নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত আরামবাগ এমনই দাবি আরামবাগ মহকুমা প্রশাসনের। সেচ দফতরের অধীন ভাঙা এবং ভঙ্গুর নদী বাঁধগুলির ৮০ শতাংশের সংস্কার হয়ে গিয়েছে দাবি করে মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “নদী বাঁধগুলিতে যা কাজ হয়েছে তার গুণমানের নিরিখে আরামবাগ মহকুমায় এ বার বন্যা প্রতিরোধ সম্ভব হবে। বাকি কাজও দ্রুত হচ্ছে।”
গত বুধবার আরামবাগের মজফ্ফরপুর থেকে খানাকুলের বালিপুর পর্যন্ত মুণ্ডেশ্বরী নদীর দু’পাড়ের বাঁধ সংস্কারের কাজ ঘুরে দেখেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন সেচ দফতরের চাঁপাডাঙা বিভাগের (মুণ্ডেশ্বরী ইরিগেশন) সহকারী বাস্তুকার আশিস চট্টোপাধ্যায় এবং পুড়শুড়ার বিডিও সম্রাট মণ্ডল। মহকুমাশাসক বলেন, “এ ধরনের ব্যাপক আকারে এবং মজুবত ভাবে বাঁধ সংস্কার এই প্রথম হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় দু’কোটি টাকার কাজ হয়েছে। জেলাশাসক ওই তহবিলের ব্যবস্থা করেছেন। এর আগে টাকার অভাবে কাজগুলি করা যাচ্ছিল না।” রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলের টাকায় কাজগুলি হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। |
মহকুমায় সেচ দফতরের অধীন নদী বাঁধগুলি না হয় বিপন্মুক্ত, কিন্তু বাকি যে বাঁধগুলি পঞ্চায়েত সমিতি দেখভাল করে, তার অবস্থা কেমন? মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগ ও চাঁপাডাঙা বিভাগ মিলিয়ে সেচ দফতরের অধীন ৯৮.৫ কিলোমিটার নদীবাঁধ। এ ছাড়া আরামবাগ, খানাকুল ১ ও ২, পুড়শুড়া এবং গোঘাট ১-এ প্রায় ২৪০ কিলোমিটার নদী বাঁধের দেখভাল করে পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিগুলি। সেচ দফতরের অধীন নদী বাঁধগুলি সংস্কার হলেও বাকি বাঁধগুলি অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন এলাকার মানুষ। আরামবাগের হরিণখোলার খোলতাজপুর, শেখপাড়ায় মুণ্ডেশ্বরী বাঁধের কোনও সংস্কারই হয়নি। পঞ্চায়েত সমিতি এবং সংশ্লিষ্ট হরিণখোলা-২ পঞ্চায়েত জানিয়েছে, বাঁধটি কয়েক বছরে আরও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বাঁধ মেরামত সম্ভব নয়। বিষয়টি দেখভালের জন্য জেলা পরিষদকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে পঞ্চায়েত সূত্রে জানানো হয়েছে। মহকুমার এমন অসংখ্য জায়গায় নদীবাঁধ অরক্ষিত বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
দক্ষিণবঙ্গে আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লক দিয়ে বয়ে গিয়েছে দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী, আমোদর (গোঘাট এলাকা), রূপনারায়ণ এবং দ্বারকেশ্বর। ডিভিসি, মাইথন, পাঞ্চেত এবং কংসাবতী থেকে ছাড়া জলে প্রতি বার ভাসে আরামবাগ। হরার, রামপুর, তারাজুলি, কানাদ্বারকেশ্বর, হরিণাখালি-সহ বেশ কিছু খাল নদীর সঙ্গে যুক্ত থাকায় সংলগ্ন গ্রামগুলিও প্লাবিত হয়। ৬টি ব্লকের মধ্যে ৫৪টি পঞ্চায়েতই বন্যাপ্রবণ। বর্ষা এলেই আতঙ্কে থাকেন খানাকুল ১ ও ২, পুড়শুড়া, আরামবাগের মানুষ। মহকুমাশাসকের কথায়, “একশো দিনের কাজ প্রকল্পে অধিকাংশ নদী বাঁধেরই সংস্কার হয়েছে। সেগুলি বন্যার ধাক্কা সামলাতে পারবে। খানাকুলের উদনা-বালিপুরের বিস্তীর্ণ নদী বাঁধে ভেটিভার চাষ হয়েছে, যা প্রায় ১৪ ফুট গভীরের মাটি ধরে রাখতে পারবে। বন্যা প্রতিরোধে রাজ্যে প্রথম আমরা বাঁধে ভেটিভার ঘাস চাষ শুরু করেছি। পরে অন্য সমস্ত নদী বাঁধে ওই ঘাস লাগানো হবে।” |