“ইয়োহান, এটা তোর সময় নয়। এটা আমার সময়। অলিম্পিকটা শেষ হোক, তারপর তোর সময় আসবে...এখন আমার সময়।”
বেশি দিন নয়, বছরদুয়েক আগের কথা। অধুনা অ্যাথলেটিক্স বিশ্বে তাঁর এক নম্বর প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঠিক এই কথাগুলোই বলেছিলেন উসেইন বোল্ট। কিন্তু কে জানত, লন্ডন অলিম্পিকে ব্লেককে দেওয়া নিজের কথাগুলোই শুধু রাখবেন না বোল্ট, একই সঙ্গে অ্যাথলেটিক্সের সার্বজনীন মুখও হয়ে দাঁড়াবেন। ব্যাপ্তি তাঁর এতটাই ছড়াবে যে, অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগতে শুরু করবেন কার্ল লুইসের মতো কিংবদন্তি। শনিবার গভীর রাতে স্প্রিন্টে ডাবল হ্যাটট্রিকের পর অ্যাথলেটিক্সকে দুনিয়া চিনবে ‘উসেইন বোল্ট’ নামে।
যন্ত্রমানব। গাইডেড মিসাইল। ট্র্যাকের সম্রাট। লন্ডন অলিম্পিক যত এগিয়েছে, তত প্রশস্তি বেড়েছে সাড়ে ছ’ফুটের জামাইকানের। বোল্টের হাই-ভোল্টেজ শক এতটাই যে, প্রশ্ন উঠে গিয়েছে সর্বকালের সেরা তা হলে কে? |
গায়ক বোল্ট। শনিবার রাতে লন্ডনের এক ক্লাবে। ছবি: এএফপি
|
‘পারফেক্ট টেন’ করা নাদিয়া কোমানেচি? আঠেরোটা সোনা-সহ সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ানের ট্রফি জেতা মাইকেল ফেল্পস? স্প্রিন্টের সঙ্গে লং জাম্পেও আগুন ঝরানো কার্ল লুইস? নাকি বিদ্যুৎ বোল্ট? মাপকাঠি যদি হয় নিছক পদক-সংখ্যা, ফেল্পস-লুইস দু’জনেই পিছনে ফেলবেন বোল্টকে। কিন্তু শনিবারের পর আবেগের ব্যালট-বক্স খুলে দেখলেই বোঝা যাবে, সেখানে এক, দুই এবং তিন, সবই বোল্ট।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট জাক রোগ যতই বোল্টকে ‘কিংবদন্তি’ শিরোপা দিতে নারাজ হন, যতই তিনি বোঝাতে চান যে বোল্টের চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে নিজেদের বিভাগে কর্তৃত্ব ধরে রেখেছেন স্যর স্টিভ রেডগ্রেভ (রোয়িং) বা বেন আইন্সলি (সেইলিং), বোল্টের কৃতিত্ব তাতে একটুও কমছে না। ট্র্যাক অ্যাথলিটদের কেরিয়ারই তো বিচার হয় চার বছরের পারফরম্যান্স দিয়ে। একশো বা দুশো মিটারের লড়াই এতটাই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, গোটা বিশ্বের এত অ্যাথলিট সেখানে অংশ নেন, তাঁদের মাস্লের ক্ষয় এত দ্রুত হয় যে কোনও একজন অ্যাথলিটের পক্ষে তিনটে অলিম্পিক জুড়ে কর্তৃত্ব ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব। |
অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বোল্ট ও ৫ হাজার মিটার দৌড়ে সোনাজয়ী ব্রিটেনের
মহম্মদ ফারাহ। নকল করে দেখাচ্ছেন দু’জনে দু’জনকে। ছবি: রয়টার্স |
তাবড় তাবড় অ্যাথলিটরাও পরপর দুটো অলিম্পিকে নিজেদের সেরাটা দিতে পারেন না। বোল্ট যে সেটা করে দেখিয়েছেন। করে দেখিয়েছেন তাঁর অননুকরণীয় ভঙ্গিতে। তাঁর কাছ থেকে আরও চাওয়াটা লোভ ছাড়া আর কী?
যাঁকে ঘিরে এত আবেগ, অলিম্পিক-উত্তর তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা তো থাকবেই। আছেও। গোটা বিশ্বের প্রচারমাধ্যম জুড়ে একটাই প্রশ্নএটাই কি বোল্টের শেষ অলিম্পিক? বোল্ট নিজে সেই জল্পনা উস্কে দিয়েছেন এই বলে যে, নতুন চ্যালেঞ্জের খোঁজে তিনি লং জাম্পে নামতে চান। আইপিএল বা বিগ ব্যাশে খেলতে চান। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের জার্সি পরার ভাবনাও ঘোরাফেরা করেছে তাঁর চিন্তায়। লন্ডনই যে ‘শো-ম্যান’-এর অন্তিম শো হতে পারে, তার সবচেয়ে বড় ইঙ্গিত সম্ভবত পাওয়া গেল শনিবার রাতে। রিলে জিতে না হলে কেন অলিম্পিক অফিশিয়ালের সঙ্গে তর্ক করে ব্যাটনটা স্মারক হিসেবে রেখে দেবেন বোল্ট? কেনই বা তিনি বলবেন, রিলে টিমের সতীর্থদের সঙ্গে তোলা ছবির নীচে ব্যাটনটা নিজের বাড়িতে সাজিয়ে রাখতে চান?
হয়তো এই জন্যই যে, স্প্রিন্টের অদৃশ্য ব্যাটন তিনি ইতিমধ্যেই তুলে দিয়েছেন ব্লেকের হাতে। লন্ডন অলিম্পিকের সায়াহ্নে এই মুহূর্তে হয়তো সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীকে তিনি বলছেন, “ইয়োহান, এটা আমার সময় নয়। এটা তোর সময়। অলিম্পিক শেষ। আমার সময়ও শেষ...এখন তোর সময়।” |