পরপর অপরাধ, আলাদা থানা চায় রূপনারায়ণপুর
কের পর এক লুঠ, চুরি, হামলা। অধিকাংশ ঘটনার ক্ষেত্রেই অন্ধকারে পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানায় রূপনারায়ণপুর ও চিত্তরঞ্জন দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে, এমনই অভিযোগ সেখানকার বাসিন্দাদের। শুধুমাত্র এই দুই শহরেই গত সাত মাসে প্রায় ১৩টি লুঠপাট, চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। দিন কয়েক আগে দু’রাজ্যের পুলিশ বৈঠকে বসে দুষ্কৃতী আনাগোনা বন্ধে নজরদারির সিদ্ধান্ত নেয়। আর ঘটনাচক্রে, তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দিনদুপুরে একটি বেসরকারি সংস্থার অফিসে লুঠপাট হয় রূপনারায়ণপুরে। পুলিশের অবশ্য দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।
গত ৬ অগস্ট রূপনারায়ণপুরে ডাবর মোড় সংলগ্ন এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে একটি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার অফিসে ঢুকে লুঠপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। ঘটনার পরে সপ্তাহখানেক পেরিয়ে গেলেও দুষ্কৃতীদের হদিস পায়নি সালানপুর থানার পুলিশ। এর পর থেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকার ব্যবসায়ীরা। রূপনারায়ণপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মহম্মদ আরমান অভিযোগ করেন, এর আগেও একাধিক বার দোকানে লুঠপাট চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। প্রতি বারই পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। তাঁর দাবি, “আমরা চাই রূপনারায়ণপুর এলাকায় একটি পৃথক থানা করে ও পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়ে এলাকার নিরাপত্তা দেওয়া হোক।”
দুষ্কর্মের খতিয়ান
কবে ঘটনা
১২ জানুয়ারি রূপনারায়ণপুরে সাতসকালে সোনার দোকানে লুঠপাট।
৭ ফেব্রুয়ারি রূপনারায়ণপুরে টাকা তুলে ফেরার পথে ছিনতাই।
৯ ফেব্রুয়ারি রূপনারায়ণপুর বাজারে দেওয়াল কেটে মোবাইলের দোকানে চুরি। ২৬
২৬ ফেব্রুয়ারি চিত্তরঞ্জন রেল আবাসনে সদস্যদের বেঁধে রেখে লুঠপাট।
১৫ মার্চ উত্তরামপুরের অরবিন্দনগরে একটি বাড়িতে দরজা ভেঙে চুরি।
৭ এপ্রিল রূপনারায়ণপুরে রাঙামাটিয়ায় পথচারীর টাকা ছিনতাই।
৪ মে রূপনারায়ণপুরে রেল সেতুতে বাইক থামিয়ে ছিনতাই।
৯ মে চিত্তরঞ্জন নতুন হাসপাতাল কলোনিতে বোমা মেরে চুরি।
২৭ জুলাই চিত্তরঞ্জন রেল আবাসনে পর পর দু’টি বাড়িতে চুরি।
৬ অগস্ট ডাবর মোড় সংলগ্ন বেসরকারি সংস্থার অফিসে ঢুকে লুঠপাট।
সালানপুর থানা এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ তুলেছেন বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ও। তাঁর দাবি, “এলাকার মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে আমি নিজে ঘুরে দেখেছি, বাসিন্দাদের অভিযোগে সত্যতা রয়েছে। ইতিমধ্যেই পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাও বলেছি।”
সালানপুর থানার রূপনারায়ণপুর-সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ গলা মিলিয়েছে সব ক’টি রাজনৈতিক দলও। যুব তৃণমূল নেতা পাপ্পু উপাধ্যায়ের অভিযোগ, “পুলিশি সক্রিয়তা বাড়লে গত সাত মাসে ১৩টি অপরাধের ঘটনা ঘটত না।” তাঁর দাবি, “আমরা এলাকায় পুলিশকর্মী বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নামব।” সালানপুর থানা ও রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য শ্যামল মজুমদারও। তাঁর দাবি, “কিছু দিন আগেই আমরা পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে রূপনারায়ণপুর ফাঁড়িতে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু তাতেও কিছু সুরাহা হয়নি।” রূপনারায়ণপুরে একটি পৃথক থানা ও বেশি পুলিশকর্মী প্রয়োজন বলে দাবি তাঁরও। সিপিএমের বারাবনি জোনাল কমিটির সম্পাদক অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “আইনশৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগে আমরা জুলাইয়ে কমিশনারের দফতরে বিক্ষোভও দেখিয়েছি।” এলাকায় পুলিশি পরিকাঠামো বাড়ানোর দাবি তুলেছেন তাঁরাও।
রূপনারায়ণপুর এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে খুশি নন আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দও। সে কারণেই জুলাইয়ের শেষে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয় রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির তৎকালীন ওসিকে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, সীমানায় অপরাধ দমনে তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশ। তার প্রথম পদক্ষেপ করা হয়েছে দুই রাজ্য পুলিশের যৌথ বৈঠকের মাধ্যমে। পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ ওই বৈঠকের শেষে দাবি করেন, সীমানা সংলগ্ন দুই রাজ্যের থানাগুলির সমন্বয় সাধন করে এলাকার অপরাধ নির্মূল হবে।
কিন্তু এর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থায় লুঠপাঠ চালায় দুষ্কৃতীরা। এ বিষয়ে আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় জানান, একটু সময় লাগলেও দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.