মাত্র গত শুক্রবারেরই ঘটনা। স্থানীয় পাতিসাড়া গ্রামের বধূ শিউলি মেটের প্রসবকালীন যন্ত্রণা উঠেছিল। ফোন করা হয় স্থানীয় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু সেখান থেকে মাতৃযান প্রকল্পের গাড়ি যতক্ষণে বাড়িতে পৌঁছল ততক্ষণে সব শেষ। প্রসবের সামান্য পরেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে মারা যায় শিউলিদেবীর সদ্যোজাত কন্যাসন্তানটি।
নানুর থানার থুপসাড়া পঞ্চায়েত এলাকার গ্রামগুলির ক্ষেত্রে এটা কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। কারণ ওই এলাকার প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার আওতায় তৈরি হওয়া প্রায় ৭ কিমি দীর্ঘ রাস্তাটির বেহাল দশা। অভিযোগ, যার জন্য ভুক্তভোগী হচ্ছেন বাসাপাড়া, গোয়ালপাড়া, রোহিনীপুর, দান্যপাড়া, হারমুর, কুঠিরপাড়া, থানাঘাট, পাতিসাড়া প্রভৃতি গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দা। স্থানীয় গ্রাম সংসদ থেকে পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসন ও জেলাশাসকের দফতরে বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনও সুরাহা পাননি বলেই বাসিন্দাদের দাবি। রবিবার ক্ষোভে ফেটে পড়লেন তাঁদেরই একাংশ। একই দিনে রোহিনীপুর ও দান্যপাড়ায় ওই রাস্তার দু’টি পৃথক জায়গায় অভিনব প্রতিবাদ করলেন তাঁরা। প্রায় হাঁটুজলে থাকা কর্দমাক্ত ওই রাস্তায় ধান পুঁতে প্রতিবাদ জানালেন এলাকাবাসী। |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু দিন ধরেই ওই রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হচ্ছিল। শুক্রবারের মর্মান্তিক ঘটনার পর এ দিনই দান্যপাড়ার কৃষক ধানু শেখ গোরুর গাড়িতে ধান বিক্রি করতে গিয়ে জমিতে ঢুকে যায় তাঁর গাড়ি। রাস্তা আর পাশের জমির মধ্যে কোনও পার্থক্য না থাকায় একই দশা হয় শহিদুল্লাহ শেখ ও মুনিব শেখদেরও। দান্যপাড়ার বাসিন্দা মহম্মদ আইনুল হক, বধূ মেহরুন্নেসা বেগমদের অভিযোগ, “বহুদিন ধরে রাস্তা সারানো হচ্ছে না। বর্ষার সময় এ রাস্তা দিয়ে চলাচল কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।” অন্য দিকে, বাসাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী রিয়া খাতুন, শবনম খাতুন ও বাসাপাড়া জ্ঞানপীঠ আশ্রমের ছাত্রী তামান্না আফরিনদের দাবি, “রাস্তার অবস্থা এত খারাপ, স্কুলে যাওয়া প্রায় বন্ধ হতে চলেছে।” মহম্মদ আইনুল হক বলেন, “বৃষ্টির দিনে রোজ এখানে এমনটাই হয়। তাই প্রতিবাদে নামলাম।” এ দিন এলাকাবাসী নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে এই প্রতিবাদে নামেন।
একই দিনে একই রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে দু’ জায়গায় এমন প্রতিবাদে কিছুটা হলেও টনক নড়েছে প্রশাসনের। স্থানীয় থুপসাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের নুরুন্নেসা বেগম এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য না করতে চাইলেও নানুরের বিডিও সজল দাস বলেন, “খোঁজ নিয়ে জানব ওই রাস্তা কোন প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। সমস্যা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” স্থানীয় বিধায়ক, তৃণমূলের গদাধর হাজরা-র দাবি, “এই রাস্তার সংস্কারের বিষয়টি পরিকল্পনার মধ্যে আছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অন্য দিকে, জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনার আশ্বাস, “অতিরিক্ত জেলাশাসককে (জেলাপরিষদ) বিষয়টি দেখার জন্য বলেছি। সমস্যা মেটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |