সম্পাদকীয় ২...
চাহিদা এবং জোগান
ক দশক পূর্বেও পশ্চিমবঙ্গের ছাত্ররা ব্যাকুল প্রতীক্ষায় থাকিত জয়েন্ট এন্ট্র্যান্স পরীক্ষার মেধাতালিকায় নিজের নামটি দেখিতে পাওয়ার প্রতীক্ষা। রাজ্যে জায়গা না মিলিলে কর্নাটকের কলেজগুলি ভরসা ছিল। সম্ভবত কলেজে ভর্তির মরসুমে হাওড়া হইতে বেঙ্গালুরু পর্যন্ত বিশেষ ট্রেনেরও ব্যবস্থা হইয়াছিল। আর এখন, রাজ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে মোট আসনের সংখ্যা ৩২,০০০। এই বৎসর তৃতীয় দফা কাউন্সেলিং-এর পরেও প্রায় ১২,০০০ আসন খালি পড়িয়া আছে। যাহাকে বলে পরিবর্তন। এই অবস্থা কেন? তাহার কয়েকটি আপাত কারণ আছে। যেমন, রাজ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সংখ্যা বিপুল হারে বাড়িয়াছে। ৩২,০০০ আসন বড় কম কথা নহে। সম্ভবত, রাজ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িবার চাহিদার তুলনায় জোগান এখন অনেক বেশি। কিছু কলেজে আসন খালি পড়িয়া থাকিবে, তাহা অস্বাভাবিক নহে। রাজ্যের নূতন কলেজগুলির মধ্যে কয়েকটিকে ‘কলেজ’ বলিতে হইলে যথেষ্ট কল্পনাশক্তির প্রয়োজন হয়। সেইগুলিতে না আছে পরিকাঠামো, না আছেন দক্ষ শিক্ষক। তবে কিনা কেবল বেসরকারি কলেজের নৈরাজ্য কিংবা অদক্ষ কলেজ প্রশাসনের শিক্ষাদানের মান ইত্যাদি যুক্তিতে এই সংকটের তল পাওয়া যায় না। যে দুইটি প্রতিষ্ঠান এখনও এই রাজ্যে সর্বাগ্রগণ্য, সেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটিতেও সব আসন পূর্ণ হয় নাই। ছাত্রছাত্রীদের নিকট এই প্রতিষ্ঠানগুলির গ্রহণযোগ্যতা এখনও যথেষ্ট, এবং এই কলেজগুলির শিক্ষামান লইয়া যতই প্রশ্ন উঠুক, চাকরির বাজারে ইহাদের স্বীকৃতি প্রশ্নাতীত। সেই কলেজগুলিরও একই হাল কেন?
সেই প্রশ্নের একটি উত্তর যদি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভর্তিব্যবস্থার বিশেষ রীতিনীতিতে থাকে, অন্য ব্যাপকতর উত্তরটি রহিয়াছে চাকুরির বাজারে। বহু দশক ধরিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রছাত্রীদের নিকট বিশেষ কাঙ্ক্ষিত ছিল, তাহার কারণ ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য একটি লোভনীয় চাকুরির বাজার ছিল। কার্যত আর কোনও শাখার ছাত্রছাত্রীরা আর্থিক ভাবে এত ভাল চাকুরি পাইতেন না। ফলে, উচ্চমেধা থাকিলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া প্রায় স্বতঃসিদ্ধ ছিল। বিশ্বায়ন এই সমীকরণটি বদলাইয়া দিয়াছে। এক দিকে, এখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িলেই আর সেরা চাকুরির দরজাটি খুলিয়া যায় না। বস্তুত, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া এখন ভাল বিজনেস স্কুলে এম বি এ পড়িতে ভর্তি হওয়ার আগের ধাপমাত্র। অন্য দিকে, আর পাঁচটি ক্ষেত্রে চাকুরির বাজার খুলিয়া গিয়াছে। অর্থনীতি পড়িয়াও এখন এক জন ইঞ্জিনিয়ারের সমধিক আয় করা সম্ভব। সংখ্যাতত্ত্বের ছাত্ররা তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনায় কম গুরুত্ব পান না। আর সরাসরি তথ্যপ্রযুক্তির ছাত্রদেরও চাকরি এবং অর্থকরী চাকরি প্রচুর। ফলে, ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়িলে জীবনের সতেরো আনাই ফাঁকি গেল, এমন মনোভাব ক্রমেই কমিতেছে। বাজার পাল্টাইতেছে বলেই পাঠজগতের মানচিত্রও পাল্টাইতেছে। কথাটি শুধু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেই সত্য নহে। গোটা দেশেই ছবিটি কমবেশি এক। অন্ধ্র প্রদেশেও এই বৎসর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসন খালি পড়িয়া আছে। এই পরিবর্তনটি সামান্য নহে, চোখে ঠুলি পড়িলেই ইহা অদৃশ্য হইয়া যায় না। বিশ্ব বাজারের হাত ধরিয়া দেশের বাজারে আসা এই নূতন পরিবর্তনের ছাপ কিন্তু শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের মানচিত্রে পড়ে নাই। চাহিদা ও জোগানের মধ্যে এই বিপুল দূরত্বের কারণেই বর্তমান সংকট। এই সংকট হইতে মুক্ত হইবার স্বল্পমেয়াদি পথ নিশ্চয় বাহির হইবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সমাধানটিও ভাবনার পরিসরে রাখা দরকার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.