রাস্তা নয়, আকাশপথেই চলে যাওয়া যাবে শিল্পতালুকের বিভিন্ন দিকে। জমির অভাবে বিধাননগরের পাঁচ নম্বর সেক্টরে এ ভাবেই নতুন রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। পোশাকি নাম, ‘স্কাইওয়ে’ বা আকাশপথ। ভাবা হয়েছে, পার্কোম্যাটে গাড়ি রাখার পরে কনভেয়ার বেল্টের মতো সচল ওই রাস্তা পৌঁছে দেবে শিল্পতালুকের গুরুত্বপূর্ণ নানা জায়গায়। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এসে যানজট সমস্যার সমাধানে এমন একটি উপায়ের কথা বলেছিলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। রাজ্য সরকারের এমন ইচ্ছাকেই বাস্তব রূপ দিতে এই পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে দায়িত্বে থাকা সংস্থা ‘নবদিগন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটি’ সূত্রে খবর। তবে পুরো বিষয়টিই এখন স্রেফ চিন্তভাবনার স্তরে। চলছে নকশা তৈরির কাজ। তবে, এই পরিকল্পনা আদৌ কতটা কার্যকর করা যাবে, তা খতিয়ে দেখবেন ইঞ্জিনিয়ারেরা।
পাঁচ নম্বর সেক্টরে যানজট কাটাতে ইতিমধ্যেই পার্কোম্যাট বা রিং-রোড তৈরির পরিকল্পনা কার্যকর করতে শুরু করেছে নবদিগন্ত। কিন্তু একাধিক পার্কিং লট গড়েই দায় এড়াতে রাজি নয় তারা। তার পরেই মন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী পার্কোম্যাট থেকে সরাসরি অফিস যেতে আকাশপথের এই পরিকল্পনা।
৪৩২ একরের পাঁচ নম্বর সেক্টরে রাস্তা মাত্র ১৭ কিলোমিটার। অথচ, গাড়ির চাপ বেড়েই চলেছে। যানজটে নাভিশ্বাস ওঠে। দায়িত্ব নিয়েই নবদিগন্তের নতুন বোর্ড সমস্যার উৎস জানতে সমীক্ষা চালায়। পরে সিদ্ধান্ত হয়, এক নয়, একাধিক উন্নত মানের পার্কোম্যাট তৈরি করা হবে। রাজ্য সরকারের কাছে জমি চেয়ে আবেদনও করা হয়।
আবেদনে সাড়া দিয়ে নগরোন্নয়ন দফতর শিল্পতালুকের এ কিউ ১১ নম্বর প্লটে এক একর জায়গা দেয়। সেখানে প্রায় ১৭০টি গাড়ি একত্রে রাখা যাবে। পরে বহুতল পার্কিং ব্যবস্থাও হবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, শিল্পতালুকের এক প্রান্তে মুন্সির ভেড়ির ধার বরাবর একটি রিং-রোড তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ফাঁকা জমি থাকলে সেখানেই পার্কিং লট হবে। পাশাপাশি, স্টেট গ্যারাজের পাঁচ একর জায়গায় বহুতল পার্কিং প্লাজা হবে। নবদিগন্তের চেয়ারম্যান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে একাধিক পার্কিং লটের প্রয়োজন।”
স্টেট গ্যারাজ পার্কিং প্লাজা থেকে শিল্পতালুকের বিভিন্ন প্রান্তের অফিসের দূরত্ব অনেক। তাই গাড়ি পার্কিংয়ের পরে সহজেই যাতে অফিসে পৌঁছনো যায়, সেই ভাবনা থেকেই আকাশপথের পরিকল্পনা। নবদিগন্ত সূত্রের খবর, স্টেট গ্যারাজ থেকে কলেজ মোড়, এসডিএফ মোড় প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ মোড় পর্যন্ত এই আকাশপথ গড়ার কথা ভাবনা চলছে। পরে তা সম্প্রসারিত হতে পারে। কনভেয়ার বেল্টের মতো ওই পথে খাবারের দোকান-সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিষেবা চালু করার কথাও পরিকল্পনায় রাখা হতে পারে। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই চালু হয়েছিল শিল্পতালুক। যার জেরে ভোগান্তি আজও চলছে। কিন্তু পরিকাঠামো রাতারাতি বদলে যাবে না।” তাঁর দাবি, “যানজট কমাতে একাধিক পার্কিং লট ও রিং-রোড করা হবে। বহুতল পার্কিং প্লাজাও করা হবে। গাড়ি রেখে কর্মীরা যাতে দ্রুত কর্মস্থলে যেতে পারেন, তাই এই ভাবনা। পরিকল্পনা কার্যকর হলে পাঁচ নম্বর সেক্টরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। শিল্পতালুকও হবে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।” |