হিংসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। তার মঞ্চ থেকেই ছড়াল হিংসা।
দক্ষিণ মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে অসমের সংঘর্ষ এবং মায়ানমারে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হয়েছিল বেশ কয়েকটি মুসলিম সংগঠন। বক্তৃতা চলার সময় হঠাৎই মারমুখী হয়ে উঠল জনতা। যার জেরে প্রাণ হারাতে হল দু’জনকে। পুড়ল পুলিশের ১৮টি ও সংবাদমাধ্যমের ৪টি গাড়ি। শ্লীলতাহানি হল ৫ জন মহিলা কনস্টেবলের। পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে গুলি ছোড়া হল তাদের দিকেই। আহত হয়েছেন অন্তত ৩৬ জন পুলিশকর্মী-সহ ৪৬ জন। র্যাফ নামিয়ে জারি করা হয়েছে ‘হাই অ্যালার্ট।’ দিনের শেষে পরিস্থিতি অবশ্য নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।
এ দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিল স্থানীয় রাজা অ্যাকাডেমি। সমর্থন জানিয়েছিল সুন্নি জামাইতুল উলমা এবং জামাত-ই-রাজা-ই-মুস্তাফা-সহ কয়েকটি সংগঠন। এ দিনের হিংসার দায় অস্বীকার করেছে সংগঠনগুলি। |
জ্বলছে পুলিশ ভ্যান। পালাচ্ছে পুলিশ। শনিবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই |
রাজা অ্যাকাডেমি সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সৈয়দ বলেন, “আমরা যখন প্রতিবাদ জানাচ্ছিলাম তখন হঠাৎই কিছু ব্যক্তি ক্ষেপে ওঠেন এবং ভাঙচুর শুরু করেন। তবে আমরা কখনওই হিংসা সমর্থন করিনি। এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়।” পুলিশেরও বক্তব্য, হিংসার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিল কিছু দুষ্কৃতী। আগুন ধরানোর জন্য নিয়ে এসেছিল পেট্রোলও। তবে এ দিন কাউকে ধরপাকড় করা হয়নি।
মুম্বইয়ের এই ‘অনভিপ্রেত’ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। তিনি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করবেন বলেও জানান। তাঁর মতে, অসমের সংঘর্ষ নিয়ে অগপ, বিজেপি রাজনৈতিক খেলা খেলছে। অসম সংঘর্ষ নিয়ে, এ দিন দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করেন এআইইউডিএফ নেতা বদরুদ্দিন আজমল। তিনি ঘটনার জন্য সরাসরি শাসকদল ও বিপিএফ প্রশাসনকে দায়ী করেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে এ দিন বুকে কালো ব্যাজ লাগিয়ে প্রতিবাদ জানাতে এসেছিলেন কয়েকশো মানুষ। আচমকাই পরিস্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। উত্তেজিত জনতা মারমুখী হয়ে উঠে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাদের ছোড়া পাথরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অন্তত ১০টি বাসও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শেষমেশ শূন্যে গুলি ছোড়ে পুলিশ। করতে হয় লাঠিচার্জও। সংঘর্ষ যাতে কোনও ভাবে ছড়াতে না পারে তার আগাম সতর্কতা হিসেবে স্থানীয় ধর্মস্থানগুলিতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
আহতদের ১৬ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গুরুতর জখম দু’জন মারা যান। তাঁদের মধ্যে এক জনের নাম মহম্মদ আফজল। অন্য জনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। জখমদের মধ্যে বেশ কয়েক জন সাংবাদিকও রয়েছেন বলে মনে করছে মুম্বই পুলিশ। সিএসটি স্টেশনের লাগোয়া এলাকায় এই অশান্তির জেরে এ দিন রেল চলাচল ব্যাহত হয়। সংলগ্ন রাস্তাগুলিতে সৃষ্টি হয় যানজট।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে শান্তিরক্ষার আবেদন জানিয়ে বলেছেন, কেউ গুজব ছড়াবেন না। অকারণে আতঙ্ক ছড়ালে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। শিন্দে এ দিনের ঘটনা নিয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের সঙ্গে কথা বলেছেন। |