টিম হোটেলের পাঁচ তলায় ৫৭৮ নম্বর ঘরে ক্রমাগত বেজে চলেছে টেলিফোন। মোবাইলে এসেই চলেছে একের পর এক অভিনন্দন বার্তা। তাতে অবশ্য আদৌ উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়ার কোনও কারণ দেখছেন না আট মাস ধরে একটা সুযোগের অপেক্ষায় থাকা মনোজ। বরং বিরাট কোহলির সঙ্গে অপরাজিত থেকে ম্যাচ জিতিয়ে ফেরেননি বলে আক্ষেপ যাচ্ছে না তাঁর। প্রেমদাসা থেকে ফিরে বুধবার ভোররাতে একান্ত সাক্ষাৎকারে সব কিছু খোলসা করে দিলেন মনোজ তিওয়ারি।
প্রশ্ন: সকালে মনে হচ্ছিল চাপে আছেন। এখন আপনাকে দেখে ভীষণ ‘রিলিভড’ মনে হচ্ছে?
মনোজ: নিশ্চয়ই ‘রিলিভড’। কিন্তু ব্যাটিংয়ে সেট করে গিয়ে আড়া খেলতে যাওয়াটা ভুল হয়েছে। বলতে পারেন ওভার কনফিডেন্স। বল ভাল দেখছিলাম, বিরাটের সঙ্গে থাকা উচিত ছিল। হিট অব দ্য মোমেন্টে বলটা লেগে ঘোরাতে গেলাম। এখন আফসোস হচ্ছে। তবে এটা জানি, ব্যাটিংটা খারাপ করছিলাম না। বিরাট খুব সাহস দিচ্ছিল। যাক গে, পরের ম্যাচটায় দেখা যাবে।
প্র: ধোনি প্রচারমাধ্যমকে বলেছেন, টিমে অলরাউন্ডার না থাকলেও তাঁর হাতে প্রচুর বিকল্প। যেমন পার্ট টাইম স্পিনার হিসেবে আপনাকে আবিষ্কার?
মনোজ: তাই? আমি বলব, ও আমার উপর আস্থা রেখেছিল। যখন আমাকে ৩২ নম্বর ওভারে বল দিয়েছিল, বলেছিল ফিল্ড অনুযায়ী বল রাখতে। প্রথম ওভারেই যে উইকেট আসবে ভাবিনি। উইকেটটা পাওয়ার পরে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল। ফ্লাইট করাতে ভয় পাইনি। |
প্র: কিন্তু টানা দশটা ওভার বল পাওয়া? চার-চারটে উইকেট। ভেবেছিলেন?
মনোজ: না ভাবিনি। দশ ওভার বল করতে হবে, সেটাই ভাবিনি। টিমমেটরা সবাই পাশে ছিল। একটা কথা বলতে চাই। লেগস্পিন নিয়ে নেটে কিন্তু আমি নিয়মিত খেটেছি। বল করেছি গম্ভীর, সহবাগ, ধোনিদের। গুগলি বা রং ওয়ানটা সময় পেলেই প্র্যাক্টিস করেছি। মনে রাখবেন, গুগলিতে দুটো উইকেট এসেছে। ওই বলটার জন্য খাটনিটা ম্যাচে ম্যাজিকের মতো কাজে এল।
প্র: শেষ ওভারটায় ১৮ না দিলে বোলিং গড় আরও ভাল হত...
মনোজ: মালিঙ্গা যে চালাবে আমি জানতাম। ভেবেছিলাম একটা মিসটাইম হবে। ভাগ্য খারাপ, হয়নি। ওই একটা ওভার বাদ দিলে বল হাতে আমি যা যা করতে চেয়েছি, পেরেছি। যে কোনও টিম গেমে টিমের কাজে লাগতে না পারার চেয়ে খারাপ কিছু হয় না। দিনের শেষে টিমের জন্য আমি যে কিছু না কিছু করতে পেরেছি, সেটাই বড় কথা।
প্র: টানা আট মাস বাইরে বসে থাকার পরে প্রথম ম্যাচ। সকালে যখন শুনলেন খেলতে হবে, চাপ তৈরি হয়নি?
মনোজ: একেবারে না। আমি খেলব কি খেলব না, সেটা টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমাকে সব সময় তৈরি থাকতে হবে। যাতে আমার যদি দরকার পড়ে, টিমের কাজে যেন লাগতে পারি। সেটাই নিয়ম।
প্র: এর পরেও তো পরের ম্যাচে বাদ পড়তে হতে পারে?
মনোজ: সুযোগ পেলে আমার কাজ প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করে দেখানো। অন্য কিছু নিয়ে ভাবার দরকার আছে বলে মনে হয় না।
প্র: আজ সকালের মনোজ তিওয়ারি আর রাতের মনোজ তিওয়ারির মধ্যে তফাতটা কোথায়?
মনোজ: তফাত? সকালে মনে হয়েছিল আমাকে যে ভাবে হোক, পারতে হবে। আর এখন মনে হচ্ছে, আমি নিশ্চয়ই পারব। না পারার কিছু নেই। বললাম না, ‘রিলিভড’। নিজের উপর বিশ্বাসটা এই চার উইকেট ফিরিয়ে দিয়েছে। |