দলের নেতাদের একাংশের জল্পনাই সত্যি হল। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখোমুখি হলেন না আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। দক্ষিণ ২৪ জেলা কমিটির বর্ধিত বৈঠকে রবিবার বক্তা ছিলেন বুদ্ধবাবু। কিন্তু রেজ্জাক সেই বৈঠকে অনুপস্থিত!
জেলার ২৭টি জোনাল কমিটির ৪৫৯ সদস্য এ দিন জেলার সদর দফতরে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। রেজ্জাক ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন না বলে দক্ষিণ ২৪ পরগনা সিপিএমের অন্দরে সপ্তাহখানেক ধরেই জল্পনা চলছিল। রেজ্জাকও নানা ইঙ্গিতে ঘনিষ্ঠ মহলে বোঝাচ্ছিলেন, বুদ্ধবাবুর বক্তৃতা শুনতে তিনি যাবেন না। প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রীর সঙ্গে এ দিন আর যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মোবাইলের সুইচ-অফ ছিল। দুপুরের পরে তিনি কলকাতা বা ক্যানিংয়ের বাড়িতেও ছিলেন না। তবে রেজ্জাকের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তিনি বাড়িতে ছিলেন। তার পরে ক্যানিংয়ের কিছু স্থানীয় নেতার সঙ্গে বেরিয়ে যান। বিধানসভার ৭৫ বছর পূর্তি ও সেই উপলক্ষে প্রবীণ বিধায়কদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আজ, সোমবার উপস্থিত থাকবেন বলে পরিবারের লোকজনকে জানিয়েছেন রেজ্জাক। |
বৈঠক শেষের পরে এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনা সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “রেজ্জাকদা’র সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি সংগঠনের কাজেই ব্যস্ত রয়েছেন। বৈঠকে আসতে পারবেন না বলে আমাকে জানিয়েছেন তিনি।” কিন্তু সংগঠনের কোন কাজে রেজ্জাক ‘ব্যস্ত’ রয়েছেন, সেই ব্যাখ্যা অবশ্য দেননি সুজনবাবু। জেলায় এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ও। এই বিষয় তিনি কোনও মন্তব্য করেনি। অসুস্থতার কারণে রাজ্য কমিটি ও জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শমীক লাহিড়ী অবশ্য উপস্থিত ছিলেন না।
সমসাময়িক বিশ্বে বামপন্থার গতিপ্রকৃতি বিষয়ে এ দিনের আলোচনায় বুদ্ধবাবু চিনের অর্থনৈতিক নীতিকে প্রাথমিক ভাবে ‘সঠিক’ বলে মনে হওয়ার কথাই বলেছেন। তাঁর মতে, সমকালীন বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপরে দলের সর্ব স্তরের কর্মীদের নজর দেওয়া উচিত। পুঁজিবাদের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ৭০% রাষ্ট্রের ক্ষমতা বজায় রেখে ৩০% বেসরকারি লগ্নির প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন বুদ্ধবাবু। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ওখানে সব ক্ষমতা রাষ্ট্রায়ত্তকরণ হয়ে গিয়েছিল বলেই অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছিল। তুলনায় চিনের অর্থনীতি অনেক বেশি ফলপ্রসু হয়েছে। তবে চিনের অর্থনীতি পুরোপুরি সঠিক, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যায় না। বুদ্ধবাবুর ব্যাখ্যা, এই বিষয়ে পর্যবেক্ষণ চলছে। এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে চিনের অর্থনীতিকে ‘সঠিক’ বলেই মনে করা হচ্ছে।
বৈঠক শেষে সুজনবাবু বলেছেন, “এ রাজ্য এই প্রথম খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কৃষকের মৃত্যু, সারের দাম বৃদ্ধি হচ্ছে। এখন এটাই রাজ্যে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।” তিনি রাজ্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে কটাক্ষ করে বলেন, “সাম্প্রতিক স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা একটি প্রহসন হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হল! আর সেটাই রাজ্য সরকার মানতে চাইছে না।” |