টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠায় শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে পারলেন না মুখ্য সহায়িকা। অভিযোগ, তাঁকে শিক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেন পরিচালন সমিতির সদস্য এবং গ্রামবাসীরা। ঢোলাহাটের মথুরাপুর-১ ব্লকের সাতপুকুরিয়া শিশুশিক্ষাকেন্দ্রের ঘটনা। সমস্যা মেটানোর জন্য মহকুমাশাসকের দফতরে উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা হয়। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। নিরাপত্তার অভাবে মথুরাপুর-১ বিডিও অফিসে হাজিরা দিচ্ছেন মুখ্য সহায়িকা শ্যামলী হালদার। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাকেন্দ্রের পঠনপাঠন।
ব্লক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০১-এ সরকারি অনুমোদন পায় শিক্ষাকেন্দ্রটি। তারপর থেকে গ্রামের এক ব্যক্তির বাড়ির বারান্দায় পঠনপাঠন চলছিল। গ্রামে দু’কিলোমিটারের মধ্যে কোনও প্রাথমিক স্কুল না থাকায় ওই শিক্ষাকেন্দ্রে ভিড় করত কচিকাচারা। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ৬০ ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে পঠনপাঠন চলত। ২০১০-এ শিশুশিক্ষাকেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য সাড়ে ছ’লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। সেইমতো গ্রামের এক ব্যক্তির দান করা দশ কাঠা জমিতে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ভবনের ছাদ দিতে কত খরচ হয়েছে মুখ্য সহায়িকার কাছে তার হিসেব চান শিক্ষাকেন্দ্রের পরিচালন সমিতির সম্পাদক এবং গ্রামবাসীরা। পরিচালন সমিতির অভিযোগ, ওই সহায়িকা হিসেব দিতে পারেননি। সমিতির সম্পাদক খোকন ভাণ্ডারী বলেন, “ভবন নির্মাণের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠছিল। প্রথম দফায় কত খরচ হয়েছে তা মুখ্য সহায়িকার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা বারবার এড়িয়ে গিয়েছেন। বিষয়টি ব্লক এবং মহকুমা প্রশাসনে জানানো হয়েছে।” |
এরপরে বিডিও গত ৩ জুন মহকুমাশাসকের দফতরে দু’পক্ষকে নিয়ে সভা করেন। সেখানে গ্রামবাসী এবং পরিচালন সমিতির সদস্যেরা ওই মুখ্য সহায়িকার অপসারণের দাবি তোলেন। শ্যামলীদেবী বলেন, “মাস পাঁচেক আগে, মার্চ মাসে নির্মাণকাজে খরচের হিসেব দিতে শিক্ষাকেন্দ্রে গিয়েছিলাম। তখন আমায় মারধর করে আটকে রাখা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে আমায় উদ্ধার করে।” বিষয়টি তিনি বিডিওকে জানিয়েছিলেন। পরে বিডিও-র দফতর থেকে সহকারি বাস্তুকারকে তাঁর কাছে পাঠানো হয়। শ্যামলীদেবীর কথায়, “বিডিও-র প্রতিনিধিকে সমস্ত হিসেব বুঝিয়েছিলাম। সে হিসেবও পরিচালন সমিতি এবং গ্রামবাসী মানতে রাজি নন। আতঙ্কে শিক্ষাকেন্দ্রে যেতে পারছি না।”
মথুরাপুর ১-এর বিডিও দীপ্তার্ক বসু বলেন, “সহকারি বাস্তুকারকে হিসেব আনতে ওই সহায়িকার কাছে পাঠিয়েছিলাম। বাস্তুকারের হিসেবও গ্রামবাসীরা মানতে নারাজ।” তিনি জানান, মহকুমাশাসকের অফিসে ডাকা বৈঠকে শ্যামলীদেবীকে এক সপ্তাহ শিক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শ্যামলীদেবী শিক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ায় অভিভাবকদের একাংশ ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে চলে যান। ফলে পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। বিডিও-র কথায়, “গোটা ঘটনাটি বিবেচনা করে ওই সহায়িকাকে আমার অফিসে হাজিরা দিতে বলেছি।” এ দিকে, গোটা ঘটনাটির জেরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাকেন্দ্রের মিডডে মিল। নতুন ভবনের কাজ শেষ হয়নি। ছাত্রসংখ্যাও কমছে। সহায়িকারা পাঁচ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। ফলে মহকুমাশাসকের নির্দেশে পরিচালন সমিতিকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। মহকুমাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “আবাদভগবানপুর পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক এবং মুখ্য সহায়িকাকে আর্থিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ওই সহায়িকা যাতে শিক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে ক্লাস নিতে পারেন সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে পুলিশ ওই সহায়িকার সঙ্গে শিক্ষাকেন্দ্রে যাবে।” |