আবেদন খারিজ হয়ে গেলেও বিজেন্দ্র সিংহ এখনও মনে করেন, ভারত অবিচারের শিকার। তিনি বলেন, “বিকাশ অবশ্যই লড়াইটা জিতেছিল। শুধু বিকাশ কেন, আমাদের দু’তিনজন বক্সার অবিচারের শিকার হয়েছে। রেফারিরা ঠিকঠাক পয়েন্ট দিলে খেলার ফলই অন্য রকম হয়ে যেত।”
ভিলেজেও লি-হেশ তরজা
লিয়েন্ডার পেজকে পার্টনার নিয়ে অলিম্পিকে খেলতে না চেয়ে ভূপতি-বোপান্নার দেশে করা বিদ্রোহের আগুন ধিকিধিকি লন্ডনেও জ্বলেছে। ভারতীয় টেনিস দলের ঘনিষ্ঠ একজন জানাচ্ছেন, গেমস ভিলেজ থেকে স্টেডিয়ামের (উইম্বলডন) দূরত্ব দু’ঘণ্টারও বেশি হওয়ায় লিয়েন্ডার আগেই আইওএ-র অনুমতি নিয়ে মাঠের কাছাকাছি হোটেলে থাকতেন। সেটা দেখাদেখি ভূপতিও পার্টনারকে নিয়ে স্টেডিয়ামের কাছে অন্য হোটেলে ওঠেন। অথচ লিয়েন্ডার লন্ডনে পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত তাঁরা গেমস ভিলেজ থেকেই দিব্যি উইম্বলডনে প্র্যাক্টিস করতে গিয়েছেন। মাঠে লি-হেশ এক-দু’বার মুখোমুখি হলেও একটাও কথা হয়নি। এমনকী লিয়েন্ডারের সঙ্গে প্রথম দিন প্র্যাক্টিসে নামার সময় সানিয়াও আড়ষ্ট ছিলেন। খেলার সময়টুকু বাদে লিয়েন্ডার-সানিয়াতেও বেশি কথা হয়নি লন্ডনে।
হকিতে হাহাকার
বিশ্ব হকির র্যাঙ্কিংয়ে ভারত অলিম্পিকের আগে ১০-এ ছিল। ফলে ভরত ছেত্রীদের লন্ডনে পদক জেতার সম্ভাবনা যে ছিল না সেটাই রূঢ় বাস্তব। কিন্তু তা বলে ১২ দেশের মধ্যে ১২ হওয়াটাও আট বারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নের কাছে অবিশ্বাস্য! দেশের হকিমহলে তো বটেই, লন্ডনে অশীতিপর ভারতীয় হকি-কিংবদন্তি বলবীর সিংহের গলাতেও হাহাকার। হকি ইন্ডিয়া বিপর্যয় নিয়ে তদন্ত কমিটি বসিয়ে স্বদিচ্ছার পরিচয় রেখেছে। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভিজছে না। অধিনায়ক ভরতের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যে গোলকিপার গোটা টুর্নামেন্টে দেড়টার বেশি ম্যাচে প্রথম এগারোয় সুযোগ পাননি, সেই নেতা দলকে কতটা উদ্বুদ্ধ করতে পারেন তা নিয়ে বিতর্ক বেঁধেছে। লন্ডনে ১৯৪৮ অলিম্পিকে স্বাধীন ভারতের প্রথম হকি সোনা জয়ের নায়ক বলবীর ২০১২-এ সেই শহরেই ভরতদের বিপর্যয় দেখে বলেছেন, “আমাদের সব গর্ব ধুলোয় গড়াগড়ি খেল। এটা স্বচক্ষে দেখাটা আরওই বেদনাদায়ক।”
ঘোলাজলে মাছ ধরার চেষ্টা
অলিম্পিক ইতিহাসে প্রথম ম্যাচ গড়াপেটার ধাক্কায় আট জন মেয়ে প্লেয়ারের সাসপেনশন আর তাঁদের প্রতিপক্ষদের ম্যাচ দিয়ে দেওয়া দেখে সংগঠকদের কাছে ভারতীয় জুটি জ্বালা গাট্টা-অশ্বিনী পোনাপ্পাও দাবি জানিয়েছিলেন, তাঁদের ম্যাচেও অন্য রকম গন্ধ থাকতে পারে। তদন্ত করা হোক। কিন্তু তদন্তে কিছু ধরা না পড়ায় জ্বালাদের আর পরের রাউন্ডে ওঠা হয়নি। তবে ভারতের ব্যাডমিন্টন সুন্দরী তাতে মুষড়ে না পড়ে বলেন, “টাকার খেলা আছে এর পিছনে।”
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website
may be copied or reproduced without permission.