কঠিন অস্ত্রোপচারে সাফল্য মেডিক্যালে
জেলার হাসপাতালগুলিতে সাধারণত এই ধরনের অস্ত্রোপচার হয় না। ঝুঁকি থাকায় ‘রেফার’ করে দেওয়া হয় কলকাতায়। এমনই এক অস্ত্রোপচারে সাফল্য মিলল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। যার কেতাবি নাম ‘ল্যাটারাল প্যানক্রিয়াটিকো জেজুনস্টমি’ (এলটিজে)। সফল অস্ত্রোপচারের পর ভালই আছেন ঘাটালের সাদীচক গ্রামের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী জয়াবতী দোলই। অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে থাকা চিকিৎসক অমিত রায় বলেন, “ঝুঁকি থাকায় সাধারণত এই ধরনের রোগীদের কলকাতায় রেফার করে দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা বিভাগীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করে ও সকলে মিলে এই কাজে সফলতা পেয়েছি। এর ফলে একটি দরিদ্র পরিবারের মেয়েকে কষ্ট করে আর বাইরে যেতে হল না।”
ল্যাটারাল প্যানক্রিয়াটিকো জেজুনস্টমি কী?
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অগ্ন্যাশয় থেকে এক ধরনের রস (এনজাইম) নিঃসৃত হয়। যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। আবার অগ্ন্যাশয় থেকে ইনস্যুলিনও নিঃসরণ হয়। যে নালীর মাধ্যমে ওই রস ও ইনস্যুলিন শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, তা পাথর জমে বন্ধ হয়ে গেলে সমস্যা হয়। চিকিৎসকদের মতে, অপুষ্টির’ কারণে এই ধরনের ঘটনা ঘটে। কখনও আবার উল্টোপাল্টা খাবার খেলে (বিশেষত মদ্যপান) ধীরে ধীরে ওই নালীতে পাথর জমতে থাকে। এক সময় তা বেড়ে গিয়ে পুরো নালীকে আটকে ফেলে। নিঃসৃত রস পাকস্থলীতে পৌঁছতে পারে না, ইনস্যুলিনও বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আটকে যায় নালীর মধ্যেই। ফলে ধীরে ধীরে রোগীর হজম ক্ষমতা কমে যায়, খাওয়ার ইচ্ছে থাকে না, জোর করে খেলে বমি হয়ে যায়। পেটে অসম্ভব যন্ত্রণার পাশাপাশি ডায়াবেটিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন রোগী। তখন ওই পাথর বার করার জন্য অস্ত্রোপচার জরুরি হয়ে পড়ে।
হাসপাতালে জয়াবতীর সঙ্গে চিকিৎসক। নিজস্ব চিত্র।
কেন এই অস্ত্রোপচার জটিল?
চিকিৎসকদের মতে, নালী কেটে পাথর বার করতে হয়। ওই নালীকে আর জোড়া লাগানো যায় না। নতুন নালী তৈরি করে অগ্ন্যাশয় থেকে পাকস্থলীতে জুড়তে হয়। তা করা যেমন কঠিন, তেমনই অস্ত্রোপচারের পরে জটিলতার আশঙ্কা থাকে বেশি। যে কারনে সহজে কেউ অস্ত্রপোচার করতে চান না।
বছরখানেক ধরে এই কারণেই অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন ঘাটালের সাদীচক গ্রামের কিশোরী জয়াবতী দোলই। তাঁর কথায়, “এত যন্ত্রণা হত যে সহ্য করতে পারতাম না। মনে হত, মরে যাব। কিছু খেলেই বমি হয়ে যেত। এমনকী ওষুধ খেলেও। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করিয়েও সুফল পাইনি।” অস্ত্রোপচার ছাড়া যে এ রোগ সারানো সম্ভব নয়, চিকিৎসকেরা জানতেন। কিন্তু কোনও চিকিৎসকই ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রোপচার করতে চাননি। অবশেষে জয়াবতী হাজির হন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। তাঁকে দেখার পরেই অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন চিকিৎসক অমিত রায়।
শুক্রবার অপারেশন হয়েছে। হাসপাতাল শয্যায় শুয়ে জয়াবতী বলেন, “ভাল লাগছে। এ বারই আমার উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার কথা। এ বার না হলেও আগামী বছর দেব।” তাঁর কথায়, “সামান্য জমি রয়েছে। বাবা নিজেই চাষ করেন। কষ্টে সংসার চলে। চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়া সম্ভব ছিল না। মেদিনীপুরে অপারেশন হয়ে যাওয়ায় খুবই উপকার হল।”
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের বয়স বাড়ছে। কলকাতার নামকরা চিকিৎসকেরা আসছেন। উন্নতি হচ্ছে স্বাস্থ্য পরিষেবার। মেডিক্যালের সার্জারি বিভাগের প্রধান সুকুমার মাইতি বলেন, “আমাদের মেডিক্যাল কলেজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার এখন হচ্ছে। ফলে রেফার সংখ্যা অনেকটাই কমেছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.