|
|
|
|
ছাত্র-সংঘর্ষে উত্তপ্ত শ্রীরামপুর কলেজ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শ্রীরামপুর |
ছাত্র পরিষদ (সিপি) এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) সমর্থকদের মধ্যে মারপিটের জেরে সোমবার উত্তেজনা ছড়ায় শ্রীরামপুর কলেজে। টিএমসিপি-র এক নেত্রী এবং সিপি-র এক নেতাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। তৃণমূলের একাধিক কাউন্সিলর এবং নেতা কলেজে ঢুকে সিপি-র ছেলেদের মারধর করেন বলে অভিযোগ। গোটা বিষয়টি থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে।
এসডিপিও (শ্রীরামপুর) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় সন্ধ্যায় বলেন, “আপাতত এক ছাত্রীর অভিযোগ পুলিশ পেয়েছে। অভিযুক্তেরা কোনও দলের সমর্থক বলে অভিযোগপত্রে লেখা নেই। অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত করে পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।”
দীর্ঘদিন বাদে শ্রীরামপুর কলেজে এসএফআই-কে হারিয়ে ছাত্র সংসদের ক্ষমতা দখল করে টিএমসিপি-সিপি জোট। কিন্তু এর কিছু দিন পর থেকেই সেখানে দুই ছাত্র সংগঠনের মধ্যে বনিবনা নেই। টিএমসিপি-র অভিযোগ, এ দিন বিকেলে সিপি সমর্থক কয়েকজন ছাত্র ‘তারস্বরে’ গান করায় টিএমসিপি-র নেত্রী প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল নিষেধ করেন। সে সময়ে প্রিয়াঙ্কাকে সিপি-র ছেলেরা চড় মারেন বলে অভিযোগ। এর পরেই দু’পক্ষের ছেলেদের মধ্যে মারামারি বেঁধে যায়। খবর যায় শ্রীরামপুর থানায়। আইসি তথাগত পাণ্ডে বাহিনী নিয়ে ছুটে আসেন। প্রিয়াঙ্কাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহত ওই ছাত্রীই পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছে ছাত্র পরিষদ। তাদের অভিযোগ, যে ছাত্রের গান গাওয়া নিয়ে গোলমাল, তিনি সিপি-র কেউ নন। সিপি-র ছেলেদের ‘নিশানা’ করতেই টিএমসিপি-র ছেলেরা মিথ্যা অভিযোগ তুলে ‘তুলকালাম’ বাধায়। সিপি-র দাবি, হাতাহাতি চলাকালীন তৃণমূলের কাউন্সিলর-সহ বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতা ও এক নেত্রী কলেজে ঢুকে সিপি-র ছেলেদের গায়ে হাত তোলেন। অমৃশ গিরি নামে এক সিপি নেতাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, কলেজে দলের ছাত্র সংগঠন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার। গত কয়েক দিন ধরেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে আকচা-আকচি চলছে। গোলমাল থামাতে তৃণমূল নেতৃত্বকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এ দিনও ওই কলেজে দলের ছাত্র নেতাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিতে এবং ১৫ অগস্টের অনুষ্ঠান যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়, তা নিয়ে তৃণমূল নেতারা আলোচনায় বসেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ দিন সিপি-র সঙ্গে গোলমালের সময় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর ছেলেরাও নিজেদের মধ্যে মারপিটে জড়িয়ে পড়েন। ছাত্রনেতাদের মধ্যে বিভাজনের বিষয়টি তৃণমূল নেতারাও অস্বীকার করেননি। তবে, নিজেদের মধ্যে মারপিট বিষয়টি তাঁরা মানতে চাননি।
গোটা বিষয়টি নিয়ে কলেজে চাপান-উতোর চলছে। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দিলীপ নাথের বক্তব্য, “ছাত্রদের মধ্যে গোলমাল হতেই পারে। কিন্তু শ্রীরামপুরের তৃণমূল কাউন্সিলর উত্তম রায়, দলের নেতা সুদীপ মুখোপাধ্যায়-সহ আরও কয়েক জন বাইরে থেকে গিয়ে যে ভাবে আমাদের ছেলেদের উপর চড়াও হন, তা অত্যন্ত লজ্জার। পুলিশকে আমরা সব জানিয়েছি। শ্রীরামপুর কলেজের ঐতিহ্য নষ্ট করছে তৃণমূলের সংস্কৃতি।” শ্রীরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায় বলেন, “আমাদের কোনও নেতা যদি কলেজে ঢুকে মারপিটে অংশ নেন, তবে তা ঠিক হয়নি। ঘটনা সম্পর্কে সবিস্তারে খোঁজ নিচ্ছি।”
ছাত্রদের একাংশের অভিযোগ, ছাত্র সংগঠন নিয়ে শ্রীরামপুর কলেজে উত্তরোত্তর গণ্ডগোল যে ভাবে মাথাচারা দিচ্ছে, তাতে পড়াশোনার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। যে সমস্ত ছাত্র এই সব রাজনৈতিক কাজকর্মের চৌহদ্দির বাইরে অবস্থান করেন, তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। ছাত্রদের এই মনোভাবের কথা শিক্ষকেরাও ঘনিষ্ঠমহলে মেনে নিচ্ছেন। |
|
|
|
|
|