বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রাজ্যের প্রথম উড়ালপুল হতে চলেছে মহেশতলায়, বজবজ ট্রাঙ্ক রোডের উপরে। এই উড়ালপুল তৈরি হলে মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে ব্রেস ব্রিজ থেকে বাটানগর পৌঁছে যেতে পারবেন সাধারণ মানুষ। ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন’ (জেএনএনইউআরএম) ইতিমধ্যেই এই প্রকল্প মঞ্জুর করেছে। খরচ পড়বে ২৫৫.৭৩ কোটি টাকা। জেএনএনইউআরএম-এর সঙ্গে কাজ করবে একটি বেসরকারি সংস্থা। কোন সংস্থা কাজটি করবে, তা নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে বলে কেএমডিএ-র পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে। ‘কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (কেএমডিএ)-র পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, খরচের মধ্যে ৩৫ শতাংশ টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দেবে। রাজ্যের দেয় বাকি টাকার পুরোটাই চাওয়া হবে যে বেসরকারি সংস্থা ওই নির্মাণকাজ করবে, তাদের কাছে। বদলে ওই সংস্থাকে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা দেবে রাজ্য সরকার।
কলকাতার ব্রেস ব্রিজ থেকে বাটানগর মোড় পর্যন্ত বজবজ ট্রাঙ্ক রোডের উপরে এই উড়ালপুলটি সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। চওড়ায় হবে সাত মিটার। উড়ালপুলটি তৈরি হবে বজবজ ট্রাঙ্ক রোডের মাঝখান থেকে। আর এর নীচে দু’ধারে যাওয়া-আসার রাস্তা থাকবে। নীচের রাস্তার দু’পাশে থাকবে চওড়া ফুটপাথ। সাড়ে সাত কিলোমিটার উড়ালপুল থেকে ২৫০ মিটারের একটি বাহু জিঞ্জিরা বাজারের কাছে এসে বেঁকে যাবে তারাতলা রোডের দিকে।
কেএমডিএ সূত্রের খবর, উড়ালপুলটি আগে জিঞ্জিরা বাজার থেকে শুরু করার কথা হয়েছিল। কিন্তু পরে এটি ব্রেস ব্রিজ থেকে হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়। জিঞ্জিরা বাজার থেকে এক কিলোমিটার যাওয়ার পরে উড়ালপুলের উপরেই টোল প্লাজা থাকবে। বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে লগ্নি হিসেবে নেওয়া টাকার বদলে ওই সংস্থাকে টোল এবং উড়ালপুলের উপরে বিজ্ঞাপন দেওয়ার মতো বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা দেবে রাজ্য সরকার।
এ দিকে, উড়ালপুলের জন্য জেএনএনইউআরএম প্রথমে ২৫ শতাংশ টাকা দেবে বলে কেএমডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে। পরে কাজের গতি দেখে ধাপে ধাপে তারা বাকি টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কেএমডিএ সূত্রের খবর, জিঞ্জিরা বাজার থেকে ওই রাস্তাটির দু’ধারে অনেকগুলি সংস্থার গুদাম রয়েছে। ফলে বড় বড় লরি, ট্রেলার যাতায়াতের জন্য রাস্তাটিতে অন্য যান চলাচলে অসুবিধা হয়। একই সঙ্গে মহেশতলায় বিভিন্ন আবাসন তৈরির পর থেকেই শহরতলির এই অংশে জনবসতিও বাড়ছে। তাই বজবজ ট্রাঙ্ক রোডকে যানজট-মুক্ত করতে এই উড়ালপুলের পরিকল্পনা গত সরকারের আমলেই নেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। তবে উড়ালপুল দিয়ে শুধুমাত্র ছোট গাড়ি যেতে পারবে। কোনও লরি বা ট্রেলার ওই উড়ালপুলে ওঠার অনুমতি পাবে না বলে কেএমডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে।
তবে বজবজ ট্রাঙ্ক রোডের দু’পাশে বেশ কিছু জমি ‘দখল’ হয়ে রয়েছে বলে খবর। উড়ালপুল তৈরি করতে গেলে ওই সব জমিতে অবৈধ দখলদারদের দোকান সরিয়ে দিতে হবে। তবে যে সব দখলদারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ, শুধু তাঁদেরই অন্যত্র পুনর্বাসন দেওয়া হবে বলে মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাস জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “সম্প্রতি জেএনএনইউআরএম এই প্রকল্পের ছাড়পত্র দিয়েছে। এ বার আমরা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কাছে ‘এক্সপ্রেস অফ ইনটারেস্ট’ চেয়ে পাঠাব। তবে আমাদের শর্ত থাকবে, যারা সব চেয়ে কম টোল নেবে, তাদেরই এই কাজে যুক্ত করতে চাইব।” যদি খুব শীঘ্র কোনও বেসরকারি সংস্থা সরকারের শর্ত মেনে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয়, তা হলে পুজোর পর থেকেই উড়ালপুলের কাজ শুরু হবে বলে নগরোন্নয়ন দফতর থেকে জানা গিয়েছে। |