খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি থেকে শুরু করে জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র গঠন স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় রাজনৈতিক ভাবে স্পর্শকাতর এই সব বিষয় এড়িয়ে যেতে পারেন মনমোহন সিংহ। সাউথ ব্লকে নিজের দফতরে বসে সেই বক্তৃতার খসড়া আজ চূড়ান্ত করেন তিনি। এ দিন সকালেই মনমোহনের সেই ছবি ‘টুইটারে’ দিয়েছে তাঁর সচিবালয়।
কিন্তু কী থাকবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায়? তাঁর সচিবালয় সূত্রের খবর, গোড়ায় স্থির হয়েছিল, আর্থিক প্রসঙ্গে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির মতো বিষয়ে সরকারের আগ্রহের কথা তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতার কথা ভেবেই শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসতে পারেন তিনি। কেননা, এই ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুলায়ম সিংহদের এখনও আপত্তি রয়েছে। এ বিষয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক সম্মতি গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছিল সরকার। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি।
একই ভাবে জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র গঠন নিয়ে আরও আলোচনার আশ্বাস দিয়ে রেখেছে কেন্দ্র। ফলে প্রধানমন্ত্রী ১৫ আগস্টের বক্তৃতায় এই বিষয়গুলি টেনে এনে জোট-সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি করতে চাইবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও দিগ্বিজয় সিংহ, আনন্দ শর্মার মতো কংগ্রেসের কিছু নেতা ও মন্ত্রী মনে করেন, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের মেয়াদের আর দেড় বছর বাকি। তাই সরকারের ‘দৃঢ়প্রত্যয়ী অবস্থান’ জানানোর এটাই সময়। তা ছাড়া মমতা-মুলায়ম না চাইলেও কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যগুলি খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির দাবি জানাচ্ছে। একই ভাবে তারা জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র গঠনেরও পক্ষে। ফলে দিগ্বিজয়দের প্রশ্ন, কেবল মাত্র এক-দু’টি রাজ্যের আপত্তিতে বাকি রাজ্যগুলিকে তাদের আকাঙ্ক্ষাপূরণ থেকে বঞ্চিত করা হবে কেন?
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, গত বারের মতোই মনমোহনের এ বারের বক্তৃতাতেও দুর্নীতি দমন করে প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনার উল্লেখ থাকবে। কালো টাকা উদ্ধার ও সেই সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেন কঠোর হাতে দমনের কথা বলা হবে। অণ্ণা হজারে, রামদেবের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে যা রাজনৈতিক ভাবেও জরুরি সরকারের পক্ষে। তবে বক্তৃতার মুখ্য বিষয় হবে আর্থিক সঙ্কট থেকে দেশকে বের করে আনার লক্ষ্যে বৃদ্ধির দিশা দেখানো। এবং সেটা করতে গিয়েই সরকার যে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সচেষ্ট রয়েছে এবং আরও তৎপর হবে, সেই বার্তা দিতে চাইবেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এই ক্ষেত্রেও জোট-সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে সম্ভবত যথাসম্ভব সতর্ক থাকতে হবে তাঁকে। খুচরোয় লগ্নির প্রসঙ্গ এড়িয়ে তিনি বরং পরিকাঠামো উন্নয়নে আরও দেশি-বিদেশি লগ্নি টানা ও তার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কথা বলতে পারেন।
আর্থিক প্রসঙ্গের পাশাপাশি সামাজিক প্রকল্প রূপায়ণে সরকারের অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী। এই ক্ষেত্রে নতুন কিছু প্রকল্পের ঘোষণা করা হতে পারে। তা ছাড়া সংসদে খাদ্য-সুরক্ষা বিল পাশ করে তার দ্রুত প্রণয়নের আশ্বাস দিতে পারেন মনমোহন। দারিদ্রসীমার নীচের মানুষকে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে।
|