সরকারি বাসে ন্যূনতম ভাড়া বৃদ্ধি
জট খুলল না রাজ্য ও বাস মালিক বৈঠকে
মুখ্যমন্ত্রীর দেখা মিলল। মন্ত্রিগোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠকও হল। কিন্তু কাজের কাজ হল না কিছুই।
সরকার বাস মালিকদের জানিয়ে দিল, এই মুহূর্তে বাস ভাড়া বাড়ানো সম্ভব নয়। তবে ভাড়া না বাড়িয়ে আয় কী ভাবে বাড়ানো সম্ভব, শনিবার মহাকরণে বাস মালিকদের সঙ্গে মন্ত্রীদের বৈঠকে তার কার্যত কোনও খোঁজই মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে বাস মালিকরা সরকারকে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ভাড়া না বাড়ালে পরিবহণ শিল্পকে বাঁচানো যাবে না। কথাটা তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকেও জানিয়ে দিয়েছেন।
তবে এ দিনই খুচরোর অভাবের জন্য সরকারি বাসের ক্ষেত্রে ভাড়া পরিবর্তন করা হল। যার ফলে ন্যূনতম ভাড়া চার কিলোমিটার পর্যন্ত সাড়ে চার টাকার বদলে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত পাঁচ টাকা করা হল। এ ক্ষেত্রে আবার কিছু কিছু মহল থেকে বলা হচ্ছে, মুখে অন্য কথা বললেও এই ভাবে সরকার ঘুর পথে ভাড়া বাড়িয়ে নিল। তবে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই সিদ্ধান্তকে ‘ভাড়া বৃদ্ধি’ বলতে নারাজ।
বেসরকারি বাসের ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে গত ৩১ জুলাই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন বাস মালিকেরা। পরে, সরকারের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে সেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন তাঁরা। বেসরকারি বাস চালানোর খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভাড়া না বাড়িয়ে কী করে আয় বাড়ানো সম্ভব, তার পথ বের করতে তিন জন মন্ত্রীকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই কমিটির সঙ্গেই এ দিন বৈঠকে বসেছিলেন বাস মালিকেরা। বাড়তি প্রাপ্তি হিসেবে ছিল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সুযোগ।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিগোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য রাজ্যের পার্থবাবু বলেন, “বাস মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানালেও এখনই তা সম্ভব হচ্ছে না বলে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” একই সঙ্গে এ দিনই পরিবহণ দফতর ঠিক করেছে, হয়রানি কমাতে বাসের পারমিট ও চালকদের লাইসেন্স হাতে হাতে দেওয়া হবে। এ জন্য আলাদা একটি কাউন্টার খোলা হবে।
কিন্তু ভাড়া না বাড়িয়ে কোন পথে আয় বাড়ানো যাবে?


তিন শহরের ভাড়া
মুম্বই
দুরত্ব(কিলোমিটারে) ভাড়া(টাকায়)
১০
১২
১৫
১৮
২০
৪০
দিল্লি
ভাড়া(টাকায়)
১০
১৫
কলকাতা
দুরত্ব(কিলোমিটারে) ভাড়া(টাকায়)
(বাস সংগঠনগুলির তরফে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী)
পার্থবাবু জানান, আদালতের নির্দেশে কেউ যদি ১৫ বছরের পুরনো বাস বদলে নতুন বাস কেনেন, তা হলে সরকারি ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ানো হবে। বাসের গায়ে যে বিজ্ঞাপন থাকে, তার থেকে আয়ের একটা অংশ এত দিন পেত সরকার। এ বার থেকে তারা সেই অর্থ নেবে
না। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে যাঁরা নতুন বাস, ট্যাক্সি কিনেছেন, তাঁদের অনেকেই মাসিক কিস্তি দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। এ নিয়ে ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে কথা বলে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র একটি রিপোর্ট তৈরি করবেন বলেও জানান পার্থবাবু।
সরকারি সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করে পরিবহণ দফতরের এক মুখপাত্র জানান, এখন নতুন বাস কেনার জন্য ৫০ হাজার টাকা ভর্তুকি দেয় রাজ্য। সেই অঙ্কটা বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। সরকারের যুক্তি, বাজারে ভারত স্টেজ-৪ প্রযুক্তির বাস বেশি নেই। তাই ১৫ বছরের পুরনো বাসগুলি বদলে নতুন স্টেজ-৩ বাস কেনারই পরামর্শ দিয়েছে রাজ্য। এ জন্য বাস মালিকদের আরও ছ’মাস সময় দেওয়া হয়েছে। পার্থবাবুর কথায়, “নতুন বাস কিনলে ১৫ বছরের জন্য নিশ্চিন্ত হতে পারবেন বাস মালিকরা।”
বাসের মতো মিনিবাস, ট্যাক্সি, এমনকী অটোর ক্ষেত্রেও ভর্তুকি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। মিনিবাসের ক্ষেত্রে ৩০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজার টাকা, ট্যাক্সিতে ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার এবং অটোর ইঞ্জিন টু-স্ট্রোক থেকে ফোর-স্ট্রোক করলে মিলবে ৫ হাজার টাকা ভর্তুকি। আর নতুন অটো কিনলে মিলবে ১০ হাজার।
কিন্তু প্রশ্ন হল, এ ভাবে কী সুরাহা মিলবে? বাস মালিকরা বলছেন, রাস্তায় এখন যে সব বাস চলছে, তার ৯০% ভারত স্টেজ-৩। তাই নতুন বাস কেনা নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে মালিকদের বাড়তি লাভ হবে না। এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধন দাস, তপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের দীপক সরকার ও রানা রক্ষিতদের বক্তব্য, এই প্রথম রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও মূল সমস্যার সমাধান সূত্র মেলেনি। তাঁদের মতে, ২০০৯ সালের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ডিজেলের লিটারপ্রতি দাম প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে। বেড়েছে আনুসঙ্গিক খরচও। এ সব কারণে প্রতিদিন প্রতিটি বাস চালাতে বাড়তি ৬০০ টাকা করে খরচ হচ্ছে। তাই সরকারের কাছে তাঁরা আর্জি জানিয়েছেন, মিনিবাসের সঙ্গে তাদের ভাড়ার কাঠামো এক করে দেওয়া হোক।
বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের ক্ষেত্রে সরকার নিজের অংশ না নিলেও কয়েকটি শর্ত আরোপ করেছে। যেমন, বাসের গায়ে মদের বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না। কোনও অশোভন, কুরুচিকর এবং সরকারের নীতি বিরোধী কোনও বিজ্ঞাপনও চলবে না। বিজ্ঞাপনের রঙও হতে হবে মনোরম। বাস মালিকরা অবশ্য বিজ্ঞাপন বাবদ আয়ের উপরে বিশেষ ভরসা করতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, বিজ্ঞাপন থেকে আয় হয় সামান্য। তাই এটা আয় বাড়ানোর পথ হতে পারে না। এ দিনের বৈঠকের পরে সরকার যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বিরোধিতা করেছে সিটু। সিটু নেতা সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বেসরকারি বাস-মিনিবাস-ট্যাক্সিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে যদি কিছু আয় হয়, তা হলে তা মালিকদের পকেটে যাবে।” তাঁর বক্তব্য, প্রতিদিন তেলের দাম বাদ দিয়ে যে আয় হয়, পরিবহণ কর্মীরা তা থেকে কমিশন পান। সেটাই তাঁদের রোজগার। যা প্রতিদিনই কমছে। বহু পরিবহণ শ্রমিকও কাজ হারিয়েছেন। তাঁদের সমস্যার সমাধান হল না। সরকারি বাসের ভাড়া ৫০ পয়সা বাড়ানোর সিদ্ধান্তকেও ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য সুভাষবাবুর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.