|
|
|
|
সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরিতে গাফিলতির অভিযোগ শ্রীরামপুরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শ্রীরামপুর |
কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পে নাগরিকদের বাড়ি তৈরির কাজ দিনের পর দিন ধরে ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছে শ্রীরামপুর পুরসভা এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। প্রায় তিন বছর কেটে গেলেও বাড়িটি তৈরি না হওয়ায় ভাড়া থাকতে বাধ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পরিবার। কেন এই পরিস্থিতি? তা জানতে কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে।
শ্রীরামপুর পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মল্লিকপাড়া লেনের বাসিন্দা সোমনাথ ভট্টাচার্য এবং তাঁর মা সরস্বতীদেবী কেন্দ্রীয় সরকারের জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন (জেএনএনইউআরএম)-এর বিএসইউপি প্রকল্পে (দ্বিতীয় পর্যায়) দু’টি বাড়ি তৈরির আবেদন করেছিলেন ২০০৯ সালে। সেই আবেদন মঞ্জুর হয়। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই প্রকল্পে সেই সময়ের নিয়ম অনুযায়ী, ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকায় একটি বাড়ি তৈরি হত। এর মধ্যে আবেদনকারীকে দিতে হত ২৮ হাজার টাকা। ওই বছরের জুলাই মাসে দু’টি বাড়ির জন্য ৫৬ হাজার টাকা পুরসভায় জমা দেয় ওই পরিবার। চার মাসের মধ্যে বাড়ি সম্পূর্ণ করার কথা ছিল পুরসভার।
বাড়িটি তৈরির বরাত পান ঠিকাদার রাজীব ওরফে তোতন গড়গড়ি। সোমনাথবাবুদের অভিযোগ, ভিতের সামান্য কাজ ছাড়া আর কিছুই করেননি ওই ঠিকাদার। তা-ও সাদা বালি এবং ইট তাঁদেরই কিনে দিতে হয়। বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলর সমীরেশ রায়কে জানালেও তিনি কোনও পদক্ষেপ করেননি বলে অভিযোগ। সংশ্লিষ্ট ওভারসিয়ার এবং পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েও লাভ হয়নি। |
|
ছবি: প্রকাশ পাল। |
শেষে ২০১১ সালের ২০ জানুয়ারি কাউন্সিলর ঠিকাদার এবং সোমনাথকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। ওই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি ঠিকাদারের সঙ্গে সোমনাথের একটি চুক্তি হয়। সেই অনুযায়ী, সোমনাথকে নিজের টাকায় বাড়ি তৈরি করে নিতে বলা হয়। ঠিক হয় নির্দিষ্ট সময়ে চারটি কিস্তিতে তাঁকে দেড় লক্ষ টাকা দেবেন ঠিকাদার। সোমনাথ বলেন, “সব টাকা ঢেলে বাড়ির অনেকটা করে ফেলি। কিন্তু ঠিকাদার একটা টাকাও দেননি। এ দিকে, বাড়িতে শ্যাওলা ধরে গিয়েছে।” সরস্বতীদেবী বলেন, “আমাদের সমস্ত জমানো টাকা শেষ। প্রচুর দেনাও হয়ে গিয়েছে। কত বার ওঁদের হাতে-পায়েও ধরেছি। কাজ হয়নি।” উপায়ান্তর না দেখে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানান সোমনাথ। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের আবাসন ও নগর দারিদ্র্য দূরীকরণ মন্ত্রক থেকে এ রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের সচিবকে চিঠি পাঠানো হয়। তাতে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে।
রাজীববাবু অবশ্য অভিযোগ মানছেন না। তাঁর বক্তব্য, ওই প্রকল্পে যে টাকা পাওয়া যায়, তা বাজারদর অনুযায়ী নগন্য। ফলে, উঁচুমানের ইমারতি দ্রব্য দেওয়া সম্ভব নয়। রাজীববাবু বলেন, “সোমনাথ দাবি করেন, সর্বোচ্চ মানের ইট-বালি সরবরাহ করতে হবে। আমরা যথাসম্ভব ভাল মানের ইট-বালি দিয়েই ওঁর বাড়ি তৈরি করছিলাম। কিন্তু সোমনাথবাবু তা ফেরত পাঠিয়ে দেন। এতে আমার অনেক লোকসান হয়। এই সব নিয়ে ওর কাজ করতে সমস্যা হচ্ছিল। তা ছাড়া, পুরসভার নকশার বাইরে গিয়ে উনি বাড়ি তৈরি করছিলেন। বারণ করলেও শোনেননি। ওভারসিয়ার জানিয়েছেন, ওই বাড়ির টাকা পুরসভা দেবে না। ফলে, দোষ না করেও পুরো দায়টাই আমার উপরে চেপে যাচ্ছে।’’ ওই ঠিকাদারের দাবি, ওই ওয়ার্ডেই আরও ১৩টি বাড়ি তিনি তৈরি করেছেন। কোনও সমস্যা হয়নি। তিনি বলেন, “ওই প্রকল্পে কাজের টাকা এখনও হাতে পাইনি। আমি ছোটখাট ঠিকাদার। এখন এমন পরিস্থিতি, ধারদেনা করে আমার দিন কাটছে। তা-ও বলেছি, পুরসভা ওই বাড়ির টাকা দেওয়ার নিশ্চয়তা দিলে যে ভাবে হোক সোমনাথকে টাকা দিয়ে দেব।”
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সিপিএমের সমীরেশ রায় বলেন, “বিএসইউপি-র নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বাড়িটি তৈরি হয় বলে পুরসভার চেকিংয়ে ধরা পড়ে। তাই, পুরসভা ঠিকাদারের টাকা আটকে দেয়। বাড়িটি যাতে তৈরি হয়, সে জন্য আমি মধ্যস্থতা করি। ঠিকাদারের সঙ্গে সোমনাথের চুক্তি হয়। কিন্তু ঠিকাদার কথা রাখেননি। আমি কড়া পদক্ষেপ নেওয়ায় ওই ঠিকাদারকে তাড়িয়ে অন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে পুরসভার তরফে।” কাউন্সিলরের কথায়, “যে ভাবে বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে, তাতে পরিদর্শন হলে কিন্তু উপভোক্তারই সমস্যা হবে। কেননা, নিয়ম না মেনে উনি বাড়ি তৈরি করেছেন। আমরা চাই, বাড়িটা তৈরি হোক।”
পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “বিষয়টি নিয়ে ওঁরা আমার কাছে এলে, নির্দিষ্ট করে এ নিয়ে বলতে পারব। অনেক সময় দেখা যায় জমি-সংক্রান্ত পারিবারিক বিবাদ বা অন্য কিছু কারণে প্রকল্পের কাজ বাধা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু না থাকলে, ওই বাড়ির কাজ কোনও অবস্থাতেই আটকে থাকবে না। আমরা তা অবশ্যই করে দেব।” পুরপ্রধান বলেন, “কাজ অনুযায়ী সব ঠিকাদারের টাকাই মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনিয়ম করায় ওই ঠিকাদারকে বাতিল করা হয়েছে।” |
|
|
|
|
|