শুধু ডেঙ্গি নয়, বর্ষার মরসুমে হানা দিয়েছে নামগোত্রহীন আর এক ধরনের ভাইরাল জ্বর। ডেঙ্গির চেয়েও এই জ্বরকে এ বার বেশি ভয় পাচ্ছেন কলকাতার চিকিৎসকেরা। জ্বরটি দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে। বাড়িতে এক বার কারও সেই জ্বর হলে তা গোটা পরিবারে সকলের হচ্ছে বলে জানান পরজীবী বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, গত দু’বছর ধরে কলকাতায় এই ধরনের জ্বর ছড়াচ্ছে। গত বছর বেশ কয়েক বার রক্ত পরীক্ষার পরে এই ধরনের জ্বরে আক্রান্ত কয়েক জনের দেহে একসঙ্গে ডেঙ্গি ও চিকনগুনিয়ার জীবাণু মিলেছিল। এ বার কিন্তু ওই ধরনের কোনও ভাইরাস মেলেনি। কিন্তু উপসর্গ দেখে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত যে, ভাইরাসের সংক্রমণেই এই রোগ ছড়াচ্ছে। সাধারণ প্যারাসিটামল দিয়ে এই রোগের চিকিৎসার চেষ্টা করে যাচ্ছেন ডাক্তারেরা। কলকাতা পুরসভার ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ বলেন, “আমার ওয়ার্ডের অনেক বাড়িতেই ওই জ্বর হানা দিয়েছে। শুনছি, ভাইরাল জ্বর, কিন্তু ডেঙ্গি নয়। প্রতিটি বাড়িতেই ওই জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।”
এর পাশাপাশি টাইফয়েড সংক্রমণের খবরও মিলছে কলকাতায়। যদিও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ও কলকাতা পুরসভার মূল উদ্যোগ ডেঙ্গি নিয়েই। রবিবার পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানান, শহরে ডেঙ্গি প্রতিরোধে দফতরের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। যে সব এলাকায় এই জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে, সেখানকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করছেন পুরকর্মীরা। অতীনবাবু বলেন, “অ্যান্টিবডি পরীক্ষা (আইজিএম) করে নিশ্চিত হওয়া ডেঙ্গি রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশা মারার কাজ শুরু করেছিলাম। এ বার নন-স্পেসিফিক (কিটের মাধ্যমে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা) পদ্ধতিতে চিহ্নিত ডেঙ্গি রোগীদের বাড়ির আশপাশেও মশা মারার অভিযান শুরু করা হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, কলকাতা পুরসভায় একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে নিখরচায় এলাইজা-র মাধ্যমে রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে।
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক অফিসার জানান, ডেঙ্গি রোগের বাহক এডিস মশা তার অবস্থানের ১০০ মিটার এলাকায় ঘোরাফেরা করে। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই পুরকর্মীরা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত রোগীর বাড়ির ১০০ মিটার এলাকা জুড়ে মশা মরার তেল ছড়াচ্ছেন।
এ দিন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, ডেঙ্গি রোগে আক্রান্তের কোনও খবর থাকলেও সঙ্গে সঙ্গে তা সংশ্লিষ্ট পুরসভাকে জানানোর জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন নার্সিংহোম, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাছে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের গাইড মেনে শহরের পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও কলকাতা পুরসভায় রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।” |