গাফিলতিতে মৃত্যু প্রসূতির, নালিশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে শিলিগুড়ির আশ্রমপাড়ার একটি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বুধবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনার পর রোগীর পরিবারের লোকেরা অভিযুক্ত চিকিৎসক তথা নার্সিংহোমের কর্ণধার অশোক কুমার মাঝিকে ঘেরাও করে রাখেন। তাঁর দোষেই রোগী মারা গিয়েছে বলে রোগীর লোকজনদের চাপে মুচলেকা লিখে দিতে হয় ওই চিকিৎসককে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত রোগিণীর নাম শম্পা বসু (৩৫)। বাড়ি সুভাষপল্লিতে। গর্ভবতী অবস্থায় গত রবিবার তাঁকে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছিল চিকিৎসক অশোকবাবুর পরামর্শ মেনেই। শম্পাদেবীর ১০ বছরের এক ছেলেও রয়েছে। মৃতের পরিবারের তরফে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ জানানো হয়েছে পুলিশে। পুলিশ জানায়, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ, এ দিন বেলা সওয়া ২ টা নাগাদ শম্পাদেবী দুই যমজ মেয়ের জন্ম দেন। অস্ত্রোপচারের পর শয্যায় পাঠানো হলে শম্পাদেবীর সঙ্গে পরিবারের লোকেরা দেখা করলেও তার পর কাউকেই রোগীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ শম্পাদেবীর স্বামী স্বর্ণকমলবাবু নার্সিংহোমে গিয়ে দেখেন স্ত্রীর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অথচ সামনে নার্স বা কেউ নেই। তিনি চিকিৎসককে খবর দেন। অশোকবাবু নার্সিংহোমেই ছিলেন। তিনি রোগীর অবস্থা দেখে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। প্রথম সিলিন্ডারে অক্সিজেন ফুরিয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। পরে আরেকটি সিলিন্ডার দেওয়া হলেও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। অভিযুক্ত চিকিৎসক অশোকবাবু বলেন, “ওই রোগিণী উচ্চ রক্ত চাপের রোগী ছিল। এ সব ক্ষেত্রে নানা জটিলতা দেখা দিয়ে তাকে। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ঠিক নয়। রোগীর লোকজন ঘিরে ধরে দোষ স্বীকার করে লিখে দিতে বলায় তা করতে হয়েছে।” নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, সদ্যোজাত দুই শিশু কন্যা ভাল আছে। রোগীর লোকজন অবশ্য চিকিৎসকের যুক্তি মানতে নারাজ। পরিবারের লোকদের অভিযোগ, সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর চিকিৎসক রোগীকে উপযুক্ত পর্যবেক্ষণে রাখেননি। রোগীর সমস্য হচ্ছিল তা কেউ লক্ষ্য করেননি। রোগিণীর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে দেখে সন্ধ্যা নাগাদ পরিবারের লোকেরা খবর দিলে চিকিৎসকের টনক নড়ে। ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। স্বামী স্বর্ণকমলবাবুর দাবি, যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে আগে থেকেই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। কেবিনে রোগীকে রাখা হলেও অস্ত্রোপচারের পর রোগীর লোকদের কাউকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অস্ত্রোপচারের পর ওকে ঠিক মতো যত্ন নিয়ে দেখেননি চিকিৎসক।
তিনি বলেন, “এই গাফিলতির জন্যই এত বড় সর্বনাশ ঘটল। শ্বাসকষ্টের সময় যে অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রথমে লাগানো হয়েছিল তাতে অক্সিজেন ছিল না। পরে তা বদলানো হলেও রোগীকে বাঁচানো যায়নি। সময় মতো চিকিৎসা হলে হয়ত এই ঘটনা ঘটত না।” ঘটনার পর রোগীর পরিবারের লোকেরা গভীর রাত পর্যন্ত নার্সিংহোমে চিকিৎসককে ঘিরে রাখেন। মৃতার দিদি সোমা সাহার অভিযোগ, চিকিৎসায় গাফিলতির জন্যই এই ঘটনা ঘটল। তিনি বলেন, “অস্ত্রোপচারের পর শম্পাদেবীর মা বিভারানিদেবী মেয়েকে দেখতে গেলে তাঁকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। অথচ নার্স-চিকিৎসকেরা রোগিণীর দিকে খেয়াল রাখেননি।” |