‘মমতা-জোট’ ছাড়তে চেয়ে দিল্লির অনুমতি চায় কংগ্রেস
ঞ্চায়েতে তো বটেই, সামগ্রিক ভাবেই দলের ‘প্রাসঙ্গিকতা’ ধরে রাখতে জোট ছেড়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুমতির জন্য হাইকম্যান্ডের কাছে দরবার করতে চায় রাজ্য কংগ্রেস।
হাইকম্যান্ড যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘সংঘাতে’ যেতে খুব একটা আগ্রহী নয়, তা রাজ্যের নেতারা জানেন। তা সত্ত্বেও তাঁরা সেই রাস্তাতেই হাঁটতে চান। শনিবার প্রদেশ কংগ্রেসে কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে ঠিক হয় পঞ্চায়েতে কংগ্রেসও একলাই লড়বে। বৈঠকেই জোট ছাড়ার প্রস্তাব দেন শঙ্কর সিংহ। যিনি তৃণমূলের সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ে নদিয়ার কুপার্স ক্যাম্প পুরসভা ধরে রেখেছেন। শঙ্কর এমনিতেই ঘোষিত মমতা-বিরোধী। তাঁর মতে সায় দেন সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু), কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ঘোষ প্রমুখ। তবে রাজ্য মন্ত্রিসভায় কংগ্রেসের সদস্যরা নীরবই ছিলেন।
বৈঠকে একাধিক নেতা প্রশ্ন তোলেন, মন্ত্রিসভায় থেকেও ধারাবাহিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রী সহ তৃণমূলের অন্য মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতাদের একাংশের কাছে ‘অপমানিত’ হওয়ার পর বা তৃণমূলের কাছে ‘আক্রান্ত’ হওয়ার পরও আর জোটে থাকার প্রয়োজন রয়েছে কি না। নদিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর জোট ছেড়ে একক ভাবে এগোনোর জন্য হাইকম্যান্ডের অনুমতি চাওয়ার প্রস্তাব দেন। তাঁর বক্তব্য, নতুন সরকারের ১৩ মাসেই শিক্ষায় নৈরাজ্য, আইনশৃঙ্খলার অবনতি-সহ একাধিক বিষয়ে তৃণমূলের গ্রহণযোগ্যতা কমেছে। জোটে থাকার বাধ্যবাধকতায় সেই ‘শূন্যতা’ পূরণে কংগ্রেস এগোতে পারছে না। উল্টে তৃণমূলের হেনস্থার শিকার হচ্ছে। এখন দলের প্রাসঙ্গিকতা বাড়াতে জোট ছেড়ে একক ভাবে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানো উচিত। শঙ্কর পরামর্শ দেন, রাজ্য নেতৃত্ব অবিলম্বে হাইকম্যান্ডের কাছে ওই বিষয়ে অনুমতি চান।
বৈঠকের পরেও শঙ্কর বলেন, “কংগ্রেস জোটে থেকেও কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। হাইকম্যান্ড কখনও বলছে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হতে। কখনও নিষেধ করছে। এ ভাবে দল চলে না। এর জন্য মানুষও কংগ্রেসের উপর আস্থা হারাবে। দলের নিজস্ব আন্দোলন-কর্মসূচি স্থির করতে হাইকম্যান্ডের সঙ্গে আলোচনায় বসাটা জরুরি। বৈঠকে সে কথাই বলেছি।” তাঁর সুরেই মালদহ জেলা সভাপতি ডালুবাবু, প্রদীপবাবুরা বলেন উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ার মতো গুটি কয়েক জেলায় কংগ্রেস শক্তিশালী। কিন্তু বাকি জেলায় নয়। নিজেদের ক্ষমতা বাড়াতে হলে ‘পরস্মৈপদী’ হয়ে জোটে থাকা অর্থহীন। সর্বসম্মত ভাবে বৈঠকে এই প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য জানান, এ ব্যাপারে হাইকম্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা করতে তাঁরা প্রস্তুত।
জেলা নেতৃত্বের একাংশের তরফে জোট-ত্যাগের দাবি উঠলেও বৈঠকে কার্যত ‘নীরব’ই ছিলেন রাজ্যের কংগ্রেসি মন্ত্রীরা। মানস ভুঁইয়া, আবু হেনা বৈঠক শুরুর কিছু পরেই মহাকরণে চলে যান মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে। সাবিনা ইয়াসমিন, সুনীল তিরকেরা দলীয় বৈঠকে আগাগোড়াই ছিলেন শ্রোতার ভূমিকায়। বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীও জোট ছাড়ারই পক্ষে। তবে তিনি বৈঠকে ছিলেন না। রায়গঞ্জের সাংসদ দীপা দাশমুন্সি ‘নীরব’ মন্ত্রীদের কটাক্ষ করে বৈঠকে দাবি তোলেন, চুপ করে না-থেকে দলের নেতৃত্বের সঙ্গে মন্ত্রীদেরও সহমত হওয়া প্রয়োজন। তাঁর প্রশ্ন মন্ত্রিত্বে থেকেও ‘অচ্ছুৎ’-এর মতো ব্যবহার পেয়েও তাঁরা কেন প্রতিবাদ করছেন না! জেলায় জেলায় সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যে যে জেলায় কংগ্রেসের সংগঠন নেই সেই জেলাগুলি ধরে ধরে প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতরে এনে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করে দিতে হবে। নয়তো প্রদেশ নেতৃত্বকে জেলায় গিয়ে বোঝাতে হবে পরবর্তী পদক্ষেপ। কী বিষয় নিয়ে দল প্রচার করবে, তা-ও স্পষ্ট করার অনুরোধ জানান তিনি।
তবে তৃণমূল এবং কংগ্রেস পঞ্চায়েতে একলা লড়ার সিদ্ধান্ত নিলেও স্থানীয় বাধ্যবাধকতায় ‘আপসে’ জোট হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে বলেই মনে করছে কংগ্রেস। যে জন্য পঞ্চায়েতে একলা চলার সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও স্থানীয় স্তরে জোটের ব্যাপারে স্থানীয় নেতৃত্বকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রদীপবাবু। তাঁর কথায়, “বুথভিত্তিক কমিটি তৈরি করে পুজোর আগেই জেলায় জেলায় সম্মেলন করার নির্দেশ দিয়েছি। নিচুতলায় কোনও দলের সঙ্গে জোট প্রয়োজন হলে, তার সিদ্ধান্ত স্থানীয় নেতৃত্বই নেবে।” তবে পঞ্চায়েতের উপর আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ তাঁরা যে বরদাস্ত করবেন না, তার ইঙ্গিত দিয়ে প্রদীপবাবুর হুঁশিয়ারি, “যেখানে পঞ্চায়েত ভাল কাজ করছে, সেখানেও আমলাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে কেন? যেগুলোয় কাজ হচ্ছে না, সেগুলো সরকার দেখুক। না-হলে বিডিও অফিস ঘেরাও করবে কংগ্রেস!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.