নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
বার্নপুরে সাত বছরের পুষ্পা ঠাকুরকে খুনের ঘটনায় জড়িত এক দাগি অপরাধী ধরা পড়েছে বলে দাবি করল পুলিশ। যদিও সোমবার আসানসোল আদালতে তাকে তোলার সময়ে খুনের মামলার কাগজপত্র তারা জমা দিতে পারেনি। নিতে পারেনি নিজেদের হেফাজতেও। বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম সুকান্ত সরকার ওরফে রাবণ। গত সপ্তাহেই হিরাপুরে ইস্কো কারখানা সংলগ্ন টানেল গেট থেকে এক সঙ্গী-সহ তাকে ধরা হয়। তাদের কাছে একটি পাইপগান ও একটি কার্তুজ পাওয়া গিয়েছে। ১০ অগস্ট আদালতে তোলা হসে বিচারক তাদের তিন দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। আসানসোল দুর্গাপুরের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এই তিন দিন সুকান্তকে জেরা করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, ছাত্রী খুনের ঘটনায় সে-ই মূল অভিযুক্ত। আমাদের হাতে অকাট্য প্রমাণও আছে।” যদিও তার বিরুদ্ধে খুনের মামলার কাগজপত্র কেন জমা করা যায়নি, তার সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। |
আদালতের পথে রাবণ (ডান দিকে)। ছবি: শৈলেন সরকার |
গত ৭ অগস্ট বর্ধমানের বার্নপুরে ইস্কো পরিচালিত প্রাথমিক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী, নবঘণ্টি এলাকার বাসিন্দা পুষ্পা পরীক্ষা দিতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। পরের দিন সকালে স্কুলের কাছেই ইস্কোর একটি খালি পড়ে থাকা আবাসনের পিছনে ঝোপে ঢাকা নর্দমায় তার মৃতদেহ মেলে। অত্যাচার চালিয়ে তাকে খুন করা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে জনতা। দফায় দফায় বিক্ষোভ, ভাঙচুর, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বার্নপুর। অপরাধীকে গ্রেফতারের দাবিতে গত এক সপ্তাহ ধরে রোজ একাধিক মিছিল, সভা, বিক্ষোভ হয়েছে।
এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রতবাবুর দাবি, তদন্তে নেমে পুলিশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। যেমন, খুনের কয়েক দিন আগে থেকেই স্কুলটির সামনে ঘোরফেরা করছিল সুকান্ত। বছর দুয়েক আগে রামবাঁধ এলাকায় থাকার করার সময়ে পুষ্পার বাবা, পেশায় ক্ষৌরকার সুশীল ঠাকুরের সঙ্গে তার ঝামেলা হয়েছিল। এক সেলুন মালিকের সঙ্গে বচসা ও সেলুনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া নিয়ে ওই গণ্ডগোল হয়। সুব্রতবাবু বলেন, “অনুমান, সুকান্ত সেই রাগেই পুষ্পাকে খুন করেছে।”
পুলিশ সূত্রের খবর, এর আগে অন্তত পাঁচটি গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে একাধিক বার জেল খেটেছে সুকান্ত। ২০০৬ সালে হিরাপুরে ইস্কো আবাসনে ডাকাতির সময়ে ইস্কো কর্মী ও তাঁর মাকে খুনের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। সেই মামলা এখনও চলছে। দু’বছর জেলে কাটিয়ে গত ৩১ জুলাই সে ছাড়া পায় এবং এলাকায় ফিরেই ফের দুষ্কর্ম শুরু করে। নানা রকম নেশাও করে সে। ইস্কোর যে খালি আবাসনের কাছে পুষ্পার
দেহ মিলেছিল, সেখানেও খালি মদের বোতল ও গাঁজার কল্কে পাওয়া গিয়েছে।
সুব্রতবাবুর দাবি, “ওকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জেরার পরেই বোঝা যাবে কেন ও কী ভাবে সে ছাত্রীটিকে খুন করেছে।” সুকান্তকে আপাতত ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এডিসিপি বলেন, “কেন কাগজপত্র তৈরি করা গেল না, তা খতিয়ে দেখা হবে। শীঘ্রই কাগজ আদালতে পাঠানো হবে।” |