‘উই উইল উই উইল রক ইউ!’
তালির তালে তালে ঝাঁকাচ্ছেন মাথা। উজ্জ্বল হলুদ জামায় আচমকা তাঁকে দেখে মুহূর্তের জন্য চমকে উঠেছিল রবিবার রাতের অলিম্পিক স্টেডিয়াম। কিন্তু ফ্রেডি মারকারি যে ততক্ষণে চারটে বিশাল স্ক্রিন থেকে নিজের বিখ্যাত হাসি-সহযোগে গলা মেলাতে বলছেন তাঁর সঙ্গে! সেই ডাকে সাড়া দিয়ে গোটা স্টেডিয়াম গাইল, ‘উই উইল উই উইল রক ইউ!’
সত্তরের দশকের ব্রিটিশ রক ব্যান্ড ‘কুইন’-এর ভারতীয় বংশোদ্ভূত গায়ক ১৯৯১ সালে মারা গিয়েছেন। কিন্তু লন্ডন অলিম্পিকের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ফিল্ম ফুটেজের সাহায্যে ফ্রেডি ফের জীবন্ত হয়ে উঠলেন কিম গেভিনের শিল্প কল্পনায়। অলিম্পিক মহোৎসবের সমাপ্তির রাতে দর্শকদের জন্য ছিল এমনই নানা চমক। গান, নাচ আর আতসবাজির রোশনাইয়ে মাতিয়ে ব্যাটন রিও-র হাতে তুলে দিল লন্ডন। ব্রিটিশ পপের সুর-তাল মিশে গেল সাম্বার ছন্দে। চার বছর পরে বিশ্ববাসীকে ব্রাজিলে আমন্ত্রণ জানাতে স্টেজে এলেন স্বয়ং পেলে। রবিবারের সমাপ্তি অনুষ্ঠান ছিল ব্রিটিশ রক ও পপ সঙ্গীতের বিশ্বজয়ের বৃত্তান্ত। ‘এ সিমফনি অব ব্রিটিশ মিউজিক’ নাম ছিল অনুষ্ঠানের। খবরের কাগজে মোড়া বিগ বেন-সহ লন্ডনের বিখ্যাত সব ল্যান্ডমার্কের প্রতিকৃতি স্টেডিয়ামে বিছিয়ে তৈরি হয়েছিল ইউনিয়ন জ্যাক। তার উপরে অভিনব পরিকল্পনায় ক্রমশ বদলে চলা মঞ্চে পিঙ্ক ফ্লয়েড, বিটলস, জর্জ মাইকেল থেকে শুরু করে স্পাইস গালর্স, ঢোলের তালে ভাঙড়াকী হল না! এরই মাঝে স্টেডিয়ামে ঢুকলেন অ্যাথলিটরা। ভারতের পতাকা বয়ে আনলেন ব্রোঞ্জজয়ী এম সি মেরি কম। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট জাক রগে পদক পরিয়ে দিলেন ম্যারাথন বিজয়ীদের।
ইতিহাসের পাতায় চলে গেল লন্ডন গেমস। ফেল্পসের শেষ অলিম্পিক, বোল্টের কিংবদন্তি হয়ে ওঠা, মেয়েদের বক্সিং, সৌদি মেয়েদের প্রতিযোগিতায় নামালন্ডন গেমস ঐতিহাসিক স্মৃতি তৈরি করল অনেক। খালি শেষ দিনে ডোপের কালো ছায়া এড়ানো গেল না। ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়ায় মেয়েদের শটপাটে বেলারুশের নাদেঝদা অস্টাপচুকের সোনা কেড়ে নেওয়া হল। উদ্বোধনের দিন, যোগদানকারী প্রত্যেক দেশের নাম লেখা পাপড়ি সাজিয়ে তৈরি হয়েছিল ফুলের আকৃতির অলিম্পিক মশাল। রবিবার অগুন নেভার পরে প্রতিটা পাপড়ি স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে তুলে দেওয়া হল দেশগুলির হাতে। “ইন্সপায়ার এ জেনারেশন”, নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করএই ছিল লন্ডন গেমসের বার্তা। পাপড়ির সঙ্গে সেটাই ছড়িয়ে দেওয়া হল বিশ্বজুড়ে। |