|
|
|
|
টিএমসিপিকে ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ’ হতে বলল তৃণমূল |
দেবারতি সিংহ চৌধুরী • কলকাতা |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘বিশৃঙ্খলার’ ঘটনায় দলের ছাত্র সংগঠনকে জড়িয়ে পড়তে সরাসরি নিষেধ করলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। যাতে ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগের জেরে আর দলের ‘ভাবমূর্তি’ ‘ক্ষুণ্ণ’ না হয়, সে জন্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-কে সতর্কও করা হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে রায়গঞ্জ, মাজদিয়া, কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজ-সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘বিশৃঙ্খলা’র অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। কোথাও গোলমাল হয়েছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে। কোথাও বা অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত শাসকদলের ছাত্র সংগঠন। বেশকিছু কলেজে টিএমসিপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেও বিশৃঙ্খলা হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই ঘটনাগুলির জেরে সরকারকে ‘বিড়ম্বনা’য় পড়তে হয়েছে। ছাত্র সংগঠনের পাশাপাশি দলের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামও অধ্যাপিকা-নিগ্রহের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। তা নিয়েও ‘বিড়ম্বনা’য় পড়তে হয়েছিল শাসকদলকে। আরাবুলের সমর্থনে আবার প্রকাশ্যে মিছিল করেছিলেন দলের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি। শেষপর্যন্ত স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি আয়ত্তে এসেছিল। কিন্তু তার পরেও রাজ্যের বেশকিছু কলেজ থেকে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ আসা বন্ধ হয়নি। এমনকী, বিভিন্ন কলেজে সংগঠনের মধ্যে গোষ্ঠালড়াইয়েরও খবর আসছে রাজ্য
নেতৃত্বের কাছে।
মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দলের ছাত্র সংগঠনের এ হেন ‘বিশৃঙ্খলা’ বরদাস্ত করবেন না, তা বুধবার তৃণমূল ভবনে এক বৈঠকে সংগঠনের কাছে স্পষ্ট করে দেন দলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সুব্রত বক্সি, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। আগামী দিনে যাতে এই ধরনের ঘটনায় তৃণমূল বা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয়, সে জন্য একজোট হয়ে টিএমসিপি-কে জেলায় জেলায় মমতা-সরকারের ‘উন্নয়নমূলক’ কাজের খতিয়ান তুলে ধরে প্রচারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট যে, সংগঠনের ‘নেতিবাচক’ ভাবমূর্তি মুছতে সরকারের ‘ইতিবাচক’ ভাবমূর্তি ব্যবহার করতে চাইছেন তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব। পাশাপাশি, পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলায় জেলায় ছাত্র সংগঠনের মারফতে সরকারের ভাবমূর্তিও ‘তুলে ধরতে’ চান তাঁরা।
আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের দলীয় সংগঠন শক্তিশালী করার পাশাপাশি টিএমসিপি-কে আপসে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটিয়ে নিতেও পরামর্শ দিয়েছেন নেতারা। বৈঠকের পরে এক ছাত্র নেতা বলেন, “টিএমসিপি-র অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও মেটানোর জন্য এ দিন নির্দেশ দেওয়া হয়। সবাইকে একজোট হয়ে সরকারের কাজ প্রচার করতে হবে। মিটিং-মিছিল করারও নির্দেশ দিয়েছেন নেতৃত্ব।” ছাত্র সংগঠনের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একসঙ্গে বৈঠকে ডেকে দলীয় নেতৃত্বের এই নির্দেশ দেওয়া থেকেই সেই প্রক্রিয়া শুরু হল বলে টিএমসিপির একাংশের অভিমত।
দলীয় স্তরে ছাত্র সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করার এই প্রয়াসের ফলশ্রুতি আগামী ২৮ অগস্ট ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সভায় দেখতে চায় তৃণমূল। দলনেত্রী মমতার নেতৃত্বে টিএমসিপি ওই দিন সভা করবে মেয়ো রোডে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে। সেই সভায় দলনেত্রী দলীয় ছাত্র সংগঠনকে মমতা শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়ার ‘বার্তা’ই দিতে চান বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। ওই দিন অন্যান্য বছরের মতো মহাজাতি সদনে সাংসদ অধীর চৌধুরী, দীপা দাশমুন্সি, প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সম্মেলন করবে কংগ্রেসের ছাত্র পরিষদ। গাঁধী মূর্তির পাদদেশে সভার আগে ১৩ অগস্ট উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, ১৭ অগস্ট জঙ্গলমহলে টিএমসিপির প্রচার-সভা হওয়ার কথা। |
|
|
|
|
|