‘নির্লিপ্ত’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ |
উধাও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞেরা, নার্সরা প্রসূতিদের দায়িত্বে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রঘুনাথগঞ্জ |
হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সংখ্যা ৮। অথচ, টানা বারো ঘণ্টা কারও দেখা পাওয়া গেল না। ৩৪ জন প্রসূতির প্রসব হল কোনও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ছাড়া, শুধু নার্সদের তত্ত্বাবধানেই। ২ জনের ‘সিজার’ প্রয়োজন হয়েছিল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁরা কাতরাতে থাকলেও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। তাঁদের ‘রেফার’ করে দিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত মহকুমাশাসকের হস্তক্ষেপে কোয়ার্টার থেকে চিকিৎসকদের ডেকে আনিয়ে অস্ত্রোপচার সারা হয়। ঘটনাস্থল জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল। বুধবারের এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরেই সুপার শাশ্বত মণ্ডলকে শো-কজ করেছে স্বাস্থ্যভবন। স্বাস্থ্যদফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস জানান, জঙ্গিপুরে এমনিতেই প্রসূতির সংখ্যা বেশি। সেখানে কেন চিকিৎসকদের কাজের সময়সূচি (রোস্টার) ঠিক ভাবে তৈরি হয়নি, এক জন চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে কেন অন্য চিকিৎসকদের সময় মতো পাওয়া গেল না, সব কিছু বৃহস্পতিবারের মধ্যে সুপারকে লিখিত ভাবে জানাতে বলা হয়েছে। এ দিন সুপারকে সারাদিন ধরে টেলিফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তার ফোন সব সময়ে ‘ব্যস্ত’ ছিল। |
বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসক অমিতাভ বিশ্বাস প্রসূতি বিভাগে ডিউটি করেন। এ দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ডিউটি ছিল স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সুস্মিতা সরকারের। তবে তিনি কাউকে না জানিয়ে এ দিন হাসপাতালে আসেননি বলে অভিযোগ। ওই চিকিৎসকের সঙ্গে হাসপাতাল থেকে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি। রোগীর পরিজনেরা নিরুপায় হয়ে ওই চিকিৎসকের চেম্বারেও যান। কিন্তু দেখা মেলেনি। পাওয়া যায়নি হাসপাতাল সুপার শাশ্বত মণ্ডলকেও। অভিযোগ, টেলিফোন করা হলেও ফোন কেটে দেন।
দুই প্রসূতি বৈজয়ন্তী রবিদাস ও শুকতারা বিবির অবস্থা খারাপ হতে দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ‘রেফার’ করে দায়িত্ব এড়ান। তখন নিরুপায় হয়ে রোগীর আত্মীয়েরা জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক তথা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি এনাউর রহমান-এর দ্বারস্থ হন। তিনি কোয়ার্টার থেকে চরণ মাজি ও দেবাশিস চক্রবর্তী নামে দুই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞকে ডেকে আনিয়ে অস্ত্রোপচার করান। ক্ষুব্ধ মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘দুপুরে রোগীদের আত্মীয়দের থেকে হাসপাতালের এই দুরবস্থার কথা জানতে পারি।” সুস্মিতাদেবী সাফাই, “আমাকে লিখিত ভাবে ডিউটি দেওয়া হয়নি। আমি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হলেও টিকাকরণ বিভাগের দায়িত্বে। স্ত্রীরোগ বিভাগের ডিউটি করার কথাই নয়। ওই বিভাগের সাত জন চিকিৎসক নিজেদের গাফিলতি ঢাকতে আমাকে ফাঁসাচ্ছেন।”
মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সাজাহান সিরাজের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, “আমি বদলি হয়ে চলে যাচ্ছি। দায়িত্ব বদল হয়ে গিয়েছে। বুধবার নবাগত অজয় চক্রবর্তীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া নিয়ে দু’জনেই ব্যস্ত রয়েছি। তাই কথা বলা সম্ভব নয়।” |