শহর ও শহরতলির থানাগুলিতে নজরদারি বাড়াতে ক্লোজ্ড সার্কিট টিভি (সিসিটিভি) বসানোর পরিকল্পনা ছিল লালবাজারের কর্তাদের। বহু ক্ষেত্রেই তা বাস্তবায়িত হয়নি। যার জেরে থানার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তেও অসুবিধায় পড়ছেন পুলিশকর্তারা। কলকাতা পুলিশের নতুন থানাগুলিতে এই সমস্যা আরও প্রকট বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “নতুন এলাকা দূর অস্ৎ, খোদ কলকাতার অনেক থানাতেই সিসিটিভি ও ক্যামেরার ঘাটতি আছে। ক্যামেরা কোথায় বসবে, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।” পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের সময়ে ধর্ষিতা থানার দুই অফিসারের বিরুদ্ধে অশালীন ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন। তদন্তে নেমে লালবাজারের কর্তারা দেখেন, পার্ক স্ট্রিট থানায় সিসিটিভি থাকলেও তা বসানো হয়নি। পুলিশকর্তারাই বলছেন, থানার লক-আপ, ডিউটি অফিসারের টেবিল এবং পরিসরে ক্যামেরায় নজরদারির পাশাপাশি তদন্তকারী অফিসারদের ঘরেও ক্যামেরা থাকা জরুরি। কিন্তু পার্ক স্ট্রিট থানায় তা ছিল না। তাই অভিযুক্ত অফিসারেরা শাস্তি পেলেও ঠিক কী ঘটেছিল, তার সচিত্র প্রমাণ আজও মেলেনি।
এমনই হাজারো সমস্যায় পড়ে নাকাল হচ্ছেন সংযোজিত এলাকার পুলিশকর্মীরা। গত ১ সেপ্টেম্বর নতুন এলাকা কলকাতা পুলিশের আওতায় আসার পরে রাজ্য পুলিশের ৯টি থানা ভেঙে ১৭টি থানা তৈরি হয়। রাজ্য পুলিশের আগের ৯টি থানায় সিসিটিভি বসানো থাকলেও গরফা, পাটুলি কিংবা রাজাবাগানের মতো নতুন থানাগুলিতে সেই ব্যবস্থা নেই। পুলিশ অফিসারেরা বলছেন, রাজনৈতিক ডামাডোল-সহ নানা কারণে ইদানীং থানায় বিক্ষোভ-গোলমাল লেগেই রয়েছে। অনেক সময়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা থানায় ঢুকে ভারপ্রাপ্ত অফিসারকে শাসানিও দিচ্ছেন। কিন্তু ছবি-সহ প্রমাণ না থাকায়, সেগুলি প্রমাণ করা যাচ্ছে না। ভাঙচুরের ঘটনায় কারা মূল অভিযুক্ত, তা-ও চিহ্নিত করা যাচ্ছে না বলে পুলিশকর্তাদের দাবি। লক-আপে বন্দিদের উপর নজরদারি চালাতেও সিসিটিভির প্রয়োজন।
পুলিশের একাংশের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রেই থানায় অভিযোগ জানাতে আসা সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন কর্মীরা। কোথাও কোথাও ধর্ষণ এবং শ্লীলতাহানির মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগকেও আমল দেন না কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার। নিয়ম মেনে সিসিটিভি লাগানো হলে, সেগুলিতে অনেকটাই রাশ টানা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে বিভাগীয় তদন্তেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জোরালো প্রমাণ মিলবে বলে তাঁরা মনে করছেন।
লালবাজারের কর্তারা কি আদৌ থানাগুলিতে সিসিটিভি বসাতে সচেষ্ট? কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (এস্ট্যাবলিশমেন্ট) চঞ্চল দত্ত বলেন, “শুধু সিসিটিভি নয়, কলকাতা এবং শহরতলির সব ক’টি থানাতে সিসিটিভির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থাও চালু হবে।” কিন্তু কত দিনে? প্রশ্নটা রয়েই গেল। |